ঢাকা ০৮:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারের কোটি কোটি টাকা হরিলুট

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩৭:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০২২
  • / 29

নওগাঁয় সদরসহ জেলার ১১টি উপজেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা অধিকাংশ ভুয়া এতিম শিশু দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ছাত্রদের মা-বাবা থাকলেও অনেক মাদরাসা ছাত্রদের এতিম বলে দেখিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্তাদের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এই টাকাগুলো হরিলুট করছেন। তবে নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে। নওগাঁয় এতিমখানাগুলোতে বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার টাকা।

নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলার ১১টি উপজেলায় ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। প্রতিটি অসহায় দুস্থ এতিম শিশুর জন্য দেওয়া হয় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা। এসব এতিমখানায় বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬হাজার টাকা। এসব এতিমখানার অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং। আর এসব এতিমখানায় সরকারি ভাতা ভোগী এতিম রয়েছে ৩ হাজার ৪শ ৪০জন। প্রতি মাসে তাদের ২ হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলার সব থেকে বেশি এতিম ও এতিমখানা রয়েছে মহাদেবপুর উপজেলায়। কাগজে-কলমে এতিমের সংখ্যা ও সরকারি বরাদ্দ এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। তবে বাস্তব চিত্র একে বারেই উল্টো। এ উপজেলায় কাগজে-কলমে ৩৪টি বে-সরকারি এতিমখানা রয়েছে। যাতে এতিম শিশুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১শ ৫৪ জন।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ভাতাভোগী প্রতিটি এতিম শিশুর মহাদেবপুর উপজেলার বাশবারিয়া বে-সরকারি শিশু সদন ও মাদ্রাসায় ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার সাইনবোর্ড টাঙানো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। ঘরটির মধ্যে কিছুই নেই। জানালা-দরজা ভাঙা।

সেল ফোনে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর সাথে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন তার প্রতিষ্ঠানটি নতুন তাই তেমন ছাত্র এখনো ভর্তি করাতে পারেননি। তবে ৩৭ জন ছাত্র আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০ জন ভাতাভোগী এতিম থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতি একজন ভাতাভোগী এতিম শিশুর বিপরীতে থাকতে হবে দুইজন। অর্থাৎ ২০ জন ভাতাভোগী থাকলে সেখানে থাকতে হবে ৪০ জন এতিম শিশু। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যদিও এই ৩৭ জন শিক্ষার্থীর সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি। ভাতার বিষয়ে বলেন, উপজেলা কর্মকর্তা ও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশ ক্রমে এসব বরাদ্দ পেয়েছেন।

এ উপজেলার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে সফাপুর আখতার হামিদ সিদ্দিকী বেসরকারি শিশু সদন মাদরাসায়। এ মাদরাসায় ৯০ জন এতিম পান সরকারি ভাতা। এ মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মাদরাসার কাগজে কলমে সর্বমোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০জন। তবে বাস্তর চিত্র ভিন্ন। উপস্থিত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। কাগজ কলমের সাথে উপস্থিতির এত পার্থক্য হওয়ার কারণ প্রতিষ্ঠান প্রধান আব্দুল ওহায়েদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদরাসায় আবাসিক অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে। আবার অনেক ছাত্র ছুটিতে আছে। তাই উপস্থিতি কম।

ভাতাভোগী এতিমদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার মাদরাসায় ৯০ জন ভাতাভোগী শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়ম অনুসারে ৯০ জনের বিপরীতে এতিম শিক্ষার্থী থাকার কথা ১৮০জন। কিন্তু তা তিনি দেখাতে পারেননি।

