ঢাকা ০২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফসলের জমিতে একসঙ্গে তরমুজ ও সবজি চাষে রীতিমত বাজিমাত

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০২:০৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২০
  • / 86

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ফসলের জমিতে একসঙ্গে তরমুজ ও সবজি চাষে রীতিমত বাজিমাত সৃষ্টি করেছেন মো. আমজাত খান নামে এক কৃষক। তিনি পৌর শহরের তারাগন এলাকায় ১৫০ শতক জায়গা এক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে লাউ, করলা, শসা ফুলকপি আর তরমুজ চাষ করে তিনি এ সাফল্য পান। ইতোমধ্যে তিনি মৌসুমী শীতকালিন সবজি বিক্রি শুরু করলেও আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অসময়ের তরমুজ বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি।

আমজাদ খান হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৩ নং ওয়ার্ডের হরমুজ আলীর ছেলে। তিনি বলেন, গত প্রায় ৯ মাস পূর্বে পৌর শহরের তারাগন এলাকায় প্রথমে তিনি ৪৫ শতক জমি ইজারা নিয়ে পরীক্ষামূলক লাউ, শসা, করলা চাষ করেন। দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি চাষে তিনি রিতীমত বাজিমাত সৃষ্টি করেন। খরচ বাদে তার আয় হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে ১৮০ শতক জায়গা ইজারা নিয়ে ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, করলা, শসাসহ নানা প্রকার সবজি ও তরমুজ চাষ করেন। এর মধ্যে ২৮ শতক জায়গায় রয়েছে তরমুজও। এই প্রথম বার ব্ল্যাক বেবি নামে তরমুজ চাষ করেন তিনি। ১২ মাসই এই তরমুজ চাষ করা যায়। স্থানীয় বাজারে এই তরমুজের ভালো চাহিদা রয়েছে। এক একটির উজন ৩ থেকে ৪ কেজি হয়। ফলন ভালো রাখতে প্রতিনিয়ত কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন।  

আমজাদ বলেন, তরমুজ ও সবজি চাষে জমি, মাচা তৈরি চারাসহ অন্যান্য খরচসহ মোট তার প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উপর খরচ হয়। কয়েক দফা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষতি হলেও এরপর ফলন ভালো হয়। দ্বিতীয় দফায় এ পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে ৫০ হাজার টাকার উপর সবজি বিক্রি করেন তিনি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে তরমুজ বিক্রিও। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে খরচ বাদে তরমুজ ও সবজি থেকে ২ লাখ টাকার উপর আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন।

এদিকে সবজি চাষ লাভ জনক হওয়ায় এ উপজেলার শতাধিক কৃষক নিজেদের পতিত জমি, বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়, ও বাড়ির ছাদে নানা প্রজাতির সবজি চাষ করে এক নিরভ বিল্পব ঘটিয়েছে। তাদের সবজি চাষের কারণে এলাকার অনাবাদি জমিগুলো এখন সবজি চাষে ভরপুর হয়ে উঠেছে। মৌসুম অনুযায়ী তারা বারমাসই করলা,বরবটি, ঢেড়স, কাকরল, গাজর,সিম, টমেটো, পুইশাক,শসাসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করে বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্যের চাকা। এ চাষে ভালো উপার্যনের পাশাপাশি সংসারে ফিরে এসেছে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতাও।

এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষ বেশী লাভ জনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ চাষ। তারা জানায় এ উপজেলায় মৌসুম অনুযায়ী প্রায় ১২ মাসই নানা প্রকার সবজি চাষ হচ্ছে। ফলন ভাল করতে সার্বিক ভাবে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

আমজাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করার পর তার এলাকায় কীটনাশক ও বীজ ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এতে সফলতা না পেয়ে মানষিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েন। এরপর তার সবজি চাষে আগ্রহ জন্মে। নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে বাড়ি সংলগ্ন পৈত্রিক ৪০ শতক জায়গায় করলা,বরবটি, ঢেড়স, টমেটো,পুইশাক,শসাসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষে সফলতা পাওয়ায় মনের জোর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর শুরু করেন সবজি চাষ। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় জমি ইজারা নিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে তিনি বার মাসই সবজি চাষ করছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষেই তিনি ভাগ্য বদল করেছেন। ইতিমধ্যে সবজি চাষের উদ্যোক্তা হিসাবে কৃষকদের মাঝে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। দুরদুরান্তের লোকজন এসে তার কাছ থেকে এ চাষের নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন। তাছাড়া সফল সবজি চাষি হিসাবে তিনি ২০১৪-১৫ সনে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ২ বার পুরুস্কার পেয়েছেন বলে তিনি জানায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাজেরা বেগম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বছর জুড়ে নানা প্রকার সবজি আবাদ হচ্ছে। ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ক্ষতি হলে ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে দাম ভালো থাকায় সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে সবজি চাষ। পাশাপাশি এখন তরমুজ চাষ ও হচ্ছে। এলাকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

নিউজ লাইট ৭১ 

Tag :

