নেপালকে হারিয়ে জয় নিয়েই ফুটবলে ফিরলো বাংলাদেশ
- আপডেট টাইম : ০৫:৩২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২০
- / 89
প্রায় দশ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। আর এই ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে জয় নিয়েই ফুটবলে ফিরলো বাংলাদেশ। নেপালকে ২-০ গোলে হারালো বাংলাদেশ।
নেপালের বিপক্ষে অতীত লড়াইয়ে ২৩ ম্যাচের মধ্যে ১৩ ম্যাচে জয় বাংলাদেশের। অপরদিকে নেপাল জিতেছে ৭ বার। বাকি ৩ ম্যাচ দেখেছে ড্র এর মুখ। যদিও সর্বশেষ তিন ম্যাচের পরিসংখ্যানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে হার দেখেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে খেলার শুরুতেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। নেপালের রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে খেলার ১০ মিনিটের মাথায় ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের পক্ষে বল জালে জড়িয়েছেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। ঘরের মাঠে শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলছিল বাংলাদেশে। ম্যাচের প্রথম মিনিটে আক্রমণে ওঠার চেষ্ঠা করে স্বাগতিকরা।
তবে থ্রোয়ের বিনিময়ে বাঁচে নেপাল। ৫ মিনিটে আবার আক্রমণে বাংলাদেশ। তবে সুমন রেজা বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হোন। নেপালও চেষ্টা করেছে আক্রমণে যাওয়ার।
তবে ছন্দহীন আক্রমণ ব্যর্থ হয় বাংলাদেশি ডিফেন্ডারের কাছে। ম্যাচের ৯ম মিনিটে বিশ্বনাথ থ্রো থেকে ডি বক্সে বল নিলে বাংলাদেশের আক্রমণ জোরালো হয়ে ওঠে। পরবর্তী এক মিনিট টানা চাপে রেখে গোল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের ১০ম মিনিটে সাদ উদ্দিনের পাস থেকে বল জালে জড়ান জীবন।
এরপর মিডফিল্ড থেকে সোহেল রানার নিখুঁত থ্রু পাস ধরে মাহবুবুর রহমান সুফিল এগিয়ে যাচ্ছিলেন। গোল তখনও অনেকদূরের পথ। সুফিল বাম প্রান্ত দিয়ে দৌঁড়ে ঢুকে পড়লেন বক্সে, এরপর শরীর বাঁকিয়ে নিজেই নিলেন আড়াআড়ি শট।
দূরের পোস্টে বল জালে জড়াতেই জার্সিখোলা উদযাপনে মাতলেন সুফিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের উত্তাল গ্যালারি ততক্ষণে ভুলিয়ে দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারির কথা। ৮০ মিনিটের ওই গোলেই জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
এর আগে নাবিব নেওয়াজ জীবনের প্রথমার্ধের গোল ছন্দ তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশের খেলায়। লম্বা বিরতির পর ফুটবলে ফেরাটা বাংলাদেশের জন্য হলো তাই মনে রাখার মতোই। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে অনুমতি ছিল আট হাজার সমর্থকের।
সামাজিক দূরত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবশ্য গ্যালারি প্রায় কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে গেল ম্যাচ শুরুর আগেই। এরপর জীবনের গোল প্রাণ ফেরাল মাঠে, বদলি সুফিল পাইয়ে দিলেন স্বস্তির গোল। আট মাস পর মাঠে নামছেন ফুটবলাররা, তাদের খেলায় মরচে পড়ে গেছে, ভুল হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি- ম্যাচের আগে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে একটা সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছিলেন।
কোচের ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্য মিলল না। বাংলাদেশের প্রথমার্ধের খেলা দেখে আঁচ করার উপায় নেই এতোদিন খেলায় ছিলেন না কেউ। এমনিতে গোল বাংলাদেশের জন্য সোনার হরিণ। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের গোল পেতে অপেক্ষা করতে হলো মাত্র ১০ মিনিট। সেই গোলটাও হলো দেখার মতো। ডান দিক থেকে সাদ উদ্দিনের নিচু ক্রস গিয়ে পড়েছিল কাছের পোস্টে।
নাবিব নেওয়াজ জীবন বক্সের ভেতর নিয়েছিলেন লেট রান। সাদের ক্রসের শেষ মাথায় পৌঁছে নিচু ভলিতে বল জালে জড়িয়ে উদযানের উপলক্ষ্য এনে দেন জীবন। সঙ্গে নিজের গোলখরাও কাটিয়েছেন আবাহনী ফরোয়ার্ড।
গত বছর ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে সবশেষ গোলের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। সে ম্যাচেও জেমি ডে তাকে খেলিয়েছিলেন নাম্বার টেনের ভূমিকায়। এক বছরের বেশি সময় পর পুরোনো পজিশনে ফিরেই আরও একবার বাজিমাত করেছেন তিনি।
জীবন নাম্বার টেনের ভূমিকায় খেলতে পেরেছেন সুমন রেজার কারণে। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের দিনে উত্তরা বারিধারা স্ট্রাইকার খেলেছেন প্রথম ৪৫ মিনিট। কিন্তু নতুন ওইটুকু সময়েই নজর কেড়েছেন সুমন।
আক্রমণভাগে সুমন-জীবন-সাদের রোটেশনও ছিল দেখার মতো। বেশিরভাগ আক্রমণও হচ্ছিল ডান প্রান্ত ধরেই। এর সঙ্গে ছিল বিশ্বনাথের লম্বা থ্রোও। ২১ মিনিটে আরও একবার ডান প্রান্ত থেকে শুরু করা আক্রমণেই ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
জীবনের ক্রস দূরের পোস্ট থেকে হেডও করেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তবে নেপাল ডিফেন্ডার ছিলেন সতর্ক, বল ক্লিয়ার করে দলকে বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচান তিনি। বিশ্বনাথের একটি লম্বা থ্রো থেকেও হেড করেছিলেন তপু বর্মণ।
তিনি অবশ্য ফাঁকাতেই ছিলেন, তবে হেডও করেছেন ফাঁকায়, বল তখন গেছে পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে। এসব কিছুই ঘটে গেছে ম্যাচের ২৫ মিনিটের ভেতর।
জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে মিডফিল্ডে ডাবল পিভোটের ভূমিকায় ছিলেন মানিক হোসেন মোল্লা। গোল পেয়ে যেত পারতেন তিনিও। নেপাল তখনও ধুঁকছে নিজেদের অর্ধ থেকে বল করতে।
এর ভেতর আরেকবার মানিক কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন নেপালের বারপোস্ট। তার ২৫ গজ দূর থেকে করা শট নেপাল গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বুর গ্লাভস ছুঁয়ে বারে লেগে চলে যায় বাইরে দিয়ে। ম্যাচের ৩১ মিনিটে সাদ-জীবনের আরেকটি সমন্বয় আশা জাগিয়েছিল।
এবার সাদ ক্রস করেছিলেন কোমর উচ্চতায়, জীবনও করেছিলেন ভলি। কিন্তু সে দফায় আর বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।
নিউজ লাইট ৭১