এছাড়াও এ উপজেলার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঈশ্বর লক্ষ্মীপুর মবেজ উদ্দীন বেসরকারি শিশু সদন এখানে ভাতাভোগী এতিমের সংখ্যা ৬৫ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাগজে কলমে ১০৭ জন। যদিও এ প্রতিষ্ঠানে এতিম থাকর কথা ১৩০ জন। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। এমন চিত্রের সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সময় এতিমখানার কয়েকজন শিশুছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, তাদের সবার মা-বাবা আছেন। অপর দিকে বদলগাছী উপজেলার খোজাগাড়ী এতিমখানা শিশু সনদ ও নূরানি মাদরাসায় ১৯ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৩৮ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, এতিমখানাতে ৩৮ জন এতিম থাকার কথা থাকলেও সেখানে ৬-৭ জন এতিম ছাত্র দেখতে পাওয়া গেছে। এতিমদের সঠিক তথ্য দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান আতোয়ার হোসেন বলেন, এতিমখানার তালিকা ও কাগজপত্র কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তার সামনেই এতিম হিসেবে দেখানো এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা ও মা জীবিত আছেন। অপর এক শিশু ছাত্রও তার বাবা থাকার কথা জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের এখানে অনেক এতিম আছে। সরকারি বরাদ্দ টাকায় এদের কিছু হয় না। তবে তাঁরা প্রচুর ব্যক্তিগত সাহায্য পান। তাঁদের প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এসব মাদরাসা ও এতিমখানার অধিকাংশ ছাত্ররা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। সংশ্লিষ্টদের কর্তাদের যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দের টাকা লুটপাট করছে মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষকবৃন্দরা। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে জন্যে সঠিক তালিকা তৈরি করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

মহদেবপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন আমার আগের কর্মকর্তা সব কিছু করে গেছেন আমি শুধু ভাতা প্রদান করেছি। এ বিষয়ে কোন অনিয়ম হলে তা আমি বলতে পারবো না। তবে এবার আমি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক প্রতিবেদন প্রেরণ করবো। ইতি মধ্যে কয়েকটি এতিমখানা পরিদর্শন করেছি। কিছু অনিয়মও পেয়েছি। তা আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্তাদের যোগসাজশে এতিমদের টাকা লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর মহাম্মদ বলেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মা-বাবা বা শুধু বাবা নেই তারা বরাদ্দ পাবে। আমাদের যাচাই-বাছাইয়ের পরও বিভিন্ন সময় এমপি মহোদয় সুপারিশ নিয়ে আসে তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। সেই তালিকাও আমাদের সংযুক্ত করতে হয়। যেসব এতিম খানার ছাত্রদের জন্য এমপি সুপারিশ করেন সেসব ছাত্রকে এতিম হিসাবে কাগজপত্র উপরে পাঠিয়ে দিয়ে থাকি। এর পরেও সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button
Tag :

শেয়ার করুন

সরকারের কোটি কোটি টাকা হরিলুট

আপডেট টাইম : ০৫:৩৭:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০২২

নওগাঁয় সদরসহ জেলার ১১টি উপজেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা অধিকাংশ ভুয়া এতিম শিশু দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ছাত্রদের মা-বাবা থাকলেও অনেক মাদরাসা ছাত্রদের এতিম বলে দেখিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্তাদের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এই টাকাগুলো হরিলুট করছেন। তবে নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে। নওগাঁয় এতিমখানাগুলোতে বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার টাকা।

নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলার ১১টি উপজেলায় ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। প্রতিটি অসহায় দুস্থ এতিম শিশুর জন্য দেওয়া হয় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা। এসব এতিমখানায় বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬হাজার টাকা। এসব এতিমখানার অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং। আর এসব এতিমখানায় সরকারি ভাতা ভোগী এতিম রয়েছে ৩ হাজার ৪শ ৪০জন। প্রতি মাসে তাদের ২ হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলার সব থেকে বেশি এতিম ও এতিমখানা রয়েছে মহাদেবপুর উপজেলায়। কাগজে-কলমে এতিমের সংখ্যা ও সরকারি বরাদ্দ এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। তবে বাস্তব চিত্র একে বারেই উল্টো। এ উপজেলায় কাগজে-কলমে ৩৪টি বে-সরকারি এতিমখানা রয়েছে। যাতে এতিম শিশুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১শ ৫৪ জন।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ভাতাভোগী প্রতিটি এতিম শিশুর মহাদেবপুর উপজেলার বাশবারিয়া বে-সরকারি শিশু সদন ও মাদ্রাসায় ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার সাইনবোর্ড টাঙানো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। ঘরটির মধ্যে কিছুই নেই। জানালা-দরজা ভাঙা।