শেয়ার করুন

ফসলের জমিতে একসঙ্গে তরমুজ ও সবজি চাষে রীতিমত বাজিমাত

আপডেট টাইম : ০২:০৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ফসলের জমিতে একসঙ্গে তরমুজ ও সবজি চাষে রীতিমত বাজিমাত সৃষ্টি করেছেন মো. আমজাত খান নামে এক কৃষক। তিনি পৌর শহরের তারাগন এলাকায় ১৫০ শতক জায়গা এক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে লাউ, করলা, শসা ফুলকপি আর তরমুজ চাষ করে তিনি এ সাফল্য পান। ইতোমধ্যে তিনি মৌসুমী শীতকালিন সবজি বিক্রি শুরু করলেও আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অসময়ের তরমুজ বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি।

আমজাদ খান হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৩ নং ওয়ার্ডের হরমুজ আলীর ছেলে। তিনি বলেন, গত প্রায় ৯ মাস পূর্বে পৌর শহরের তারাগন এলাকায় প্রথমে তিনি ৪৫ শতক জমি ইজারা নিয়ে পরীক্ষামূলক লাউ, শসা, করলা চাষ করেন। দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি চাষে তিনি রিতীমত বাজিমাত সৃষ্টি করেন। খরচ বাদে তার আয় হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে ১৮০ শতক জায়গা ইজারা নিয়ে ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, করলা, শসাসহ নানা প্রকার সবজি ও তরমুজ চাষ করেন। এর মধ্যে ২৮ শতক জায়গায় রয়েছে তরমুজও। এই প্রথম বার ব্ল্যাক বেবি নামে তরমুজ চাষ করেন তিনি। ১২ মাসই এই তরমুজ চাষ করা যায়। স্থানীয় বাজারে এই তরমুজের ভালো চাহিদা রয়েছে। এক একটির উজন ৩ থেকে ৪ কেজি হয়। ফলন ভালো রাখতে প্রতিনিয়ত কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন।  

আমজাদ বলেন, তরমুজ ও সবজি চাষে জমি, মাচা তৈরি চারাসহ অন্যান্য খরচসহ মোট তার প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উপর খরচ হয়। কয়েক দফা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষতি হলেও এরপর ফলন ভালো হয়। দ্বিতীয় দফায় এ পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে ৫০ হাজার টাকার উপর সবজি বিক্রি করেন তিনি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে তরমুজ বিক্রিও। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে খরচ বাদে তরমুজ ও সবজি থেকে ২ লাখ টাকার উপর আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন।

এদিকে সবজি চাষ লাভ জনক হওয়ায় এ উপজেলার শতাধিক কৃষক নিজেদের পতিত জমি, বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়, ও বাড়ির ছাদে নানা প্রজাতির সবজি চাষ করে এক নিরভ বিল্পব ঘটিয়েছে। তাদের সবজি চাষের কারণে এলাকার অনাবাদি জমিগুলো এখন সবজি চাষে ভরপুর হয়ে উঠেছে। মৌসুম অনুযায়ী তারা বারমাসই করলা,বরবটি, ঢেড়স, কাকরল, গাজর,সিম, টমেটো, পুইশাক,শসাসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করে বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্যের চাকা। এ চাষে ভালো উপার্যনের পাশাপাশি সংসারে ফিরে এসেছে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতাও।

এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষ বেশী লাভ জনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ চাষ। তারা জানায় এ উপজেলায় মৌসুম অনুযায়ী প্রায় ১২ মাসই নানা প্রকার সবজি চাষ হচ্ছে। ফলন ভাল করতে সার্বিক ভাবে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

আমজাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করার পর তার এলাকায় কীটনাশক ও বীজ ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এতে সফলতা না পেয়ে মানষিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েন। এরপর তার সবজি চাষে আগ্রহ জন্মে। নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে বাড়ি সংলগ্ন পৈত্রিক ৪০ শতক জায়গায় করলা,বরবটি, ঢেড়স, টমেটো,পুইশাক,শসাসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষে সফলতা পাওয়ায় মনের জোর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর শুরু করেন সবজি চাষ। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় জমি ইজারা নিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে তিনি বার মাসই সবজি চাষ করছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষেই তিনি ভাগ্য বদল করেছেন। ইতিমধ্যে সবজি চাষের উদ্যোক্তা হিসাবে কৃষকদের মাঝে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। দুরদুরান্তের লোকজন এসে তার কাছ থেকে এ চাষের নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন। তাছাড়া সফল সবজি চাষি হিসাবে তিনি ২০১৪-১৫ সনে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ২ বার পুরুস্কার পেয়েছেন বলে তিনি জানায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাজেরা বেগম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বছর জুড়ে নানা প্রকার সবজি আবাদ হচ্ছে। ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ক্ষতি হলে ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে দাম ভালো থাকায় সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে সবজি চাষ। পাশাপাশি এখন তরমুজ চাষ ও হচ্ছে। এলাকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

নিউজ লাইট ৭১