স্বেচ্ছাশ্রমের মহাযজ্ঞ চলছে ১৬০ একরের টঙ্গীর তুরাগতীরে
- আপডেট টাইম : ০৯:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০
- / 90
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: স্বেচ্ছাশ্রমের মহাযজ্ঞ চলছে ১৬০ একরের টঙ্গীর তুরাগতীরে। ইজতেমা প্রস্তুতি শেষ করতে সারা দেশ থেকে আসা নানা শ্রেণিপেশার মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক। পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে কেউ করছেন পরিচ্ছন্নতার কাজ, কেউ চট বিছিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। কেউ আবার হাতে হাতমিলিয়ে অন্যের কাজে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসছেন। এই দৃশ্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের। এবার মুসল্লিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রথমবারের মতো বাড়ানো হয়েছে ময়দানের পরিধি। এরই মধ্যে ইজতেমার প্রস্তুতির কাজ, প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ওয়াচ টাওয়ার সিসি ক্যামেরাসহ থাকছে সব ধরনের নিরাপত্তা উপকরণ।
মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে নতুন ১৪টি খিত্তা যুক্ত করার মাধ্যমে এবারই প্রথম বাড়ানো হয়েছে ইজতেমা ময়দানের পরিধি। শব্দযন্ত্র, আলোর ব্যবস্থাসহ বাকি রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজ। সেনাবাহিনীর সহায়তায় তুরাগ নদে তৈরি করা হচ্ছে ৬টি ভাসমান সেতু। এখনো চলছে ইজতেমার মূল মঞ্চ নির্মাণের কাজ।
সিসি ক্যামেরা ছাড়াও পুরো ময়দানকে ঘিরে ফেলা হবে নিরাপত্তার চাদরে। খিত্তায় খিত্তায় থাকবে সাদা পোশাকে পুলিশ। আগামী ১০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রতি বছর মতো এবার ও ৩ দিন করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হবে। প্রথম পর্বে ১০ ও ১২ জানুয়ারি ওলামা-মাশায়েক তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেবেন। আর ১২ জানুয়ারি রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাত হবে। প্রথম পর্বে আসা মুসল্লিরা ১৩ তারিখ সকালের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে মাওলানা সা’দ পন্থি অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ১৭ জানুয়ারি রোববার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন।
১৯ জানুয়ারি মধ্যাহ্নের আগে যেকোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই গ্রুপের দুই পর্ব ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা। প্রতি পর্ব ইজতেমা কার্যক্রম শেষে জিম্মাদাররা ময়দানের দায়িত্ব প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন।
গতকাল শনিবার ইজতেমা ময়দান সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইজতেমাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে সব ধরনের প্রস্তুতির কাজ। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানে কাজ করছেন। প্যান্ডেল তৈরির কাজ, রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। এরই মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে আসা শফিকুল ইসলাম প্রায় ২০০ জন ইজতেমার সাথী ভাই নিয়ে ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেই দিক খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করে যাচ্ছি। টঙ্গীর পাশে কামারপাড়া থেকে আসা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বিদেশি মেহমানদের কামরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে বিদেশি মেহমানরা ইজতেমা ময়দানে এসে চলাফেরায় কোনো ধরনের কষ্ট না পান সেই দিকে লক্ষ রেখে কাজ চলছে।
যোগাযোগ করা হলে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের (সাফাই) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কমিটির জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান জানান, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে টঙ্গীতে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা। এ উপলক্ষে চলছে প্রস্তুতি কাজ। প্রায় ৭০ ভাগের মতো ময়দানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১২ জানুয়ারি দুপুরের আগে যেকোনো একসময় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথমপর্বের ইজতেমা। তবে শুক্রবার থেকে ইজতেমা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে আম বয়ান শুরু হবে। ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ করেছেন মুসল্লিরা। পুরান ঢাকা থেকে আসা ১৬০ জনের একদল মুসল্লি ময়দানে কাজ করতে দেখা গেছে। ময়দানে কাজ করতে আসা মুসল্লি মোহাম্মদ আলী (৫৫) জানান, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের খেদমতের উদ্দেশেই মাঠে আশা হয়েছে।
মঞ্চ তৈরি : ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের পশ্চিম পাশে বিদেশি মেহমানদের জন্য তৈরি টিনশেট সংলগ্ন পশ্চিম কোণে লোহার পাইপ দিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে দ্রুতগতিতে।
বিদেশি মেহমানদের তাঁবু তৈরি : বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে তৈরি তাঁবুতে বিগত বছরের মতো এবারও পাকা টয়লেট তাদের সুবিধার্থে প্রায় তাঁবুগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো আরামদায়ক করে তোলা হবে বলে ইজতেমা প্রস্তুতি কাজে নিয়োজিত জোবায়ের অনুসারী মুরব্বিরা জানান।
ডাস্টবিন : ইজতেমা চলাকালে ময়দানে আগত মুসল্লিদের ফেলানো উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য ময়দানের চারপাশে রিংয়ের তৈরি পোর্টঅ্যাবল ডাস্টবিন স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে ময়লা আর্বজনা যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুুরব্বি ও শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই ১০ জানুয়ারি মধ্যে ময়দানের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগবে না। আমার সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নুর হাজী আবুল হাসনাত ও আবুল হাশেম রয়েছেন। আমরা চারজন শূরা সদস্য মাসোয়ারা করে ময়দানের প্রস্তুতি কাজ করছি। আশা করি, আগামী ১০ তারিখের আগেই প্রস্তুতিকাজ শেষ হবে। ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, তাবলিগ অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা তিন দিন করে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। গত দুই বছর জোবায়ের ও সা’দ গ্রুপের মধ্যে সমস্যা দেখা দেওয়ায় এবারও দুই পর্বে ইজতেমা হচ্ছে।