‘মা-মেয়েকে মারধরের ঘটনার ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টের নজরে আনবো’
- আপডেট টাইম : ০৪:০৬:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ অগাস্ট ২০২০
- / 74
৭১: কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ে গরু চুরির অভিযোগে বৃদ্ধ মা ও যুবতী মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে মারধরের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনবেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রোববার (২৩ আগস্ট) ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি আহ্বান জানান।
শনিবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ে গরু চুরির অভিযোগে বৃদ্ধ মা ও যুবতী মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে এলাকায় ঘুরিয়েছে স্থানীয় লোকজন। পরে সেখান থেকে তাদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ রকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, আমি জানি না যে, কী হইছিলো ওই জায়গায় গরু চুরি কী ওনারা করেছিলন কি-না। কিন্তু একটা কথা বলতে চাই, বাংলদেশের যে আইন এই আইনে কোথাও নাই গরু চুরির অভিযোগ থাকলেও বা গরু চুরি করে থাকলেও আপনি এভাবে জনসম্মুখে দুই জন মহিলাকে আপনি এ রকম রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসতে পারেন।
‘আমি কক্সবাজার প্রশাসনের কাছে বলতে চাই, আপনারা তড়িৎ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন, নইলে আমরা দরকার হলে প্রয়োজনে হাইকোর্টে নিয়ে আসবো। কারণ এই যে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসছেন চেয়ারম্যান অফিসে, এ ছবিটা যখন আমাদের চোখের সামনে আসছে মনে হইছে যে সারা বাংলাদেশের আমাদের মা বোনদের এভাবে রশি দিয়ে টেনে নিয়ে আসছেন আপনারা।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমরা চাই না প্রতিটা জিনিসকে হাইকোর্টের নজরে নিয়ে আসতে। আমরা চেষ্টা করবো যদি আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, কক্সবাজারের যে প্রশাসন যদি আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে আমরা এটাকে হাইকোর্টের নজরে আনতে চাই না। যদি হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আপনারা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে শেষ পর্যন্ত আমরা এটাকে হাইকোর্টে নিয়ে আসতে বাধ্য হবো। আমি প্রশাসন এবং এখানে যিনি ডিআইজি আছেন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এ ঘটনায় গরুর মালিক চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মাহবুবুল হক চকরিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এ দুই নারী এবং অজ্ঞাত সিনএজি চালকসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচজনই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরানোর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পাশাপাশি এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে মারতে মারতে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় ভিডিওতে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারকেও দেখা গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গরু চোরদের আটক করে পেটানো এবং রঁশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে ঘোরানোর খবর পাওয়ার পর হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিরানুল হক গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে পরিষদে নিয়ে আসেন। এর পর তাদের হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে গরুর মালিকের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
ওই মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ছুট্টু (২৭), চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট এলাকার শহীদের কলোনীর পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে মো. এমরান (২১), মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলি (২৮) ও রোজি আক্তার (২৩)। প্রথমজন ছাড়া তিন নারী ও দুই পুরুষ একই পরিবারের সদস্য।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পারসিত চাকমা বলেন, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ি আর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পাশাপাশি। লোকজন ওই মা-মেয়েসহ সবাইকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসলে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
এ সময় তাদের হেফাজত থেকে একটি স্প্রে’র বোতল, বাট ছাড়া একটি ছোরা, একটি কালো স্কচটেপ, একটি মোবাইল ও গাড়ির চাবি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গরুর মালিক বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় মামলা করলে পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গরু চুরির ঘটনা যেমন অপরাধ, তেমন আইনের দৃষ্টিতেও গর্হিত অপরাধ নারীর প্রতি অমানবিকতা। তাই কারা নারীদের ওপর এমন গর্হিত কাজ করেছে, তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এ ঘটিনাকে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চেয়ারম্যানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।