ঢাকা ০৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ আমেরিকাকে চীনের আপোষ বার্তার কারণ

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • / 106

৭১: চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিপজ্জনক বৈরিতার পারদ যখন চড়চড় করে প্রতিদিন উঠছে তার মধ্যে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন – তা কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

তিনি বলেছেন, ১৯৭৯ সালে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে শুরুর পর দুই দেশের সম্পর্ক এতটা খারাপ এবং বিপজ্জনক আর কখনই হয়নি।

কিন্তু এই উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তিনি এই পরিণতির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে বর্তমান প্রশাসন চীন বিষয়ে যে কৌশল নিয়েছে তা একগাদা ভ্রান্ত ধারণা এবং মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ব্যাপারটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে যে কোনো চীনা বিনিয়োগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, বিদেশে যে কোনো চীনা ছাত্র একজন গুপ্তচর, এবং প্রতিটি সহযোগিতার পেছনে চীনের কোনো না কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।

ওয়াং ই বলেন, যেটা সত্যি তা হলো চীন কখনই বিশ্ব পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে তার জায়গা নিতে আগ্রহী নয়।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি একই রকম এবং তা বদলায়নি। চীন চায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যেন সহযোগিতার সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে।

তিনি বলেন, অমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ঠাণ্ডা মাথায় চীনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং যৌক্তিক নীতি নেবে। চীন সর্বদা কথা বলতে প্রস্তুত যদি ওয়াশিংটন সত্যিকার তা চায়।

বিবিসির বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার পশ্চিমা কিছু মিত্র দেশ যখন শি জিন পিংয়ের চীনকে চরম উদ্ধত এবং উচ্চাভিলাষী বলে তুলে ধরার অব্যাহত চেষ্টা করার সময়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরণের আপোষমুলক বক্তব্য কেন – তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে।

হংকং-ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দি সাউথ চায়না মর্নিং পোষ্টে দেওয়া এক মন্তব্যে সেখানকার চীনা অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের মার্কিন-চীন সম্পর্কের গবেষক লু শিয়াং বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত চীনা পররাষ্ট্র এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে চীন ওয়াশিংটনকে কিছুটা শান্ত করতে চাইছে। চীনের এই বার্তার লক্ষ্য আমেরিকান ভোটার ছাড়াও আমেরিকান নীতি নির্ধারকরাও। তাদেরকে চীন বলতে চাইছে শত্রুতার পারদ না বাড়িয়ে চীনের সাথে সহযোগিতা করলে তাতে আমেরিকার লাভ হবে, আমেরিকার অর্থনৈতিক পুনরুত্থান অনেক সহজ হবে।

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আমেরিকাকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হওয়ার খায়েশ চীনের নেই বলে যে বক্তব্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা মিথ্যা নয়। ১৯৭১ সাল থেকে চীনা নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সবসময় এই বার্তাই দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা তোমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নই, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই, এবং সেইসাথে সমান মর্যাদা চাই … ওয়াং ই বৃহস্পতিবার তারই পুনরাবৃত্তিই করেছেন।

কিন্তু নতুন করে এখন বিবৃতি দিয়ে সে কথা কেন বলতে গেলেন চীনা মন্ত্রী?

লু শিয়াং-এর মত ড. আলীও মনে করেন, নভেম্বরের নির্বাচনের আগে মার্কিন ভোটার এবং রাজনীতিকদের কথা মাথায় রেখে চীন এই সিদ্ধান্ত হয়তো নিয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা নিয়ে যেভাবে সন্দেহ বাড়ছে, চীনারা হয়তো ভাবছে এখন আমেরিকান ভোটারদের বলার সময় যে চীনের কাছ থেকে তাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবেনা।

কারণ, ড. আলী বলেন, কোভিড সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে মার্কিন জনগণের মধ্যে বড় ধরণের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এ জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে মানুষকে এটা বোঝানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে যে এতে সরকারের কোনো দায় নেই, সমস্ত সংকটের মূলে চীন। এবং সময়মত চীনকে তারা দেখে নেবেন…চীনকে গালমন্দ দোষারোপ করাটাকে ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনে জেতার একমাত্র ওষুধ হিসাবে বিবেচনা করছেন।

তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আপোষের বার্তায় চীনের কী লাভ?

