প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকায়
- আপডেট টাইম : ১০:০৯:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
- / 123
নিউজ লাইট ৭১: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের ১১ বছরের মেয়ে ইলমা বেগমকে হত্যায় সায় দেন তার বাবা আবদুল মোতালেব। এ ঘটনায় তার বাবা ও ফুপাতো ভাইসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির দাবি দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নরসিংদীর বহুল আলোচিত ইলমা হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান এসব তথ্য।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ নরসিংদী সদর থানার বাহেরচর গ্রামের একটি ধানখেত থেকে ইলমা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইলমা বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সম্মত ও সহায়তা করেন ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট ইলমা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়। নিহত ইলমার ফুপাতো ভাই মাসুমকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। এর আগে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে থানা-পুলিশ ব্যর্থ হয়েছিল।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার তত্ত্বাবধানে একটি টিম নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব, মা মঙ্গলী বেগম, ফুপাতো ভাই মাসুম মিয়া, ভগ্নিপতি মো. বাতেন ওরফে বাবুল এবং গ্রামের মাতব্বর মো. শাহজাহান ভূঁইয়া নামে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে মাসুম মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সিআইডির ডিআইজি বলেন, নরসিংদীর বাহেরচর নামক একটি দুর্গম এলাকায় মাতব্বর শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব চলছিল। শাহজাহান গ্রুপের সদস্য নিহত ইলমার ফুপাতো ভাই মাসুম। তার সঙ্গে বাচ্চুর পক্ষের লোক হিসেবে পরিচিত তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে মাসুম তার ভাইয়ের শ্বশুর বড়িতে নিয়ে যান তানিয়াকে। তানিয়ার বাবা দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা করে তানিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, মাসুমের ভাই খসরু ও ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ওই মামলার পর বিরোধ আরও জোরদার হয়। বাচ্চু গ্রুপের ক্ষতির উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে এক রাতে শাহজাহানের বাড়িতে মাসুমসহ ১৩ জন বৈঠক করেন। একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাহজাহান মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মোতালিবকে তার মেয়ে ইলমাকে হত্যার প্রস্তাব করেন। মোতালেব ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে হত্যায় রাজি হন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইলমা বাড়ির পাশের নুরার দোকান থেকে সদাই কিনে বাড়ি ফেরার পথে তার দুলাভাই বাতেন ও ফুপাতো ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত আটজন মিলে একটি ধানখেতে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তাকে (ইলমাকে) হত্যা করে। হত্যার সময় ইলমার বাবা মোতালেব পাশেই ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম সিআইডিকে জানান, ইলমার বাবা বলেছিলেন, ‘আগে টাকা দাও পরে কাম সারো’। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডের জন্য চুক্তিকৃত ৩০ লাখ টাকা ইলমার বাবাকে দেওয়া হয়নি।
সিআইডি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, এ ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে ইলমার বাবা মোতালিব বাদী হয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে নরসিংদী সদর মডেল থানা-পুলিশ ব্যর্থ হয়। সিআইডি এই হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে।