ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ্রতা ও শরতের প্রতীক কাশফুল

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • / 32

কাশবন (ছবি : নিউজ লাইট ৭১)

ষড়ঋতুর বাংলায় বর্ষাকালকে বিদায় জানাতে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে ফিরে আসে শরৎকাল। শরৎ এলে বাংলার প্রকৃতি কাশফুলের সাদা-সবুজের সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়। বাঙালির হৃদয়ে আনন্দের আশা জাগে। শিশির ভেজা মাঠজুড়ে সবুজ ঘাস, নীল আকাশ ও সাদা কাশফুল শিহরণ জাগায় হৃদয়ে।

আবার কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণও রয়েছে। শরীরে ব্যথানাশক হিসেবে বিষ ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশফুল গাছের মূল ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই আদি যুগ থেকে। কাশমূল বেটে গায়ে মাখলে শরীরের দুর্গন্ধ দূর হয়। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশফুল গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে ঔষধ তৈরি করে তা নিয়মিত পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়।

বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুল নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান, গল্পই বলে দেয় দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যই ঋতু রানী শরতের অন্যতম আকর্ষণ। শরতের কাশফুল নিয়ে কবিগুরু লিখেছেন, ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা। নবীন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।’

বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন-‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কী অপার সৃষ্টি। ‘

বরগুনার আমতলীতে বিনোদনের জন্য তেমন কোনো যায়গা না থাকায় প্রকৃতিতে চলমান শরতে নদ-নদী ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ কাশবনই এখন প্রকৃতি-প্রেমীদের কাছে একমাত্র বিনোদন স্থল। পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর কোলঘেঁষা আমতলীর ওয়াবদা বøক এলাকা, পৌরভবনের পেছনে, পুরান লঞ্চঘাট এলাকার বালুর মাঠ, খুড়িয়ার খেয়াঘাট, আমতলী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে মেঘমালা পেট্রল পাম্প এলাকাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর তীরবর্তী মাঠ জুড়ে এখন দোদুল্যমান সাদা কাশফুলের সমাহার।

কাশফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি-প্রেমীরা এসব স্থানে ঘুরতে আসেন। প্রতিদিনই কাশবন এলাকায় দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন একটু প্রশান্তির আশায় স্বপ্নের কাশফুলের রাজ্যে। বিকেল গড়াতেই দেখা যায় দলবেঁধে তরণ-তরুণীরা আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কেউ আপন মনে মনে গান গেয়ে, কেউ কবিতা পড়ে, কেউ ভিডিও কিংবা সেলফি তুলে মজা করতে করতে সময় পাড় করছেন। পরিবারের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দ উচ্ছ্বাস সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করছে।

খুড়িয়ার খেয়াঘাটে কাশবনে সহকর্মীদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শিক্ষিকা দিলরুবা রোজি ও সাথিয়া সুলতানা। তারা বলেন, কাশবনে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রকৃতি সবসময়ই এমন শুভ্র থাকুক। বাতাসের চঞ্চলতায় আমরা মুগ্ধ। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই।

হলদিয়া থেকে ঘুরতে আসা ইউপি সদস্য ঝন্টু তালুকদার বলেন, খুড়িয়ার খেয়াঘাটে সুন্দর একটি কাশবন পেয়েছি। সত্যিই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

ওয়াবদা ব্লক এলাকার কাশবনে ঘুরতে আসা নাজমুন নাহার বলেন, বাঙালি নারীর কাছে সব থেকে আনন্দ হলো শাড়ি পরে শরতের সাজে প্রিয় মানুষের সাথে কাশবনে ঘোরাঘুরি করা। এজন্যই যুগ যুগ ধরে কবি সাহিত্যিকরা নারীকে তাদের গল্প-কবিতায় এবং নারী নিজেই নিজেকে শরতের শুভ্রতায় সাজিয়ে তুলতে চেয়েছেন তার প্রিয় মানুষের কাছে।

পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী ইমন বলেন, বিস্তীর্ণ কাশবন দেখে সত্যি হৃদয় জুড়িয়ে গেছে। তবে কাশবনে যেভাবে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে তাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিৎ।

আমতলীর সরকারি কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বিশ্বাস বলেন, কাশফুলের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান হচ্ছে নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটি। ওই মাটিতে খুব সহজেই কাশফুল গাছ বেড়ে ওঠে। আমাদের দেশের চরাঞ্চলে চাষিরা একসময় বাণিজ্যিকভাবেও কাশফুল চাষ করতো যা এখন বিলীনের পথে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button
Tag :

