বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে
- আপডেট টাইম : ০৩:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০
- / 83
৭১: বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়মিত শরীরচর্চা এর অন্যতম কারণ। আমরা একটু সাবধান হলেই অনেক অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার আগে শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রতি বছর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিস সাধারণত তিন প্রকারের হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস রোগের শিকার হই আমরা। ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন রক্তে কমে গেলে ডায়াবেটিস জাঁকিয়ে বসে শরীরে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস খুব কমবয়সে হতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর তা কিছুটা নির্ভর করে। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত চল্লিশের কোঠা পেরোনোর পর হয়ে থাকে।
একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিস বা মধুমেয় রোগে আক্রান্ত। আর এর মধ্যে ৯০ শতাংশই আক্রান্ত টাইপ ২-তে। রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরে কি ধরণের সমস্যা হয় তা সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই অবগত। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি হল, ওষুধ, শরীরচর্চা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মেনে করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে বটে, কিন্তু তা কোনও ভাবেই পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে ঠিক কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায়…
১) চিকিৎসকদের মতে, শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে শরীর থেকে সুগার বের করে দেয়ার জন্য। সে কারণেই ঘন ঘন প্রস্রাব পায়।
২) খুব অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা শরীরে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ। সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে জলের ঘাটতি হয়। আর ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩) ডায়েট বা ব্যায়াম না করেই হুট করে অনেক বেশি ওজন কমতে থাকা শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৪) জল পান করা শরীরের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু যদি আপনি দেখেন যে আপনার এই জলের তেষ্টা স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক বেশি বেড়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে যে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে।
৫) ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ হল খিদে বেড়ে যাওয়া। যেকোনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রুগীর ক্ষুধাভাব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে যায়। এই ধরণের লক্ষণ দেখলে অবশ্যই ডায়াবেটিস টেস্ট করা উচিৎ।
৬) মানুষের শরীরে জখম, কাটা ছেড়া বা ঘা যখন তখন হতে পারে, কিন্তু শরীরে থাকা প্লেটলেট রক্তকণিকা এবং এন্টি অক্সিডেন্ট খুব সহজেই সেগুলি নিজে থেকে শুকিয়ে ও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস হলে এই জখম বা ঘা সহজে শুকোতে চায়না।
৭) শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কম হতে শুরু করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ আবছা হয়ে আসে। ফলে চোখের পাওয়ার বেড়ে যেতে পারে। এই সময় ডায়াবেটিস পরীক্ষা অবশ্যই করানো প্রয়োজন।
৮) যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাদের মধ্যে অহরহ মেজাজ পরিবর্তন, বিরক্তি বা রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাদের মধ্যে সারাক্ষণ বিষন্নতা, হাত পা কাঁপা এবং ধীর গতিতে কাজ করার প্রবণতা দেখা দেয়।
৯) ডায়াবেটিস রোগে মুখের ভিতরের অংশ বারবার শুকিয়ে যায়। ডায়াবেটিসের ফলে শুকনো মুখ হলে তা আরও নানা সমস্যা তৈরি করে। দাঁত ও মাড়ির সমস্যা হয় শুকনো মুখে।
১০) এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। ফলে যেকোনও রোগের সংক্রমণ সহজেই হতে পারে শরীরে।
১১) গলা, কুঁচকি, বগল ইত্যাদি জায়গার চামড়ার রঙ গাঢ়় হয়ে যায়। ডায়াবেটিস হলে ত্বকে চুলকানি অনুভূত হয়।
১২) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর যৌন অক্ষমতা তৈরি হয়। তিন-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক পুরুষরা সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হন।
এই লক্ষণগুলি চিনতে পারলেই ডায়াবেটিসে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব। ডায়াবেটিস একটি যথেষ্ট জটিল রোগ যা বেশ গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এই ডায়াবেটিস আপনি একা সারিয়ে তুলতে পারবেন না। যদিও আপনার প্রতিদিনের জীবনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে ও সঠিক খাদ্য তালিকা বজায় রাখলে আপনি অনেকটাই উপকার পাবেন, তবুও ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্যে কিছু বিশেষ ওষুধ রয়েছে যা আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে। ডায়াবেটিসের ধরণ দেখে আপনার ডাক্তারই আপনাকে সেই ওষুধের নামগুলো বলে দেবেন। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ, যত হাসি খুশি, টেনশন মুক্ত থাকবেন ততই ডায়াবেটিস নামক ব্যামো আপনার থেকে দূরে থাকবে।