করোনার উপসর্গগুলো উদ্বেগজনক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
- আপডেট টাইম : ০৬:০২:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০
- / 85
৭১: মানবদেহের প্রধান অঙ্গগুলোর ক্ষতিসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু রোগীর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করার জন্য সরকারপ্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) জেনেভায় জাতিসংঘ সংস্থার ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স চলাকালীন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধনম গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘যদিও আমরা এখনও ভাইরাসটি সম্পর্কে শিখছি, তবে এটি স্পষ্ট যে কোভিড-১৯ কেবল মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় না। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ওপর এই ভাইরাসটির দীর্ঘমেয়াদী মারাত্মক প্রভাব রয়েছে।’
তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে এটিও প্রতীয়মান যে ‘হার্ড ইমিউনিটির’ ধারণাটি ‘নৈতিকভাকে অযৌক্তিক’ এবং ‘অপ্রোয়জনীয়’। ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলোর বিশদ বর্ণনা করেছেন যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘সত্যিই উদ্বেগজনক’ হারে ওঠানামা করে।
এর মধ্যে ক্লান্তি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে ফুসফুস এবং হার্টসহ প্রধান অঙ্গগুলোর প্রদাহ ও ক্ষতি এবং স্নায়বিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবগুলোও রয়েছে।
উপসর্গগুলো প্রায়শই বৃদ্ধি পায় মানুষের শরীরের যেকোনো সিস্টেমকে তা প্রভাবিত করতে পারে।
টেড্রোস অ্যাধনম বলেন, ‘সরকারের করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোর স্বীকৃতি প্রদান এবং এই ধরনের রোগীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ যত্ন ও পুনর্বাসন প্রয়োজন হয়।’
ডব্লিউএইচও প্রধানের মতে, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোর মুখোমুখি মানুষদের অবশ্যই পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করার জন্য সময় দেয়া এবং যত্ন নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ‘প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটির’ ধারণাটি ‘নৈতিকভাকে অযৌক্তিক’ এবং ‘অপ্রোয়জনীয়’ মনে হয়। এ পন্থা আরও লাখ লাখ মানুষকে কেবল মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেবে না, এটি করোনাভাইরাস থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার পথ দীর্ঘায়িত করবে।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে `হার্ড ইমিউনিটি’ কেবল তখনই সম্ভব যখন করোনাভাইরাসের নিরাপদ এবং কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী সমানভাবে বিতরণ করা হবে।
ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘কার্যকর একটি ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত সবাইকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে রোধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে, যা কোভিড-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি রোধ করার সর্বোত্তম উপায়।’
এদিকে শনিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু হয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৪ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, ২ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৯ জন। বিশ্বে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যাও এই দেশটিতে। বিশ্বের ক্ষমতাধর এ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯৩ লাখ ১৬ হাজার ২৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় এবং মৃতের সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ লাখ ৩৬ হাজার ১৬৬ জন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ২১ হাজার ৬৮১ জন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় এবং মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ লাখ ১৯ হাজার ৫২৮ জন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬২ জন।
করোনায় মৃতের সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। আর এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৯ লাখ ১২ হাজার ৮১১ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৬ জন। আর মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৫৬ জন।
সুস্থতার দিক থেকে প্রথম অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত (৭৪ লাখ ৩০ হাজার ৯১১ জন), দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র (৬০ লাখ ২৪ হাজার ৫১২ জন) এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল (৪৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৪ জন)।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৫টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
শীতের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। এমন প্রেক্ষাপটে অনেক দেশেই জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে।