ঐতিহাসিক তারা মসজিদ
- আপডেট টাইম : ০৫:৩৭:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
- / 53
পুরান ঢাকার মহল্লা আলে আবু সাইয়েদ (বর্তমান নাম আরমানিটোলা) এলাকার ১১ আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থান এই মসজিদটির। তবে নির্মাণকাল ও এর নির্মাতা সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
ধারণা করা হয়, তৎকালীন ঢাকার সম্ভ্রান্ত জমিদার মির্জা গোলাম পীর আঠারো শতকের প্রথমাংশে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক তারা মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের এক অন্যতম স্থাপনা। নির্মাণকালে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩৩ ফুট এবং প্রস্থ ছিল ১২ ফুট।
এই মসজিদটি সতের শতকে দিল্লি, লাহোর ও আগ্রায় নির্মিত মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মাণ করা হয়েছিল। কেউ কেউ সিতারা মসজিদ নামেও বলে থাকেন আবার কেউ কেউ বলে গোলাম পীরের মসজিদ। তারা মসজিদ, সিতারা মসজিদ ও গোলাম পীরের মসজিদ- তিনটি নামই বেশ পরিচিত। বেশ কয়েকবার সংস্করণ করা হয়েছে এই মসজিদটিকে।
প্রথম থেকেই এর আকৃতি ছিল আয়তাকার। মসজিদের উপরিভাগে বৃত্তাকার তিনটি গম্বুজ রয়েছে। বিশেষ করে গম্বুজে খোদাই করা হয়েছে অসংখ্য নীল রঙের তারার মোটিফ। মূলত এই আকর্ষণীয় নকশার কারণেই এটি তারা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে মোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এটি বহু খাজ বিশিষ্ট ও চারটি অষ্টভুজ আকৃতির খুঁটি থেকে উদ্ধৃত। মসজিদের মুখ্য প্রবেশ পথের সম্মুখে রয়েছে বিশাল আকৃতির প্রস্রবণ বিশিষ্ট একটি তারা।
মসজিদের ভেতরে ও বাইরে জাপানের চিনি টিকরির কৌশলে এবং চীনা মাটির কাঁচ ও টুকরা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মোজাইক। ১৯২৬ সালে ঢাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী জান বেপারী মসজিদের পূর্বদিকে সংস্কার করে বারান্দা তৈরি করেন। শেষবারের মতো মসজিদটিকে আবার সংস্কার করা হয়েছিলো ১৯৮৭ সালে। সেই সাথে মসজিদের আদি মেহরাবটি ভেঙে নতুন করে তিনটি মেহরাব তৈরি করা হয়। এ সময় মসজিদের উপরে আরো দুইটি গম্বুজ যুক্ত করা হয়। বর্তমানে মসজিদের মোট গম্বুজ সংখ্যা পাঁচটি এবং মসজিদের দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট ও প্রস্থ ২৬ ফুট। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের দেয়ালে রয়েছে ফুলদানি, চাঁদ, তারা ও আরবি লিপির আকর্ষণীয় নকশা।
১৯৮৫ সালের ৮ই মার্চ পুরনো এই মসজিদের সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যকরণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লে. জে. হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮৭ সালের ৪ ডিসেম্বর মসজিদটিকে রাষ্ট্রীয়-করণ নির্দেশনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বর্তমানে এই মসজিদটিকে পরিচালনা করছেন আরমানিটোলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বারা গঠিত কমিটি। মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রিত কাগজের বর্তমান একশো টাকার গায়েও তারা মসজিদকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার মসজিদের বাৎসরিক যাবতীয় খরচ বাবদ তিন লক্ষ টাকা প্রদান করে থাকে।
নিউজ লাইট ৭১