ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিয়মিত চা পান শরীরের বিভিন্ন দিকের উন্নতি করে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • / 16

ছবি: সংগৃহীত

চা, প্রাচীনতম পানীয়গুলোর মধ্যে একটি, যা বিশ্বের নানা দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকেই প্রতিদিন সকালে, দুপুরে এবং বিকেলে চা পান করতে ভালোবাসেন। চায়ের স্বাদই শুধু নয়, এর নানা স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত চা পান শরীরের বিভিন্ন দিকের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে, তবে তা অবশ্যই দুধ-চিনি ছাড়া চা হতে হবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক

পুষ্টিবিজ্ঞানী অ্যামি গুডসন “ইটদিসনটদ্যাটডটকম”-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেন, “কালো চা, গ্রিন টি এবং হিবিস্কাস চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এগুলো রক্তচাপ এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সাহায্য করে, ফলে সার্বিক হৃদরোগের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।”

ব্যালেন্স ওয়ান সাপ্লিমেন্টের পুষ্টিবিজ্ঞানী ট্রিস্ট বেস্ট একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “কালো চা’তে ‘থিয়াফ্লেইভিন্স’ এবং ‘থিয়ারুবিজিন্স’ নামে দুটি উপকারী যৌগ থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।”

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি

চা শুধু শরীরের জন্য নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। অ্যামি গুডসন জানান, “গ্রিন টি’তে ‘এল-থিয়ানাইন’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ক্যাফিনের সাথে মিলিত হয়ে সতেজতা এবং মনোযোগ বাড়ায়।”

তিনি আরও বলেন, “ক্যাফেইনযুক্ত চা, যেমন- কালো চা, আমাদের সজাগ রাখে এবং মনোযোগী করতে সহায়তা করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।”

হজমের উন্নতিতে সহায়ক

বাংলাদেশে খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেরই হজমজনিত সমস্যা রয়েছে, এবং চা হজমের জন্যও উপকারী হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিশেষজ্ঞ লিসা ইয়াং বলেন, “ক্যামোমাইল, পেপারমিন্ট, আদা এবং অন্যান্য ভেষজ চা গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।”

ট্রিস্ট বেস্ট মন্তব্য করেন, “কালো চা’তে ট্যানিনস নামে একটি উপাদান থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।”

ক্যাফিনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সাবধান

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চায়ে সাধারণত কফির তুলনায় কম ক্যাফিন থাকে, তবে অতিরিক্ত চা পান করলে ক্যাফিনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা অস্বস্তি, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তারা পরামর্শ দেন, চা দুপুর বা বিকেলের দিকে পান করা উচিত, যাতে রাতে ঘুমের সমস্যা না হয়।

মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক

কিছু বিশেষ চা, যেমন- ক্যামোমাইল চা, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। অ্যামি গুডসন বলেন, “ক্যামোমাইল চা একটি শিথিলকারী প্রভাব তৈরি করে, কারণ এতে ‘এপিজেনিন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে উদ্বেগ কমায় এবং শিথিলতা সৃষ্টি করে।”

ট্রিস্ট বেস্ট জানান, “ক্যামোমাইল চা পান করলে ঘুমের মান উন্নত হতে পারে, কারণ এটি শরীরে শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।”

বিপাক বা মেটাবলিজমের উন্নতি

তেহরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি বিপাক প্রক্রিয়াকে সমন্বয় করতে পারে, যা রক্তের শর্করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

প্রদাহ কমাতে সহায়ক

বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রিন ও ব্ল্যাক টি’তে প্রদাহ কমানোর শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রক্ত কোষে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, চীনের সান ইয়াট-সেন ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, লুপাস রোগীদের ওপর গ্রিন টি খাওয়ার পর শরীরে কম প্রদাহ অনুভূত হয়েছে।

মূত্রের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা

ড্যানডিলিওন, গ্রিন, বার্লি এবং হিবিস্কাস চা-তে মূত্র বর্ধক উপাদান রয়েছে, যা দেহ থেকে লবণ ও পানি বের করে দেয়। অ্যামান্ডা সেভিলা বলেন, “এই ধরনের চা বিকাল চারটার পর না পান করাই ভালো, যাতে রাতে বারবার বাথরুমে যেতে না হয়।”

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

গ্রিন টি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সান ইয়াট-সেন ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি পান করার ফলে নারীদের পেটের আশপাশের চর্বি কমে গেছে, কারণ এটি শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং বিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

নিয়মিত চা পান শরীরের বিভিন্ন দিকের উন্নতি করে

আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

চা, প্রাচীনতম পানীয়গুলোর মধ্যে একটি, যা বিশ্বের নানা দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকেই প্রতিদিন সকালে, দুপুরে এবং বিকেলে চা পান করতে ভালোবাসেন। চায়ের স্বাদই শুধু নয়, এর নানা স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত চা পান শরীরের বিভিন্ন দিকের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে, তবে তা অবশ্যই দুধ-চিনি ছাড়া চা হতে হবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক

পুষ্টিবিজ্ঞানী অ্যামি গুডসন “ইটদিসনটদ্যাটডটকম”-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেন, “কালো চা, গ্রিন টি এবং হিবিস্কাস চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এগুলো রক্তচাপ এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সাহায্য করে, ফলে সার্বিক হৃদরোগের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।”

ব্যালেন্স ওয়ান সাপ্লিমেন্টের পুষ্টিবিজ্ঞানী ট্রিস্ট বেস্ট একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “কালো চা’তে ‘থিয়াফ্লেইভিন্স’ এবং ‘থিয়ারুবিজিন্স’ নামে দুটি উপকারী যৌগ থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।”

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি

চা শুধু শরীরের জন্য নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। অ্যামি গুডসন জানান, “গ্রিন টি’তে ‘এল-থিয়ানাইন’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ক্যাফিনের সাথে মিলিত হয়ে সতেজতা এবং মনোযোগ বাড়ায়।”

তিনি আরও বলেন, “ক্যাফেইনযুক্ত চা, যেমন- কালো চা, আমাদের সজাগ রাখে এবং মনোযোগী করতে সহায়তা করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।”

হজমের উন্নতিতে সহায়ক

বাংলাদেশে খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেরই হজমজনিত সমস্যা রয়েছে, এবং চা হজমের জন্যও উপকারী হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিশেষজ্ঞ লিসা ইয়াং বলেন, “ক্যামোমাইল, পেপারমিন্ট, আদা এবং অন্যান্য ভেষজ চা গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।”

ট্রিস্ট বেস্ট মন্তব্য করেন, “কালো চা’তে ট্যানিনস নামে একটি উপাদান থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।”

ক্যাফিনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সাবধান

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চায়ে সাধারণত কফির তুলনায় কম ক্যাফিন থাকে, তবে অতিরিক্ত চা পান করলে ক্যাফিনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা অস্বস্তি, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তারা পরামর্শ দেন, চা দুপুর বা বিকেলের দিকে পান করা উচিত, যাতে রাতে ঘুমের সমস্যা না হয়।

মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক

কিছু বিশেষ চা, যেমন- ক্যামোমাইল চা, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। অ্যামি গুডসন বলেন, “ক্যামোমাইল চা একটি শিথিলকারী প্রভাব তৈরি করে, কারণ এতে ‘এপিজেনিন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে উদ্বেগ কমায় এবং শিথিলতা সৃষ্টি করে।”

ট্রিস্ট বেস্ট জানান, “ক্যামোমাইল চা পান করলে ঘুমের মান উন্নত হতে পারে, কারণ এটি শরীরে শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।”

বিপাক বা মেটাবলিজমের উন্নতি

তেহরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি বিপাক প্রক্রিয়াকে সমন্বয় করতে পারে, যা রক্তের শর্করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

প্রদাহ কমাতে সহায়ক

বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রিন ও ব্ল্যাক টি’তে প্রদাহ কমানোর শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রক্ত কোষে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, চীনের সান ইয়াট-সেন ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, লুপাস রোগীদের ওপর গ্রিন টি খাওয়ার পর শরীরে কম প্রদাহ অনুভূত হয়েছে।

মূত্রের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা

ড্যানডিলিওন, গ্রিন, বার্লি এবং হিবিস্কাস চা-তে মূত্র বর্ধক উপাদান রয়েছে, যা দেহ থেকে লবণ ও পানি বের করে দেয়। অ্যামান্ডা সেভিলা বলেন, “এই ধরনের চা বিকাল চারটার পর না পান করাই ভালো, যাতে রাতে বারবার বাথরুমে যেতে না হয়।”

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

গ্রিন টি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সান ইয়াট-সেন ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি পান করার ফলে নারীদের পেটের আশপাশের চর্বি কমে গেছে, কারণ এটি শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং বিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

নিউজ লাইট ৭১