ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাঠে নামছে এনবিআর।

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • / 70

৭১: মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে রাজস্ব আদায়ে কাক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ের চিত্র সে বার্তাই দিচ্ছে। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সে (ভ্যাট) প্রবৃদ্ধি মাইনাস ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। এমন প্রেক্ষাপটে এনবিআর করজাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পূরণ করতে চায়। এ জন্য এনবিআর মাঠে নামাচ্ছে ১২০টি জরিপ টিম। এ টিমের সদস্যরা নতুন করদাতাদের শনাক্তের পাশাপাশি দীর্ঘদিন কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদেরও করের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এনবিআর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, প্রতিবছরই অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আহরণে ধীরগতি থাকে। তবে এ বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এ গতি আরও কমেছে। বর্তমানে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে দেশে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এনবিআর করজাল বিস্তৃতির মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার পাশাপাশি বাইরে জরিপ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। মাঠের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা বজায় রেখে সমীক্ষা চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন নতুন ব্যক্তিকে আয়কর জালের আওতায় আনতে মাঠে নামছে এনবিআরের জরিপ টিম। এ টিমের সদস্যরা বাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও অফিসে গিয়ে করযোগ্য ব্যক্তিদের শনাক্ত ও টিআইএন নম্বর দেবে। চলতি মাস থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।জানা যায়, সম্প্রতি এনবিআরের আয়কর শাখা থেকে মাঠপর্যায়ের কর অফিসগুলোকে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বিদ্যমান জরিপ দলগুলো পুনর্গঠন এবং অক্টোবরে জরিপ কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, সারাদেশে এনবিআরের প্রতিটি কর অঞ্চলে গঠিত হবে ১০ সদস্যের চারটি জরিপ দল। কর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, আনসার এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী (কমপক্ষে একজন নারী) প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে, যারা জরিপ দলকে সহায়তা করবে। অভ্যন্তরীণ জরিপের অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন, রাজউক ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। পরে তাদের নামে টিআইএন ইস্যু করে কর আদায়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।

এ বিষয়ে আয়কর বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশে করোনভাইরাস শনাক্তের পর গত মার্চ থেকে সমীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সাধারণত রাজস্ব বোর্ড জরিপের মাধ্যমে নতুন করদাতাদের সন্ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এ বছর সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, জুলাইয়ে করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর ডোর টু ডোর জরিপের কাজ স্থগিত করা হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তে ডোর টু ডোর জরিপকাজ স্থগিত করার পাশাপাশি আগের বছরের জরিপের ফল বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনবিআর প্রযুক্তিনির্ভর অভ্যন্তরীণ জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং নতুন করদাতাদের শনাক্ত করার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করবেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে উদ্বুদ্ধকরণের সময় নেই। এখন প্রয়োজন বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

Tag :

শেয়ার করুন

মাঠে নামছে এনবিআর।

আপডেট টাইম : ০৪:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

৭১: মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে রাজস্ব আদায়ে কাক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ের চিত্র সে বার্তাই দিচ্ছে। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সে (ভ্যাট) প্রবৃদ্ধি মাইনাস ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। এমন প্রেক্ষাপটে এনবিআর করজাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পূরণ করতে চায়। এ জন্য এনবিআর মাঠে নামাচ্ছে ১২০টি জরিপ টিম। এ টিমের সদস্যরা নতুন করদাতাদের শনাক্তের পাশাপাশি দীর্ঘদিন কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদেরও করের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এনবিআর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, প্রতিবছরই অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আহরণে ধীরগতি থাকে। তবে এ বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এ গতি আরও কমেছে। বর্তমানে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে দেশে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এনবিআর করজাল বিস্তৃতির মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার পাশাপাশি বাইরে জরিপ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। মাঠের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা বজায় রেখে সমীক্ষা চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন নতুন ব্যক্তিকে আয়কর জালের আওতায় আনতে মাঠে নামছে এনবিআরের জরিপ টিম। এ টিমের সদস্যরা বাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও অফিসে গিয়ে করযোগ্য ব্যক্তিদের শনাক্ত ও টিআইএন নম্বর দেবে। চলতি মাস থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।জানা যায়, সম্প্রতি এনবিআরের আয়কর শাখা থেকে মাঠপর্যায়ের কর অফিসগুলোকে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বিদ্যমান জরিপ দলগুলো পুনর্গঠন এবং অক্টোবরে জরিপ কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, সারাদেশে এনবিআরের প্রতিটি কর অঞ্চলে গঠিত হবে ১০ সদস্যের চারটি জরিপ দল। কর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, আনসার এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী (কমপক্ষে একজন নারী) প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে, যারা জরিপ দলকে সহায়তা করবে। অভ্যন্তরীণ জরিপের অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন, রাজউক ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। পরে তাদের নামে টিআইএন ইস্যু করে কর আদায়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।

এ বিষয়ে আয়কর বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশে করোনভাইরাস শনাক্তের পর গত মার্চ থেকে সমীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সাধারণত রাজস্ব বোর্ড জরিপের মাধ্যমে নতুন করদাতাদের সন্ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এ বছর সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, জুলাইয়ে করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর ডোর টু ডোর জরিপের কাজ স্থগিত করা হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তে ডোর টু ডোর জরিপকাজ স্থগিত করার পাশাপাশি আগের বছরের জরিপের ফল বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনবিআর প্রযুক্তিনির্ভর অভ্যন্তরীণ জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং নতুন করদাতাদের শনাক্ত করার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করবেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে উদ্বুদ্ধকরণের সময় নেই। এখন প্রয়োজন বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব।