অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের অঙ্গীকার
- আপডেট টাইম : ০৭:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
- / 19
মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি এবং তার পরিবার সব সময় মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করা তার অঙ্গীকার বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকেএ কথা বলেন।
এ সময় কোনো দলের প্রতি তাদের পক্ষপাত নেই জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, তারা একটা নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। বাংলাদেশের উন্নয়ন যেভাবে ‘মসৃণভাবে’ চলছে, সেভাবেই চলুক, এটাই যুক্তরাষ্ট্র চায়। তারা কারও প্রতি বিরাগভাজন হয়ে এখানে আসেননি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা দেশগুলোর নানা তৎপরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তার সফরকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
দুই দিন আগেই দেশে আসেন উজরা জেয়া। সঙ্গে আসেন মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লু এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর। দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সঙ্কট রয়েছে তাদের সফরের আলোচ্য সূচিতে।
সরকার পতন ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে এই মুহূর্তে দেশে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলও। আগামী নির্বাচনে সংস্থাটি পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটি এ দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সে দেশের ভিসা পাবে না। দেশটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে দুই পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাক্ষাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, দুই দেশের সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে তার নিজের ও দলের চেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করা তার অঙ্গীকার। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন তারা আগেও করেছেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি এবং তার পরিবার সব সময় মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি। জনগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাই করবে। জনগণের এই অধিকার আদায় আমার দল সব সময় সংগ্রাম করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখেছি অতীতে বিএনপি কীভাবে ভোট কারচুপি করেছে। আমরা সংগ্রাম করে সেটি পরিবর্তন করেছি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এটা আমরা চালু করেছি।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে পরে সহিংসতার কথাও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৩ ও ১৫ সালে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নৃশংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস করে, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ৫০০ জন নিহত হয়েছে।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বারবার হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, হত্যার উদ্দেশে বার বার তার ওপর হামলা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে নেতা-কর্মী, সমর্থকরা মানব প্রাচীর তৈরি তার প্রাণ বাঁচিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সেটি নিয়ে কথা বলেন উজরা জেয়া।
তিনি (উজরা) বলেছেন, ভিসা নীতি হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও প্রতিশ্রুতি আছে, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করতে এই ভিসা নীতি।
প্রেস সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বলেছেন, কোনো দলের প্রতি তাদের কোনো পক্ষপাত নেই। তারা একটা নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চান।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাতে মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে লিঙ্গ সমতাকার্যক্রম সমন্বয় করা, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূত পিটার হাস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশীল সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে কথা বলে দুই পক্ষ।
ইহসানুল করিম জানান, বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন উজরা জেয়া।
রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মার্কিন এই কর্মকর্তা।
বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। এ কাজে বাংলাদেশকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার দেশ এই সহায়তা দিতে পেরে গর্বিত। বাংলাদেশে চলমান কার্যক্রমগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া অতিরিক্ত ৭৪০ কোটি ডলার সহায়তার বিষয়টিও তুলে ধরেন উজরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ১ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানব পাচার, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, যেটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সঙ্কটের অবসান ঘটাতে এবং রোহিঙ্গাদের সবকিছু জানিয়ে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে নিজ মাতৃভূমিতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর চাপ বজায় রেখেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যহত রাখবে বলে জানান উজরা জেয়া। শ্রমিকদের কল্যাণেও যুক্তরাষ্ট্র এক সঙ্গে কাজ করবে এবং বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে নিশ্চয়তা দেন।
নিউজ লাইট ৭১