ঢাকা ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে হোঁচট খেয়েছে পর্যটনশিল্প

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৯:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 93

নিউজ লাইট ৭১: করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে হোঁচট খেয়েছে পর্যটনশিল্প। আর যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পেও। প্রায় প্রতিদিনই যাত্রা বাতিল করছেন অসংখ্য বিদেশি পর্যটক। ট্যুর অপারেটরস অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। দেশে পর্যটনের মৌসুম শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। আর যা চলে এপ্রিল পর্যন্ত। ভ্রমণের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এ সময়টিকে বেছে নেন বিদেশি পর্যটকরা।

২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার পর একবার হোঁচট খায় দেশের পর্যটনশিল্প। গত কয়েক বছরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছিল। কিন্তু বছরের শুরুতে চীনে নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে আবার সংকটের মুখে দেশীয় পর্যটনশিল্প। তবে ট্যুর অপারেটররা বলছেন, অনেক বিদেশি পর্যটকই এ অবস্থায় ভ্রমণে স্বস্তিবোধ করছেন না।

পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, বৈশ্বিক পর্যটনে করোনাভাইরাসের মারাত্মক আঘাতের প্রভাব পড়ছে এখানেও। বছরে ৫ থেকে ৬ লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। যার একটি বড় অংশই আসেন চীন থেকে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চীনা পর্যটক আসা বন্ধ আছেন। ফ্লাইটের বুকিং বাতিল করা ছাড়াও টিকিট কনফার্মের পরও যাত্রী বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ায় যাত্রা বাতিল হচ্ছে।

চায়না সাউদানের বিমাবন্দরের দায়িত্বরত বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা বলেন, রাতের গুয়াংজুগামী তার ফ্লাইটে ৯০ জনের কনফার্মেশন ছিল। তারা সবাই চীনের নাগরিক। কিন্তু চূড়ান্তভাবে ৭০ জন গেছেন। বাকি ২০ জন চীনের নাগরিক শেষ পর্যন্ত যাননি। তারা নো শো হিসেবে গণ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের ফ্লাইটে যাত্রী প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তারা ফ্লাইট পরিচালনা করবেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।

দেশের অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উহান ভাইরাস পুরো বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ার ট্যুরিজমে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে যে ক্ষতি হবে তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তারা বলছেন, চীনের প্রচুর ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে আসে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই চীনে বিভিন্ন কারণে যাওয়া-আসা করেন। বাংলাদেশের অনেকে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক কারণ ছাড়াও চীনে ভ্রমণ করেন। বিশেষ করে শীতকাল বা তার কাছাকাছি সময়।

এশিয়া হলিডেজের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা চীন ভ্রমণে যান, তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সেখানে যান। কয়েক বছর ধরে পর্যটক ও ছাত্র হিসেবেও অনেক বাংলাদেশি দেশটিতে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাস আতঙ্কে পর্যটকরা তো ভ্রমণ বাতিল করছেনই, ব্যবসায়ীরাও দেশটিতে যেতে চাইছেন না। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চীনের মধ্যে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট যাওয়া-আসা করে। দেশি-বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা এবং চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস ও চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে চীনে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। স্বাভাবিক সময়ে এসব ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ যাত্রী বাংলাদেশ থেকে চীনে যান। কিন্তু এখন সে সংখ্যা প্রতিদিনই কমছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চীনগামী ফ্লাইটে গড়ে ৭০ শতাংশ অকুপেন্সি থাকছে। তবে ভবিষ্যতে হয়তো যাত্রী কমতে পারে। কারণ পর্যটকরা সাধারণত অনেক দিন আগে থেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন। হোটেল বুকিং ও এয়ারলাইনসের টিকিটও আগে থেকে কাটেন। সে হিসেবে ভাইরাস আতঙ্কে এখন হয়তো পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা চীনে যেতে চাইবেন না, যার প্রভাব বোঝা যাবে কয়েক দিন পর।

তিনি বলেন, তাদের চীন-বাংলাদেশ ফ্লাইট স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে সরকার থেকে বন্ধের নির্দেশ দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কিত। কারণ, আমাদের আমদানি-রফতানি দুই ক্ষেত্রেই আমরা চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এ সংকট যদি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে একটি বড় ধাকা লাগবে। এই সংকটে চীনের পর বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

Tag :

শেয়ার করুন

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে হোঁচট খেয়েছে পর্যটনশিল্প

আপডেট টাইম : ০৭:৫৯:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০

নিউজ লাইট ৭১: করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে হোঁচট খেয়েছে পর্যটনশিল্প। আর যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পেও। প্রায় প্রতিদিনই যাত্রা বাতিল করছেন অসংখ্য বিদেশি পর্যটক। ট্যুর অপারেটরস অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। দেশে পর্যটনের মৌসুম শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। আর যা চলে এপ্রিল পর্যন্ত। ভ্রমণের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এ সময়টিকে বেছে নেন বিদেশি পর্যটকরা।

২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার পর একবার হোঁচট খায় দেশের পর্যটনশিল্প। গত কয়েক বছরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছিল। কিন্তু বছরের শুরুতে চীনে নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে আবার সংকটের মুখে দেশীয় পর্যটনশিল্প। তবে ট্যুর অপারেটররা বলছেন, অনেক বিদেশি পর্যটকই এ অবস্থায় ভ্রমণে স্বস্তিবোধ করছেন না।

পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, বৈশ্বিক পর্যটনে করোনাভাইরাসের মারাত্মক আঘাতের প্রভাব পড়ছে এখানেও। বছরে ৫ থেকে ৬ লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। যার একটি বড় অংশই আসেন চীন থেকে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চীনা পর্যটক আসা বন্ধ আছেন। ফ্লাইটের বুকিং বাতিল করা ছাড়াও টিকিট কনফার্মের পরও যাত্রী বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ায় যাত্রা বাতিল হচ্ছে।

চায়না সাউদানের বিমাবন্দরের দায়িত্বরত বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা বলেন, রাতের গুয়াংজুগামী তার ফ্লাইটে ৯০ জনের কনফার্মেশন ছিল। তারা সবাই চীনের নাগরিক। কিন্তু চূড়ান্তভাবে ৭০ জন গেছেন। বাকি ২০ জন চীনের নাগরিক শেষ পর্যন্ত যাননি। তারা নো শো হিসেবে গণ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের ফ্লাইটে যাত্রী প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তারা ফ্লাইট পরিচালনা করবেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।

দেশের অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উহান ভাইরাস পুরো বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ার ট্যুরিজমে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে যে ক্ষতি হবে তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তারা বলছেন, চীনের প্রচুর ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে আসে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই চীনে বিভিন্ন কারণে যাওয়া-আসা করেন। বাংলাদেশের অনেকে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক কারণ ছাড়াও চীনে ভ্রমণ করেন। বিশেষ করে শীতকাল বা তার কাছাকাছি সময়।

এশিয়া হলিডেজের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা চীন ভ্রমণে যান, তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সেখানে যান। কয়েক বছর ধরে পর্যটক ও ছাত্র হিসেবেও অনেক বাংলাদেশি দেশটিতে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাস আতঙ্কে পর্যটকরা তো ভ্রমণ বাতিল করছেনই, ব্যবসায়ীরাও দেশটিতে যেতে চাইছেন না। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চীনের মধ্যে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট যাওয়া-আসা করে। দেশি-বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা এবং চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস ও চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে চীনে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। স্বাভাবিক সময়ে এসব ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ যাত্রী বাংলাদেশ থেকে চীনে যান। কিন্তু এখন সে সংখ্যা প্রতিদিনই কমছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চীনগামী ফ্লাইটে গড়ে ৭০ শতাংশ অকুপেন্সি থাকছে। তবে ভবিষ্যতে হয়তো যাত্রী কমতে পারে। কারণ পর্যটকরা সাধারণত অনেক দিন আগে থেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন। হোটেল বুকিং ও এয়ারলাইনসের টিকিটও আগে থেকে কাটেন। সে হিসেবে ভাইরাস আতঙ্কে এখন হয়তো পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা চীনে যেতে চাইবেন না, যার প্রভাব বোঝা যাবে কয়েক দিন পর।

তিনি বলেন, তাদের চীন-বাংলাদেশ ফ্লাইট স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে সরকার থেকে বন্ধের নির্দেশ দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কিত। কারণ, আমাদের আমদানি-রফতানি দুই ক্ষেত্রেই আমরা চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এ সংকট যদি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে একটি বড় ধাকা লাগবে। এই সংকটে চীনের পর বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।