বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের করুণ অবস্থা
- আপডেট টাইম : ০৫:৪২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০২০
- / 77
৭১: ইউরোপের দেশ ইতালি বা ফ্রান্সে ঢোকার জন্য বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম থেকে সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে৷
সম্প্রতি ডয়চে ভেলেসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জঙ্গলে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের করুণ অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে৷ পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ডয়চে ভেলেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে ডয়চে ভেলের সংবাদ প্রকাশের পর আইওএমের বাংলাদেশ অফিস থেকে গত মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করা হয়েছে৷ তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার চাইলেই তো তাদের ফিরিয়ে আনতে পারে না৷ এছাড়া যারা আটকে রয়েছে তারা কি ফিরে আসতে চান? সেটাও তো আমরা নিশ্চিত নই৷ ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷’’
অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, তারা বাংলাদেশী নাগরিক৷ তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সরকার নিতে হবে৷ কিন্তু সেখানেও নানা জটিলতা আছে৷ সেই প্রক্রিয়াটি কি হবে? এই ফিরিয়ে আনার খরচ কে দেবে? এমন হতে পারে যারা অবৈধভাবে সেখানে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনবে সরকার, কিন্তু দেশে ফেরার পর খরচের টাকা তাদেরকেই দিতে হবে৷ আবার যারা অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছেন তাদের যদি এভাবে সরকার ফিরিয়ে আনতে শুরু করে তাহলে অবৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে এমনটিও কেউ মনে করতে পারে৷ ফলে সরকারকেই একটা পথ বের করতে হবে৷ কারণ যারা সেখানে আছে, তারা তো বাংলাদেশের নাগরিক, এটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না৷’’
জানা গেছে, অবৈধ পথে ইতালিতে ঢুকতে অনেকেই নতুন রুট বলকানের দেশ বসনিয়া, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়াকে বেছে নিয়েছে৷ মূলত ক্রোয়েশিয়া থেকে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে লোকজনকে ইতালি পাঠাচ্ছে চক্রটি৷ নতুন এই পথে ইতালি যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা গত তিন বছরে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে৷ গত নয় মাসে দুই হাজার ৫৫৩ জন বাংলাদেশি বসনিয়া পৌঁছেছেন৷ সেখানে তারা নাম নিবন্ধন করেছেন৷ এদের শেষ গন্তব্য ইতালি৷ আইওএম কর্মকর্তারা জানান, বৈধ-অবৈধ যাই হোক, বসনিয়ায় এসে অভিবাসীদের নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ গত তিন বছরে নিবন্ধনকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার৷
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফিরিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া আছে৷ বহু অবৈধ অভিবাসীকে সরাকার ফিরিয়ে আনছে৷ কত মানুষকে এভাবে আনবে? আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করা হোক৷ সরকার ফিরিয়ে আনতে চাইলেও তারা তো আসতে চান না৷ যখন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে তখন দেখা যাচ্ছে তারা সেখান থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন৷ ফলে যারা সেখানে গেছেন তারা জেনে-বুঝেই গেছেন৷ পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত তারা খরচ করেছেন৷ এখন দেশে ফিরে তারা কি করবেন? এই কারণে অবৈধ অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারেও সচেতনতা দরকার৷ আপনি দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও দেখবেন কামানের সামনে দিয়ে অনেকে অবৈধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন৷ ফলে পরিবার থেকেই সচেতনতা দরকার৷’’
বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর মহাপরিচালক শামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এখনও বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলেনি৷ আইওএম অনুরোধ করলে নিশ্চয় মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে৷ তখন আমরা এ বিষয়ে বলতে পারবো৷’’ যোগাযোগ করা হলে বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি৷