সেল ফোনে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর সাথে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন তার প্রতিষ্ঠানটি নতুন তাই তেমন ছাত্র এখনো ভর্তি করাতে পারেননি। তবে ৩৭ জন ছাত্র আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০ জন ভাতাভোগী এতিম থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতি একজন ভাতাভোগী এতিম শিশুর বিপরীতে থাকতে হবে দুইজন। অর্থাৎ ২০ জন ভাতাভোগী থাকলে সেখানে থাকতে হবে ৪০ জন এতিম শিশু। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যদিও এই ৩৭ জন শিক্ষার্থীর সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি। ভাতার বিষয়ে বলেন, উপজেলা কর্মকর্তা ও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশ ক্রমে এসব বরাদ্দ পেয়েছেন।

এ উপজেলার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে সফাপুর আখতার হামিদ সিদ্দিকী বেসরকারি শিশু সদন মাদরাসায়। এ মাদরাসায় ৯০ জন এতিম পান সরকারি ভাতা। এ মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মাদরাসার কাগজে কলমে সর্বমোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০জন। তবে বাস্তর চিত্র ভিন্ন। উপস্থিত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। কাগজ কলমের সাথে উপস্থিতির এত পার্থক্য হওয়ার কারণ প্রতিষ্ঠান প্রধান আব্দুল ওহায়েদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদরাসায় আবাসিক অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে। আবার অনেক ছাত্র ছুটিতে আছে। তাই উপস্থিতি কম।

ভাতাভোগী এতিমদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার মাদরাসায় ৯০ জন ভাতাভোগী শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়ম অনুসারে ৯০ জনের বিপরীতে এতিম শিক্ষার্থী থাকার কথা ১৮০জন। কিন্তু তা তিনি দেখাতে পারেননি।

এছাড়াও এ উপজেলার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঈশ্বর লক্ষ্মীপুর মবেজ উদ্দীন বেসরকারি শিশু সদন এখানে ভাতাভোগী এতিমের সংখ্যা ৬৫ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাগজে কলমে ১০৭ জন। যদিও এ প্রতিষ্ঠানে এতিম থাকর কথা ১৩০ জন। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। এমন চিত্রের সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সময় এতিমখানার কয়েকজন শিশুছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, তাদের সবার মা-বাবা আছেন। অপর দিকে বদলগাছী উপজেলার খোজাগাড়ী এতিমখানা শিশু সনদ ও নূরানি মাদরাসায় ১৯ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৩৮ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, এতিমখানাতে ৩৮ জন এতিম থাকার কথা থাকলেও সেখানে ৬-৭ জন এতিম ছাত্র দেখতে পাওয়া গেছে। এতিমদের সঠিক তথ্য দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান আতোয়ার হোসেন বলেন, এতিমখানার তালিকা ও কাগজপত্র কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তার সামনেই এতিম হিসেবে দেখানো এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা ও মা জীবিত আছেন। অপর এক শিশু ছাত্রও তার বাবা থাকার কথা জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের এখানে অনেক এতিম আছে। সরকারি বরাদ্দ টাকায় এদের কিছু হয় না। তবে তাঁরা প্রচুর ব্যক্তিগত সাহায্য পান। তাঁদের প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এসব মাদরাসা ও এতিমখানার অধিকাংশ ছাত্ররা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। সংশ্লিষ্টদের কর্তাদের যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দের টাকা লুটপাট করছে মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষকবৃন্দরা। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে জন্যে সঠিক তালিকা তৈরি করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

মহদেবপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন আমার আগের কর্মকর্তা সব কিছু করে গেছেন আমি শুধু ভাতা প্রদান করেছি। এ বিষয়ে কোন অনিয়ম হলে তা আমি বলতে পারবো না। তবে এবার আমি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক প্রতিবেদন প্রেরণ করবো। ইতি মধ্যে কয়েকটি এতিমখানা পরিদর্শন করেছি। কিছু অনিয়মও পেয়েছি। তা আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্তাদের যোগসাজশে এতিমদের টাকা লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর মহাম্মদ বলেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মা-বাবা বা শুধু বাবা নেই তারা বরাদ্দ পাবে। আমাদের যাচাই-বাছাইয়ের পরও বিভিন্ন সময় এমপি মহোদয় সুপারিশ নিয়ে আসে তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। সেই তালিকাও আমাদের সংযুক্ত করতে হয়। যেসব এতিম খানার ছাত্রদের জন্য এমপি সুপারিশ করেন সেসব ছাত্রকে এতিম হিসাবে কাগজপত্র উপরে পাঠিয়ে দিয়ে থাকি। এর পরেও সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button