ঢাকা ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুখরোচক কথায় দালালের খপ্পরে পড়ে ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠাবেন না

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 101

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুখরোচক কথায় দালালের খপ্পরে পড়ে ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠাবেন না। এসব দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাবো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আছে, সকলকে-কেউ যেন দালালদের ধোকায় না পড়ে। আর এই ধোকায় পড়ে কেউ কেউ তাদের ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি বিক্রিও করে দেয় অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে। এরকমও অনেক ঘটনা আমরা পেয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি কিছু কিছু দালালের খপ্পড়ে পড়ে যায় আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ। তাদেরকে এরা বিদেশে পাঠিয়ে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায় এবং অনেকে সর্বস্ব বিক্রী করে বিদেশে পাড়ি জমায়।’

বর্তমানে বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ আছে, কোথায় চাকরি করবে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে। যে দেশে যাবে সেখানে চাকরির অবস্থা, বেতনের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে এমনকি তাদেরকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হচ্ছে।’

দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে পূণরায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের সতর্ক করে দিয়ে যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হন সেসব দেশকে এর প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, সেসব এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ কে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যে যে জায়গায় যতগুলো ট্রেনিং হয় তার ওপরেও একটু নজরদারি করে উপযুক্ত ট্রেনিং যাতে তারা পায় এবং ভাষা শিক্ষার ওপরও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তাই ৯টি ভাষা দিয়ে একটি অ্যাপস তৈরী করে দেয়া হয়েছে যাতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা শিক্ষা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-কে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি এবং ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫৫টি ট্রেডে ৬ লাখ ৮২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪১টি কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আরও ৫০টি টিটিসি নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পর্যায়ক্রমে ৪৯৩টি উপজেলাতেই এটি করে দেয়া হবে। ‘ইংরেজীর সঙ্গে অন্য আরেকটি ভাষা, অর্থাৎ যে দেশে যাচ্ছে সে দেশের ভাষা যেন শিখতে পারে তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’ ।

প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’র (আইওএম) বাংলাদেশের মিশন প্রধান জর্জি জিগাউরি এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশগামী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বীমা পলিসি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করেন। একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ৪২ জন প্রবাসী সিআইপি’র মধ্য থেকে অনুষ্ঠানে দু’জনকে সিআইপিকে সম্মাননা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে অভিবাসী মেলার উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। অন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদসদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিদেশে গমননেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা জানার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

Tag :

শেয়ার করুন

মুখরোচক কথায় দালালের খপ্পরে পড়ে ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠাবেন না

আপডেট টাইম : ০৭:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুখরোচক কথায় দালালের খপ্পরে পড়ে ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠাবেন না। এসব দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাবো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আছে, সকলকে-কেউ যেন দালালদের ধোকায় না পড়ে। আর এই ধোকায় পড়ে কেউ কেউ তাদের ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি বিক্রিও করে দেয় অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে। এরকমও অনেক ঘটনা আমরা পেয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি কিছু কিছু দালালের খপ্পড়ে পড়ে যায় আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ। তাদেরকে এরা বিদেশে পাঠিয়ে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায় এবং অনেকে সর্বস্ব বিক্রী করে বিদেশে পাড়ি জমায়।’

বর্তমানে বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ আছে, কোথায় চাকরি করবে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে। যে দেশে যাবে সেখানে চাকরির অবস্থা, বেতনের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে এমনকি তাদেরকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হচ্ছে।’

দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে পূণরায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের সতর্ক করে দিয়ে যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হন সেসব দেশকে এর প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, সেসব এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ কে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যে যে জায়গায় যতগুলো ট্রেনিং হয় তার ওপরেও একটু নজরদারি করে উপযুক্ত ট্রেনিং যাতে তারা পায় এবং ভাষা শিক্ষার ওপরও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তাই ৯টি ভাষা দিয়ে একটি অ্যাপস তৈরী করে দেয়া হয়েছে যাতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা শিক্ষা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-কে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি এবং ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫৫টি ট্রেডে ৬ লাখ ৮২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪১টি কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আরও ৫০টি টিটিসি নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পর্যায়ক্রমে ৪৯৩টি উপজেলাতেই এটি করে দেয়া হবে। ‘ইংরেজীর সঙ্গে অন্য আরেকটি ভাষা, অর্থাৎ যে দেশে যাচ্ছে সে দেশের ভাষা যেন শিখতে পারে তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’ ।

প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’র (আইওএম) বাংলাদেশের মিশন প্রধান জর্জি জিগাউরি এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশগামী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বীমা পলিসি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করেন। একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ৪২ জন প্রবাসী সিআইপি’র মধ্য থেকে অনুষ্ঠানে দু’জনকে সিআইপিকে সম্মাননা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে অভিবাসী মেলার উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। অন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদসদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিদেশে গমননেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা জানার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।