ঢাকা ০২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এ মাসেই বসছে মেট্রোরেলের লাইন

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১২:৪১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৯
  • / 132

দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেগা প্রকল্প মেট্রোরেলের কাজ। এরইমধ্যে পিলারের ওপর দেখা যাচ্ছে এ মেগা প্রকল্পের ভায়াডাক্ট। চলছে বৈদ্যুতিক কাজও। তবে সবচেয়ে সুখকর সংবাদ হচ্ছে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে দেশে আসবে মেট্রোরেলের নমুনা কোচ ও ইঞ্জিন। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে মোট ২৪টি ট্রেন সেট আসবে। একেকটি সেটে ৬টি করে কোচ থাকবে।

মেট্রোরেল নিয়ে নগরবাসীকে ধারণা দিতে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হবে এ নমুনা ট্রেন। এছাড়া চলতি মাসের শেষের দিকে ভায়াডাক্টের ওপর শুরু হবে মেট্রোরেলের লাইন বা রেলট্র্যাক বসানোর কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো অংশ চালু করে দেয়া হবে। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডে’র (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক মানবকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এরই মধ্যে চীন থেকে রেললাইন এসে পৌঁছেছে। এসেছে লাইন বসানোর মেশিনও। রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে শিগগীরই। সব ঠিক থাকলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সেট আসলেই শুরুহবে ট্রায়াল রান। তবে যাত্রী বহনে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। জনস্বার্থে এই প্রকল্পের কিছুটা নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল নয়, কমলাপুর পর্যন্ত যাচ্ছে মেট্রোরেল। পাশাপাশি উত্তরা থেকে কমলাপুর পযন্ত আরেকটি পাতাল রেল প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। যা যুক্ত হবে মেট্রোরেলের সঙ্গে।

মেট্রোরেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যেই প্রকল্পের ডিপো এলাকার ভ‚মি উন্নয়নের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এ স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। এতেই দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের এ মেগা প্রকল্প। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজ হয়েছে ১৬ দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ। তবে রেললাইন, কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক দশ ভাগ। প্রকল্প মেয়াদের এক বছর ছয় মাস আগেই কাজ শেষ হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এক প্রকৌশলী জানান, মেট্রোরেলের জন্য পৃথিবীর সর্বশেষ প্রযুক্তির কোচগুলো আনা হচ্ছে। যখন এগুলো চলতে শুরু করবে তখন তা অন্যান্য দেশের চেয়ে উন্নতর ও আধুনিক হবে। আর দেশের প্রথম এই মেট্রোরেল হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড ও বিদ্যুৎচালিত।

মেট্রোরেলের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, মেট্রোরেলের বাকি যে কাজ আছে সবগুলো একসঙ্গে শুরু হবে। পরিবর্তন এসেছে নকশাতেও। আরো এক কিলোমিটার বাড়িয়ে মতিঝিলের অংশটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কমলাপুর পর্যন্ত।

তিনি বলেন, আমাদের রেলওয়ে ট্র্যাক ইতোমধ্যে চলে এসেছে। ট্র্যাক বসানোর জন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতি লাগে। এখন পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ভায়াডাক্টের ওপরে রেললাইন বসে যাবে। বাহ্যিকভাবে ডিসেম্বরে এটা দেখা যাবে।

সরেজমিনে দিয়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ডিপো থেকে উড়ালপথে ট্রেন ওঠার পথ তৈরির কাজ চলছে। মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পরিচালনা হবে ডিপো এলাকা থেকে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। ডিপোর ছাউনির জন্য ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখানে রেলের টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, জ্যাক পিট, বগি টার্ন টেবল, বগি ওয়াশ প্লান্টসহ অন্যান্য অংশের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টারসহ অন্যান্য স্থাপনাও নির্মাণ হচ্ছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের হিসাবে এ অংশের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

সেখানে কর্মরত প্রকল্পের কর্মীরা জানিয়েছেন, পাথর-বালুর মিশ্রণে সাববেইজ এর কাজ শেষ। সাব বেইজের ওপর থাকবে পাথর, পাথরের ওপর ¯িøপার আর পাত বসবে। রেল কোচ ও ডিপোর যন্ত্রাংশ সংগ্রহের কাজ দৃশ্যমান হতে দেরি হবে। প্যাকেজ আটের আওতায় রোলিং স্টক এবং ডিপো ইকুইপমেন্ট আসবে। এটা তেমন দৃশ্যমান হচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি বিদেশে তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাহাজীকরণ করা হবে। এগুলো আসতে শুরু করলে খুব কম সময়ে বিষয়গুলো দৃশ্যমাণ হবে।

মেট্রোরেল সম্পর্কে যাত্রীদের ধারণা দিতে একটি ট্রেনের একটি নমুনাও জাপানে তৈরি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, ট্রেনের প্রথম ‘মকআপটা’ তৈরি হয়ে গেছে, দেশে আসবে জানুয়ারি মাসে। আমরা এটা ডিপোতে বসাব। কারণ বাংলাদেশে ইতিপূর্বে কোনো মেট্রোরেল ছিল না। টিকেট কাটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ানো, নামা, ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনের নির্দেশিকাগুলো কেমন থাকবে- এসব বিষয়ে মানুষকে ধারণা দিতেই এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শনীকেন্দ্রে এটা থাকবে। ২০২০ সালের ?১৫ জুনে মূল ট্রেনের প্রথম সেট আসবে। তারপরে ট্রেনগুলো পর্যায়ক্রমে আসতেই থাকবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর কাজ আটটি প্যাকেজে করা হচ্ছে। প্যাকেজ-১ এর আওতায় ডিপো এলাকার ভ‚মি উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি শতভাগ। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ হচ্ছে প্যাকেজ দুইয়ের আওতায়; এর অগ্রগতি ৬০ ভাগ। প্যাকেজ তিন ও চারের আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পযন্ত১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কাজের অগ্রগতি ৫৭ ভাগ।

আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত তিন দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ পাঁচের আওতায়। এ অংশের অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৩ ভাগ। এ অংশের কাজ শুরুহয়েছে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চার দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ ছয়ের আওতায়। এই কাজের অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০টির মতো স্টাডি করা হয়েছে। এরপর এর বেসিক ডিজাইন করা হয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে এটার ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। মূল কাজ শুরুর আড়াই বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পর যে অগ্রগতি হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যাবে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিনা। বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা প্রকল্পের কাজ চালু রয়েছে। ঠিকাদার এবং পরামর্শকদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করার ব্যাপারে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় সরকার।

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পযন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল-৬ বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ করে মেট্রোরেল চলাচল শুরুর জন্য কয়েক দফা সময় নির্ধারণ করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল চালুর কথা জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।

প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পযন্ত মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে। উত্তরার দিয়াবাড়িতে হবে মেট্রোরেলের প্রথম স্টেশন। যার নাম হবে উত্তরা নর্থ। পর্যায়ক্রমে এর পরের স্টেশনগুলো হবে- উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল।

Tag :

শেয়ার করুন

এ মাসেই বসছে মেট্রোরেলের লাইন

আপডেট টাইম : ১২:৪১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৯

দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেগা প্রকল্প মেট্রোরেলের কাজ। এরইমধ্যে পিলারের ওপর দেখা যাচ্ছে এ মেগা প্রকল্পের ভায়াডাক্ট। চলছে বৈদ্যুতিক কাজও। তবে সবচেয়ে সুখকর সংবাদ হচ্ছে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে দেশে আসবে মেট্রোরেলের নমুনা কোচ ও ইঞ্জিন। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে মোট ২৪টি ট্রেন সেট আসবে। একেকটি সেটে ৬টি করে কোচ থাকবে।

মেট্রোরেল নিয়ে নগরবাসীকে ধারণা দিতে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হবে এ নমুনা ট্রেন। এছাড়া চলতি মাসের শেষের দিকে ভায়াডাক্টের ওপর শুরু হবে মেট্রোরেলের লাইন বা রেলট্র্যাক বসানোর কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো অংশ চালু করে দেয়া হবে। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডে’র (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক মানবকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এরই মধ্যে চীন থেকে রেললাইন এসে পৌঁছেছে। এসেছে লাইন বসানোর মেশিনও। রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে শিগগীরই। সব ঠিক থাকলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সেট আসলেই শুরুহবে ট্রায়াল রান। তবে যাত্রী বহনে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। জনস্বার্থে এই প্রকল্পের কিছুটা নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল নয়, কমলাপুর পর্যন্ত যাচ্ছে মেট্রোরেল। পাশাপাশি উত্তরা থেকে কমলাপুর পযন্ত আরেকটি পাতাল রেল প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। যা যুক্ত হবে মেট্রোরেলের সঙ্গে।

মেট্রোরেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যেই প্রকল্পের ডিপো এলাকার ভ‚মি উন্নয়নের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এ স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। এতেই দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের এ মেগা প্রকল্প। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজ হয়েছে ১৬ দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ। তবে রেললাইন, কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক দশ ভাগ। প্রকল্প মেয়াদের এক বছর ছয় মাস আগেই কাজ শেষ হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এক প্রকৌশলী জানান, মেট্রোরেলের জন্য পৃথিবীর সর্বশেষ প্রযুক্তির কোচগুলো আনা হচ্ছে। যখন এগুলো চলতে শুরু করবে তখন তা অন্যান্য দেশের চেয়ে উন্নতর ও আধুনিক হবে। আর দেশের প্রথম এই মেট্রোরেল হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড ও বিদ্যুৎচালিত।

মেট্রোরেলের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, মেট্রোরেলের বাকি যে কাজ আছে সবগুলো একসঙ্গে শুরু হবে। পরিবর্তন এসেছে নকশাতেও। আরো এক কিলোমিটার বাড়িয়ে মতিঝিলের অংশটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কমলাপুর পর্যন্ত।

তিনি বলেন, আমাদের রেলওয়ে ট্র্যাক ইতোমধ্যে চলে এসেছে। ট্র্যাক বসানোর জন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতি লাগে। এখন পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ভায়াডাক্টের ওপরে রেললাইন বসে যাবে। বাহ্যিকভাবে ডিসেম্বরে এটা দেখা যাবে।

সরেজমিনে দিয়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ডিপো থেকে উড়ালপথে ট্রেন ওঠার পথ তৈরির কাজ চলছে। মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পরিচালনা হবে ডিপো এলাকা থেকে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। ডিপোর ছাউনির জন্য ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখানে রেলের টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, জ্যাক পিট, বগি টার্ন টেবল, বগি ওয়াশ প্লান্টসহ অন্যান্য অংশের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টারসহ অন্যান্য স্থাপনাও নির্মাণ হচ্ছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের হিসাবে এ অংশের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

সেখানে কর্মরত প্রকল্পের কর্মীরা জানিয়েছেন, পাথর-বালুর মিশ্রণে সাববেইজ এর কাজ শেষ। সাব বেইজের ওপর থাকবে পাথর, পাথরের ওপর ¯িøপার আর পাত বসবে। রেল কোচ ও ডিপোর যন্ত্রাংশ সংগ্রহের কাজ দৃশ্যমান হতে দেরি হবে। প্যাকেজ আটের আওতায় রোলিং স্টক এবং ডিপো ইকুইপমেন্ট আসবে। এটা তেমন দৃশ্যমান হচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি বিদেশে তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাহাজীকরণ করা হবে। এগুলো আসতে শুরু করলে খুব কম সময়ে বিষয়গুলো দৃশ্যমাণ হবে।

মেট্রোরেল সম্পর্কে যাত্রীদের ধারণা দিতে একটি ট্রেনের একটি নমুনাও জাপানে তৈরি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, ট্রেনের প্রথম ‘মকআপটা’ তৈরি হয়ে গেছে, দেশে আসবে জানুয়ারি মাসে। আমরা এটা ডিপোতে বসাব। কারণ বাংলাদেশে ইতিপূর্বে কোনো মেট্রোরেল ছিল না। টিকেট কাটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ানো, নামা, ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনের নির্দেশিকাগুলো কেমন থাকবে- এসব বিষয়ে মানুষকে ধারণা দিতেই এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শনীকেন্দ্রে এটা থাকবে। ২০২০ সালের ?১৫ জুনে মূল ট্রেনের প্রথম সেট আসবে। তারপরে ট্রেনগুলো পর্যায়ক্রমে আসতেই থাকবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর কাজ আটটি প্যাকেজে করা হচ্ছে। প্যাকেজ-১ এর আওতায় ডিপো এলাকার ভ‚মি উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি শতভাগ। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ হচ্ছে প্যাকেজ দুইয়ের আওতায়; এর অগ্রগতি ৬০ ভাগ। প্যাকেজ তিন ও চারের আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পযন্ত১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কাজের অগ্রগতি ৫৭ ভাগ।

আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত তিন দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ পাঁচের আওতায়। এ অংশের অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৩ ভাগ। এ অংশের কাজ শুরুহয়েছে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চার দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ ছয়ের আওতায়। এই কাজের অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০টির মতো স্টাডি করা হয়েছে। এরপর এর বেসিক ডিজাইন করা হয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে এটার ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। মূল কাজ শুরুর আড়াই বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পর যে অগ্রগতি হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যাবে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিনা। বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা প্রকল্পের কাজ চালু রয়েছে। ঠিকাদার এবং পরামর্শকদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করার ব্যাপারে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় সরকার।

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পযন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল-৬ বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ করে মেট্রোরেল চলাচল শুরুর জন্য কয়েক দফা সময় নির্ধারণ করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল চালুর কথা জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।

প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পযন্ত মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে। উত্তরার দিয়াবাড়িতে হবে মেট্রোরেলের প্রথম স্টেশন। যার নাম হবে উত্তরা নর্থ। পর্যায়ক্রমে এর পরের স্টেশনগুলো হবে- উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল।