ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা তাহলে ৭১ সালে কি করলাম?

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:১২:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 6

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বক্তব্য দিচ্ছেন। ছবি: নিউজ লাইট ৭১

সংবিধানকে কবর দেয়ার কথা বললে আমাদের কষ্ট লাগে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

সংবিধান পুনর্লিখন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধানটা লেখা হয়েছিলো একাত্তরের ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এই সংবিধানে স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। এই সংবিধানকে যারা মিস ইউজড করেছে, যারা অপব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। আরে ভাই, মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হয়? মাথা ব্যথা হলে কেটে ফেলতে হয় না, ঔষধ খেতে হয়৷

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বৈষম্যমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এই কিছুক্ষণ আগে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যারা নাকি আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে ৫ আগস্ট। এককভাবে তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিতে চায় কিন্তু আপনারা দেখেছেন, আমরাও জানি, আমরাও দেখেছি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিভু নিভু তখন কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনে এগিয়ে আসে, সাধারণ মানুষ সামনে এগিয়ে আসে, আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীই ৪৬২ জন মারা গেছে এর মধ্যে।

‘নিশ্চয় নেতৃত্বে একজন থাকবে, পিছনে হাজারো লোক থাকবে কিন্তু এককভাবে কেউ কারো দাবি করা ঠিক না। এতে কিন্তু জনমনে বিভেদ সৃষ্টি হবে। এই যে, আমাকে কথাটা বলতে হচ্ছে, আমাকে এই কথাটা বলতে বাধ্য। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, সেটাও সম্মুখভাবে অংশগ্রহণ করেছি। আমার সঙ্গের অনেক সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব মারা গেছে প্রায় ৩০ লক্ষ, শহীদ হয়েছে। শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সে সংবিধানকে যখন কবর দেয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ রেখে মির্জা আব্বা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাইদের কাছে অনুরোধ করবো, বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। ভুল বুঝবেন না। কবর দিয়ে দিবো, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো এই ধরনের কথাগুলো কিন্তু ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে। এগুলো কিন্তু ভাল কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমি আশা করি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কিছু লোক বাহির থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছেন মনে হয় এরকম। তারা আবার বলেনও, এদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। তাদের কথাবার্তার যে ঝাঝ, আজকে আমাদের ছাত্র ভাইদের কথাবার্তার যে ঝাঝ একই রকম। আমরা তাহলে ৭১ সালে কি করলাম? আমার প্রশ্ন এই জায়গায়, ৭১ সালে জাতি কী করলো? আমরা কী অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি, একটা পক্ষ বলবে, হ্যা, ঐদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন। বলতে পারেন, স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আমরা কী অন্যায় করেছিলাম যুদ্ধ করে? এই দেশকে স্বাধীন করে?

মির্জা আব্বাস বলেন, এই ২৬/২৫/২৪ বছর বয়স, আমার ত একবারে ৭৫ বছর বয়স হয় নাই। একদিন থেকে শুরু হয়েছে। এক থেকে শুরু হয়ে আজ আমাদের ৭৫ বছর বয়স হয়েছে, তোমাদেরও একদিন হবে। বুঝতে পারবে, সেদিন যদি কেউ বলে আমরা তোমাদের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিলাম, তাহলে কেমন লাগবে? সেদিন বা দুই দিন পরে কেউ বলে যে তোমাদের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিলাম, তোমাদের মতই কেউ যদি আবার চলে আসে তখন কি হবে?

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুন সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সাবেক দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

আমরা তাহলে ৭১ সালে কি করলাম?

আপডেট টাইম : ০৫:১২:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সংবিধানকে কবর দেয়ার কথা বললে আমাদের কষ্ট লাগে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

সংবিধান পুনর্লিখন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধানটা লেখা হয়েছিলো একাত্তরের ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এই সংবিধানে স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। এই সংবিধানকে যারা মিস ইউজড করেছে, যারা অপব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। আরে ভাই, মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হয়? মাথা ব্যথা হলে কেটে ফেলতে হয় না, ঔষধ খেতে হয়৷

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বৈষম্যমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এই কিছুক্ষণ আগে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যারা নাকি আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে ৫ আগস্ট। এককভাবে তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিতে চায় কিন্তু আপনারা দেখেছেন, আমরাও জানি, আমরাও দেখেছি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিভু নিভু তখন কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনে এগিয়ে আসে, সাধারণ মানুষ সামনে এগিয়ে আসে, আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীই ৪৬২ জন মারা গেছে এর মধ্যে।

‘নিশ্চয় নেতৃত্বে একজন থাকবে, পিছনে হাজারো লোক থাকবে কিন্তু এককভাবে কেউ কারো দাবি করা ঠিক না। এতে কিন্তু জনমনে বিভেদ সৃষ্টি হবে। এই যে, আমাকে কথাটা বলতে হচ্ছে, আমাকে এই কথাটা বলতে বাধ্য। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, সেটাও সম্মুখভাবে অংশগ্রহণ করেছি। আমার সঙ্গের অনেক সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব মারা গেছে প্রায় ৩০ লক্ষ, শহীদ হয়েছে। শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সে সংবিধানকে যখন কবর দেয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ রেখে মির্জা আব্বা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাইদের কাছে অনুরোধ করবো, বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। ভুল বুঝবেন না। কবর দিয়ে দিবো, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো এই ধরনের কথাগুলো কিন্তু ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে। এগুলো কিন্তু ভাল কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমি আশা করি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কিছু লোক বাহির থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছেন মনে হয় এরকম। তারা আবার বলেনও, এদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। তাদের কথাবার্তার যে ঝাঝ, আজকে আমাদের ছাত্র ভাইদের কথাবার্তার যে ঝাঝ একই রকম। আমরা তাহলে ৭১ সালে কি করলাম? আমার প্রশ্ন এই জায়গায়, ৭১ সালে জাতি কী করলো? আমরা কী অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি, একটা পক্ষ বলবে, হ্যা, ঐদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন। বলতে পারেন, স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আমরা কী অন্যায় করেছিলাম যুদ্ধ করে? এই দেশকে স্বাধীন করে?

মির্জা আব্বাস বলেন, এই ২৬/২৫/২৪ বছর বয়স, আমার ত একবারে ৭৫ বছর বয়স হয় নাই। একদিন থেকে শুরু হয়েছে। এক থেকে শুরু হয়ে আজ আমাদের ৭৫ বছর বয়স হয়েছে, তোমাদেরও একদিন হবে। বুঝতে পারবে, সেদিন যদি কেউ বলে আমরা তোমাদের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিলাম, তাহলে কেমন লাগবে? সেদিন বা দুই দিন পরে কেউ বলে যে তোমাদের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিলাম, তোমাদের মতই কেউ যদি আবার চলে আসে তখন কি হবে?

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুন সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সাবেক দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।

নিউজ লাইট ৭১