তালের শাঁস বিক্রির ধুম
- আপডেট টাইম : ০৬:৩০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২
- / 29
চলছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। এ মাসে বাজারে আম, কাঠঁল, লিচু, পেয়ারা, আনারস সহ নানা রকমের সুস্বাদু ফল রয়েছে। বর্তমানে মৌসুমি ফলে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এসব ফলের পাশাপাশি নতুন করে দেখা মিলছে তালের শাঁস। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় তালের শাঁস বিক্রি।
খেতে সুস্বাদু ও বিষাক্ত ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় তাল শাঁসের কদর দিনদিন বেড়েই চলছে। গ্রামের ভাষায় এটি ‘তালকুই’ নামেই বেশি পরিচিত। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও স্বস্তি এনে দিচ্ছে এ কচি তালের শাঁস। প্রচন্ড গরমের কারণে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তালের শাঁস খেতে বেশি পছন্দ করে।
সখীপুর পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে, গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে, পাড়া-মহল্লায় তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যায়। একটি তালের ভেতরে তিনটি কুশ থাকে। আর প্রতিটি কুশ বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়।
পৌর শহরের শালগ্রামপুর রোডে তালের শাঁস বিক্রেতা মো.মানিক (৪২) জানান, তিনি পৌরসভা ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি গাছের তাল কিনে নেন। এতে গাছের তালের পরিমাণ বুঝে ৩০০-৬০০টাকা দিয়ে কিনেন। তারপর বাঁশ দিয়ে গাছে উঠে দড়ি বেঁধে নিচে নামিয়ে ভ্যানে করে নিয়ে আসেন। প্রতিটি তালে তিনটি কুশ থাকে। আর প্রতি কুশ বিক্রি করেন ৫টাকায়। সারাদিনে তিনি প্রায় ৩/৪শ তাল বিক্রি করেন। প্রতিদিন খরচ বাদে তার প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা আয় হয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি গরীব মানুষ। এখানে সারদিনে সামান্য কয়টা তাল বিক্রি করে যে টাকা লাভ পাই তা দিয়েই আমার সংসার চলে। প্রতিদিন পৌরসভার বাজার ইজারাদারদের দিতে হয় ৩০০টাকা। ময়লা ফেলতে দিতে হয় ১৫০/২০০টাকা। পরিশ্রমের তুলনায় খরচ বাদে লাভ হয় সামান্য।
পৌরসভার ঢাকা রোডের পোস্ট অফিসের উত্তর পাশে বসে তালের শাঁস বিক্রেতা মো.রুবেল (৪৫) বলেন, এলাকায় ঘুরে ঘুরে তাল গাছ থেকে তাল কিনে এনে এখানে বসে বিক্রি করি। আমরা তিনজনে মিলে সারাদিনে প্রায় ৫/৬শ তাল বিক্রি করি। প্রচন্ড গরম থাকায় তালের শাঁসের চাহিদা মোটামোটি ভালই। খরচ বাদে প্রতিদিন আমাদের প্রায় ১২/১৫শ টাকা লাভ হয়। তিনিও পৌরসভার ইজারাদারদের অতিরিক্ত খাজনা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তালের শাঁস কিনতে আসা মকবুল হোসেন বলেন,আম,কাঁঠাল,লিচু,আনারসসহ নানা রকমের ফল বাজারে রয়েছে। কিন্তু সব ফলেই বিষাক্ত ফরমালিনে ভরা। তালের শাঁসে কোনো ফরমালিন নেই। খেতেও বেশ মজা।
স্থানীয় কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, প্রচন্ড গরমের মধ্যে তালের শাঁস খেলে শরীর ঠান্ডা হয় আর খাইতেও বেশ সুস্বাদু। সবচেয়ে বড় কথা তালের শাঁসে কোনো ফরমালিন মেশানো হয় না।
ডা.নাজমুল হাসান মাসুদ খান বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারি। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে। এছাড়া তালের শাঁসে রয়েছে ভিটামিন সি.এ.বি কমপ্লেক্সসহ নানা উপাদান। তালের শাঁসে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে,লিভার ভাল রাখে,চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং মুখের রুচি বাড়ায়।
নিউজ লাইট ৭১