সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
- আপডেট টাইম : ০৬:৫০:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১
- / 98
গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল শেখ (৩৫)। কৃষি কাজের সাথে করেন অন্য কাজও। সংসারে রয়েছেন মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও ছোট ভাই। এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও বিনা মূল্যে সার ও বীজ পাওয়ায় নিজের ১০ কাঠা জমিতে করেছেন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। আর ফলনও হয়েছে ভালো। সূর্যমুখী ফুলের বীজ ভাঙ্গিয়ে যে তেল পাবেন তা দিয়ে সারা বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে তার।
এ ফুল চাষে সফলতা আসার পাশাপাশি স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অন্য কৃষক ও বেকার যুবকদের মধ্যে বেড়েছে আগ্রহ। আগামীতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে চান তারা।
শুধু তেল উৎপাদনই নয়, ক্ষেতগুলো যেন সবুজের মাঝে এক টুকরো হলুদের গালিচা। দূরে কিংবা কাছে যেখান থেকেই চোখ পড়বে মনের সাথে জুড়িয়ে যাবো দু’নয়ন। এ সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটছেন ক্ষেতগুলোতে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ৫৮ হেক্টর। আর এসব জমিতে ফুলও এসেছে ব্যাপকভাবে। সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ বাড়াতে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ১ হাজার ৫শ’ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ গ্রামের অধিকাংশ কৃষক এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ, সার ও পরামর্শ প্রদান করায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ ফুল চাষে। এখন প্রতিটি ক্ষেত হলুদ ফুলে ছেয়ে রয়েছে। আর এক মাস পর এসব ফুল থেকে তৈল বীজ সংগ্রহ করবে কৃষকেরা। প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর ফল থেকে ৮ থেকে ১০ মন তৈলবীজ উৎপাদন হয়। পরে সেই বীজ থেকে উৎপাদন করা হবে ভোজ্য তেল।
অন্যান্য তেল থেকে এ তেলে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। প্রতি কেজি তেল দু’শ থেকে আড়াই’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ আয় থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি অনেক কৃষক তাদের সারা বছরের খাবার তেল সংগ্রহ করে রাখছেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা ও বাজার মূল্য থাকায় অনেক কৃষকের সাথে সাথে বেকার যুবকদের মধ্যে সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
শুধু লাভ বা খাবার তেলের যোগানই নয় সূর্যমুখী ফুলের হলুদ আভরণ আকৃষ্ট করে তুলছে সৌন্দর্য প্রেমীদের। প্রতিদিনই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্ষেতগুলোতে ভিড় করছেন সৌন্দর্য প্রেমীরা। আবার অনেকেই এ ফুলের সৌন্দর্য ধারণ করে রাখছেন মোবাইল বা ক্যামেরায়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল শেখ আলো বলেন, বিনামূল্যে সার ও বীজ পাওয়ার পর ১০ কাঠায় মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৮-১০ মন করে তৈলবীজ পাবেন তিনি। সেখান থেকে সারা বছরের ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটবে তার। এতে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটবে অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন তিনি।
একই গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিকদার বলেন, তিনি পড়াশোনা করেন। তাদের পৈত্রিক জমি পড়ে থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি অল্প কিছু জমিতে এবার সূর্যমুখী চাষে করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে এ তেলের কেজি প্রতি দু’শ থেকে আড়াই’শ টাকা দাম থাকায় এ তেল বিক্রি করে তার ভালো লাভ হবে। আগামী বছরও ব্যাপকভাবে এ ফুলের চাষ করার কথা বলেন তিনি।
একই এলাকার শিক্ষার্থী মো. সাব্বির হোসেন বলেন, সূর্যমুখী ফুলের ব্যাপক ফলন দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আগামী বছর আমি এ ফুলের চাষ করবো। শুধু আমিই নই এলাকার অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরা এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
একই এলাকার সিরাজ শরীফ, শরীফুল শেখ বলেন, তাদের গ্রাম এখন হলুদ সূর্যমুখী ফুলে ছেয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই এ সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে সৌন্দর্য প্রেমীরা ছুটে আসছেন। অনেক সময় ক্ষেতে অবস্থান করে সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। অনেকই আবার সৌন্দর্যের মুহূর্তগুলো মোবাইলে সেলফি তুলে বা ক্যামেরায় ধারণ করে রাখছেন।
জেলা শহরের ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা কবিতা সাহা, শিশু সকাল সাহা বলেন, এ এলাকায় ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে জেনে আমরা এখানে এসেছি। যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই শুধু হলুদ আর হলুদ। এ যেন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য। এ ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেছি।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, লাভজনক সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষক ও বেকার যুবকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেয়ার পাশাপাশি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এ ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা সহযোগিতাও করা হচ্ছে। সূর্যমুখীর তেলে অন্যান্য তেলের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। সারা জেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ছড়িয়ে দিতে পরলে অন্য ভোজ্য তেলের উপর চাপ কমবে বলেও মনে করেন তিনি।
নিউজ লাইট ৭১