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ অবশ্য বলছেন, ভোটারদের সামনে চীনকে শত্রু হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস যেমন রয়েছে, তেমনি চীনকে নিয়ে ট্রাম্পের ভীতিও রয়েছে। নির্বাচনে জিতিয়ে দিতে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে ট্রাম্প গোপনে দেন-দরবার করেছিলেন বলে তারই সাবেক সহযোগী জন বোল্টন তার বইতে যা লিখেছেন তা একবারে ফেলে দেওয়ার মত নয়। সাইবার হ্যাকিংয়ে চীন কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে আমেরিকানরা এখন খুব ভালোভাবে তা জানে। নির্বাচনের সময় চীন কী করে তা নিয়ে ট্রাম্পের লোকজনের মধ্যে তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ রয়েছে।

ফলে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, ওয়াং ইর বার্তায় পরিস্থিতির কোনই পরিবর্তন হবেনা, বরঞ্চ নির্বাচন যত এগুবে হোয়াইট হাউজের ঘনিষ্ঠ লোকজনের মুখ থেকে থেকে তত বেশি চীন বিরোধী যুদ্ধংদেহী কথাবার্তা শোনা যাবে।

উইগুর মুসলিম ইস্যুতে আমেরিকা শুক্রবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির যে চারজন সিনিয়র নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে তাদের একজন পার্টির শীর্ষ নীতি-নির্ধারণী কমিটির (পলিটব্যুরোর) অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন সদস্য।

এত সিনিয়র কোনো নেতার ওপর এর আগে কখনই আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি।

বেইজিংয়ে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শি ইনহং, যিনি চীনা মন্ত্রীসভার একজন পরামর্শক, টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, আমেরিকার উদ্দেশ্যে চীনা মন্ত্রীর বার্তা অনেকটাই রোমান্টিক এবং আদর্শিক।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বসে কথা বলার চেষ্টা দু বছর আগেও করা সম্ভব হয়নি যখন সম্পর্ক এখনকার তুলনায় অনেক ভালো ছিল। তখন যখন কিছু করা সম্ভব হয়নি, এখন কীভাবে হবে?

রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সিংহভাগ চীনা গবেষক এখন মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এখন এতটাই জটিল হয়ে পড়েছে যে নতুন একটি শীতল যুদ্ধ এড়ানোর সম্ভাবনা দিনকে দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

Tag :

শেয়ার করুন

হঠাৎ আমেরিকাকে চীনের আপোষ বার্তার কারণ

আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

৭১: চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিপজ্জনক বৈরিতার পারদ যখন চড়চড় করে প্রতিদিন উঠছে তার মধ্যে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন – তা কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

তিনি বলেছেন, ১৯৭৯ সালে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে শুরুর পর দুই দেশের সম্পর্ক এতটা খারাপ এবং বিপজ্জনক আর কখনই হয়নি।

কিন্তু এই উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তিনি এই পরিণতির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে বর্তমান প্রশাসন চীন বিষয়ে যে কৌশল নিয়েছে তা একগাদা ভ্রান্ত ধারণা এবং মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ব্যাপারটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে যে কোনো চীনা বিনিয়োগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, বিদেশে যে কোনো চীনা ছাত্র একজন গুপ্তচর, এবং প্রতিটি সহযোগিতার পেছনে চীনের কোনো না কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।

ওয়াং ই বলেন, যেটা সত্যি তা হলো চীন কখনই বিশ্ব পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে তার জায়গা নিতে আগ্রহী নয়।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি একই রকম এবং তা বদলায়নি। চীন চায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যেন সহযোগিতার সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে।

তিনি বলেন, অমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ঠাণ্ডা মাথায় চীনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং যৌক্তিক নীতি নেবে। চীন সর্বদা কথা বলতে প্রস্তুত যদি ওয়াশিংটন সত্যিকার তা চায়।

বিবিসির বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার পশ্চিমা কিছু মিত্র দেশ যখন শি জিন পিংয়ের চীনকে চরম উদ্ধত এবং উচ্চাভিলাষী বলে তুলে ধরার অব্যাহত চেষ্টা করার সময়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরণের আপোষমুলক বক্তব্য কেন – তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে।