শেয়ার করুন

শুভ্রতা ও শরতের প্রতীক কাশফুল

আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

ষড়ঋতুর বাংলায় বর্ষাকালকে বিদায় জানাতে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে ফিরে আসে শরৎকাল। শরৎ এলে বাংলার প্রকৃতি কাশফুলের সাদা-সবুজের সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়। বাঙালির হৃদয়ে আনন্দের আশা জাগে। শিশির ভেজা মাঠজুড়ে সবুজ ঘাস, নীল আকাশ ও সাদা কাশফুল শিহরণ জাগায় হৃদয়ে।

আবার কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণও রয়েছে। শরীরে ব্যথানাশক হিসেবে বিষ ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশফুল গাছের মূল ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই আদি যুগ থেকে। কাশমূল বেটে গায়ে মাখলে শরীরের দুর্গন্ধ দূর হয়। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশফুল গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে ঔষধ তৈরি করে তা নিয়মিত পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়।

বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুল নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান, গল্পই বলে দেয় দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যই ঋতু রানী শরতের অন্যতম আকর্ষণ। শরতের কাশফুল নিয়ে কবিগুরু লিখেছেন, ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা। নবীন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।’

বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন-‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কী অপার সৃষ্টি। ‘

বরগুনার আমতলীতে বিনোদনের জন্য তেমন কোনো যায়গা না থাকায় প্রকৃতিতে চলমান শরতে নদ-নদী ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ কাশবনই এখন প্রকৃতি-প্রেমীদের কাছে একমাত্র বিনোদন স্থল। পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর কোলঘেঁষা আমতলীর ওয়াবদা বøক এলাকা, পৌরভবনের পেছনে, পুরান লঞ্চঘাট এলাকার বালুর মাঠ, খুড়িয়ার খেয়াঘাট, আমতলী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে মেঘমালা পেট্রল পাম্প এলাকাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর তীরবর্তী মাঠ জুড়ে এখন দোদুল্যমান সাদা কাশফুলের সমাহার।

কাশফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি-প্রেমীরা এসব স্থানে ঘুরতে আসেন। প্রতিদিনই কাশবন এলাকায় দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন একটু প্রশান্তির আশায় স্বপ্নের কাশফুলের রাজ্যে। বিকেল গড়াতেই দেখা যায় দলবেঁধে তরণ-তরুণীরা আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কেউ আপন মনে মনে গান গেয়ে, কেউ কবিতা পড়ে, কেউ ভিডিও কিংবা সেলফি তুলে মজা করতে করতে সময় পাড় করছেন। পরিবারের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দ উচ্ছ্বাস সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করছে।

খুড়িয়ার খেয়াঘাটে কাশবনে সহকর্মীদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শিক্ষিকা দিলরুবা রোজি ও সাথিয়া সুলতানা। তারা বলেন, কাশবনে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রকৃতি সবসময়ই এমন শুভ্র থাকুক। বাতাসের চঞ্চলতায় আমরা মুগ্ধ। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই।

হলদিয়া থেকে ঘুরতে আসা ইউপি সদস্য ঝন্টু তালুকদার বলেন, খুড়িয়ার খেয়াঘাটে সুন্দর একটি কাশবন পেয়েছি। সত্যিই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

ওয়াবদা ব্লক এলাকার কাশবনে ঘুরতে আসা নাজমুন নাহার বলেন, বাঙালি নারীর কাছে সব থেকে আনন্দ হলো শাড়ি পরে শরতের সাজে প্রিয় মানুষের সাথে কাশবনে ঘোরাঘুরি করা। এজন্যই যুগ যুগ ধরে কবি সাহিত্যিকরা নারীকে তাদের গল্প-কবিতায় এবং নারী নিজেই নিজেকে শরতের শুভ্রতায় সাজিয়ে তুলতে চেয়েছেন তার প্রিয় মানুষের কাছে।

পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী ইমন বলেন, বিস্তীর্ণ কাশবন দেখে সত্যি হৃদয় জুড়িয়ে গেছে। তবে কাশবনে যেভাবে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে তাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিৎ।

আমতলীর সরকারি কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বিশ্বাস বলেন, কাশফুলের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান হচ্ছে নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটি। ওই মাটিতে খুব সহজেই কাশফুল গাছ বেড়ে ওঠে। আমাদের দেশের চরাঞ্চলে চাষিরা একসময় বাণিজ্যিকভাবেও কাশফুল চাষ করতো যা এখন বিলীনের পথে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button