ঢাকা ০৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকগুলো দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫১:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / 76

ব্যাংকগুলো দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহারের নির্দেশনা যথাযথভাবে মানছে কি না, তা পরিদর্শন করে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় হিসাব খোলার ফরম চালুর নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তা ছাড়া দাপ্তরিক কাজে যতটা সম্ভব বাংলা ভাষার ব্যবহারের নির্দেশনাও রয়েছে।তবে ব্যাংকে বাংলার চর্চা বেড়েছে কি না, তা করোনা মহামারীর কারণে পরিদর্শন করে দেখতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এ বছর যেহেতু করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে এবং ব্যাংকগুলোয় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলছে, সেহেতু হিসাব খোলার ফরমসহ দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার হচ্ছে কি না তা পরিদর্শন করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের।তিনি নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, ব্যাংক খাতে সব শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোয় বাংলা ভাষার প্রচলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় হিসাব খোলার ফরম, ঋণ মঞ্জুরিপত্রসহ সব ধরনের দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংকই হিসাব খোলার ফরম বাংলায় চালু করেছে। তা ছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ, ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনসহ প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন প্ল্যাটফর্মেও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলাকে বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে। গ্রাহক চাইলে বাংলা ভাষা নির্বাচন করে পুরো লেনদেনটি বাংলায় সম্পন্ন করতে পারছেন।বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনে বাংলা ভাষায় লেনদেনের বিষয়ে ব্যাংকটির গ্রাহক ফায়সাল হোসাইন নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, ‘প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেনের বিষয়ে অনেকের মধ্যেই একধরনের ভীতি কাজ করে। তবে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষার ব্যবহার থাকায় গ্রাহকরা পুরো লেনদেন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারেন। এতে গ্রাহকদের ভীতি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।’

এ ছাড়া বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই বাংলায় নামফলক লিখছে। এতে করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দিন আহমেদ।তিনি বলেন, আমরা ক্রেডিট কার্ডসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের শর্তাবলি ও নিয়মকানুন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রণ করছি। তা ছাড়া গ্রাহকদের সঙ্গে যত ধরনের লেনদেন হচ্ছে তার প্রায় সবখানেই বাংলার ব্যবহার রাখার চেষ্টা করছি। তবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সব কাজে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং তার দরকারও নেই বলে আমি মনে করি। কেননা, তাতে গ্রাহদের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

স্বাধীনতার পর দেশের ব্যাংকগুলোর নামকরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা শব্দের প্রাধান্য দেওয়ায় সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, পূবালী, উত্তরা এমন অনেক নামে ব্যাংক চালু হয়। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বেশিরভাগ ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিদেশি শব্দে ব্যাংকের নামকরণ করতে দেখা যায়। নব্বইয়ের দশক ও এর পরবর্তী সময়ে চালু হওয়া ওই ব্যাংকগুলোই আধুনিক ব্যাংকিং পণ্য চালু করার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়িয়ে তোলে।২০১০-১১-এর পর থেকে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীতা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও নিজ আগ্রহে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে থাকে। ব্যাংকের নাম বাংলা হরফে লেখা থেকে শুরু করে ‘২৪ ঘণ্টা সাত দিন এটিএম বুথ’, ‘মানি ট্রান্সফার’ এমন অনেক সেবার সাইনবোর্ডে বাংলা হরফের ব্যবহার শুরু হতে থাকে। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ মঞ্জুরিপত্র আবশ্যিকভাবে বাংলায় প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সুবিধার জন্য বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও প্রণয়নের সুযোগ রাখা হয়। ঋণ মঞ্জুরিপত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার হওয়ায় তা সর্বজনীনভাবে গ্রাহকের জন্য সুবিধাজনক হবে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ফরাহ নাছের।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি ব্যাংকগুলোকেও বাংলায় হিসাব খোলার ফরম খুলতে হবে। এই খাতের ব্যাংকগুলোর কোনো ঘাটতি আছে কি না, তাও পরিদর্শনের চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে।’সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদের বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে প্রণীত বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭-এর ৩(১)নং ধারায় বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি আবশ্যিকভাবে বাংলায় লেখার নির্দেশনা রয়েছে।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

ব্যাংকগুলো দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার

আপডেট টাইম : ০৬:৫১:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ব্যাংকগুলো দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহারের নির্দেশনা যথাযথভাবে মানছে কি না, তা পরিদর্শন করে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় হিসাব খোলার ফরম চালুর নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তা ছাড়া দাপ্তরিক কাজে যতটা সম্ভব বাংলা ভাষার ব্যবহারের নির্দেশনাও রয়েছে।তবে ব্যাংকে বাংলার চর্চা বেড়েছে কি না, তা করোনা মহামারীর কারণে পরিদর্শন করে দেখতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এ বছর যেহেতু করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে এবং ব্যাংকগুলোয় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলছে, সেহেতু হিসাব খোলার ফরমসহ দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার হচ্ছে কি না তা পরিদর্শন করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের।তিনি নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, ব্যাংক খাতে সব শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোয় বাংলা ভাষার প্রচলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় হিসাব খোলার ফরম, ঋণ মঞ্জুরিপত্রসহ সব ধরনের দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংকই হিসাব খোলার ফরম বাংলায় চালু করেছে। তা ছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ, ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনসহ প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন প্ল্যাটফর্মেও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলাকে বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে। গ্রাহক চাইলে বাংলা ভাষা নির্বাচন করে পুরো লেনদেনটি বাংলায় সম্পন্ন করতে পারছেন।বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনে বাংলা ভাষায় লেনদেনের বিষয়ে ব্যাংকটির গ্রাহক ফায়সাল হোসাইন নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, ‘প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেনের বিষয়ে অনেকের মধ্যেই একধরনের ভীতি কাজ করে। তবে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষার ব্যবহার থাকায় গ্রাহকরা পুরো লেনদেন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারেন। এতে গ্রাহকদের ভীতি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।’

এ ছাড়া বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই বাংলায় নামফলক লিখছে। এতে করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দিন আহমেদ।তিনি বলেন, আমরা ক্রেডিট কার্ডসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের শর্তাবলি ও নিয়মকানুন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রণ করছি। তা ছাড়া গ্রাহকদের সঙ্গে যত ধরনের লেনদেন হচ্ছে তার প্রায় সবখানেই বাংলার ব্যবহার রাখার চেষ্টা করছি। তবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সব কাজে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং তার দরকারও নেই বলে আমি মনে করি। কেননা, তাতে গ্রাহদের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

স্বাধীনতার পর দেশের ব্যাংকগুলোর নামকরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা শব্দের প্রাধান্য দেওয়ায় সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, পূবালী, উত্তরা এমন অনেক নামে ব্যাংক চালু হয়। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বেশিরভাগ ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিদেশি শব্দে ব্যাংকের নামকরণ করতে দেখা যায়। নব্বইয়ের দশক ও এর পরবর্তী সময়ে চালু হওয়া ওই ব্যাংকগুলোই আধুনিক ব্যাংকিং পণ্য চালু করার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়িয়ে তোলে।২০১০-১১-এর পর থেকে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীতা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও নিজ আগ্রহে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে থাকে। ব্যাংকের নাম বাংলা হরফে লেখা থেকে শুরু করে ‘২৪ ঘণ্টা সাত দিন এটিএম বুথ’, ‘মানি ট্রান্সফার’ এমন অনেক সেবার সাইনবোর্ডে বাংলা হরফের ব্যবহার শুরু হতে থাকে। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ মঞ্জুরিপত্র আবশ্যিকভাবে বাংলায় প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সুবিধার জন্য বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও প্রণয়নের সুযোগ রাখা হয়। ঋণ মঞ্জুরিপত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার হওয়ায় তা সর্বজনীনভাবে গ্রাহকের জন্য সুবিধাজনক হবে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ফরাহ নাছের।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি ব্যাংকগুলোকেও বাংলায় হিসাব খোলার ফরম খুলতে হবে। এই খাতের ব্যাংকগুলোর কোনো ঘাটতি আছে কি না, তাও পরিদর্শনের চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে।’সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদের বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে প্রণীত বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭-এর ৩(১)নং ধারায় বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি আবশ্যিকভাবে বাংলায় লেখার নির্দেশনা রয়েছে।

নিউজ লাইট ৭১