হংকং-ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দি সাউথ চায়না মর্নিং পোষ্টে দেওয়া এক মন্তব্যে সেখানকার চীনা অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের মার্কিন-চীন সম্পর্কের গবেষক লু শিয়াং বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত চীনা পররাষ্ট্র এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে চীন ওয়াশিংটনকে কিছুটা শান্ত করতে চাইছে। চীনের এই বার্তার লক্ষ্য আমেরিকান ভোটার ছাড়াও আমেরিকান নীতি নির্ধারকরাও। তাদেরকে চীন বলতে চাইছে শত্রুতার পারদ না বাড়িয়ে চীনের সাথে সহযোগিতা করলে তাতে আমেরিকার লাভ হবে, আমেরিকার অর্থনৈতিক পুনরুত্থান অনেক সহজ হবে।

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আমেরিকাকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হওয়ার খায়েশ চীনের নেই বলে যে বক্তব্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা মিথ্যা নয়। ১৯৭১ সাল থেকে চীনা নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সবসময় এই বার্তাই দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা তোমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নই, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই, এবং সেইসাথে সমান মর্যাদা চাই … ওয়াং ই বৃহস্পতিবার তারই পুনরাবৃত্তিই করেছেন।

কিন্তু নতুন করে এখন বিবৃতি দিয়ে সে কথা কেন বলতে গেলেন চীনা মন্ত্রী?

লু শিয়াং-এর মত ড. আলীও মনে করেন, নভেম্বরের নির্বাচনের আগে মার্কিন ভোটার এবং রাজনীতিকদের কথা মাথায় রেখে চীন এই সিদ্ধান্ত হয়তো নিয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা নিয়ে যেভাবে সন্দেহ বাড়ছে, চীনারা হয়তো ভাবছে এখন আমেরিকান ভোটারদের বলার সময় যে চীনের কাছ থেকে তাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবেনা।

কারণ, ড. আলী বলেন, কোভিড সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে মার্কিন জনগণের মধ্যে বড় ধরণের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এ জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে মানুষকে এটা বোঝানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে যে এতে সরকারের কোনো দায় নেই, সমস্ত সংকটের মূলে চীন। এবং সময়মত চীনকে তারা দেখে নেবেন…চীনকে গালমন্দ দোষারোপ করাটাকে ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনে জেতার একমাত্র ওষুধ হিসাবে বিবেচনা করছেন।

তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আপোষের বার্তায় চীনের কী লাভ?

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ অবশ্য বলছেন, ভোটারদের সামনে চীনকে শত্রু হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস যেমন রয়েছে, তেমনি চীনকে নিয়ে ট্রাম্পের ভীতিও রয়েছে। নির্বাচনে জিতিয়ে দিতে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে ট্রাম্প গোপনে দেন-দরবার করেছিলেন বলে তারই সাবেক সহযোগী জন বোল্টন তার বইতে যা লিখেছেন তা একবারে ফেলে দেওয়ার মত নয়। সাইবার হ্যাকিংয়ে চীন কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে আমেরিকানরা এখন খুব ভালোভাবে তা জানে। নির্বাচনের সময় চীন কী করে তা নিয়ে ট্রাম্পের লোকজনের মধ্যে তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ রয়েছে।

ফলে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, ওয়াং ইর বার্তায় পরিস্থিতির কোনই পরিবর্তন হবেনা, বরঞ্চ নির্বাচন যত এগুবে হোয়াইট হাউজের ঘনিষ্ঠ লোকজনের মুখ থেকে থেকে তত বেশি চীন বিরোধী যুদ্ধংদেহী কথাবার্তা শোনা যাবে।

উইগুর মুসলিম ইস্যুতে আমেরিকা শুক্রবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির যে চারজন সিনিয়র নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে তাদের একজন পার্টির শীর্ষ নীতি-নির্ধারণী কমিটির (পলিটব্যুরোর) অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন সদস্য।

এত সিনিয়র কোনো নেতার ওপর এর আগে কখনই আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি।

বেইজিংয়ে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শি ইনহং, যিনি চীনা মন্ত্রীসভার একজন পরামর্শক, টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, আমেরিকার উদ্দেশ্যে চীনা মন্ত্রীর বার্তা অনেকটাই রোমান্টিক এবং আদর্শিক।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বসে কথা বলার চেষ্টা দু বছর আগেও করা সম্ভব হয়নি যখন সম্পর্ক এখনকার তুলনায় অনেক ভালো ছিল। তখন যখন কিছু করা সম্ভব হয়নি, এখন কীভাবে হবে?

রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সিংহভাগ চীনা গবেষক এখন মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এখন এতটাই জটিল হয়ে পড়েছে যে নতুন একটি শীতল যুদ্ধ এড়ানোর সম্ভাবনা দিনকে দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।