ঢাকা ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর কখনও ডিগ্রি পাস করা হবে না মিন্নির

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৪:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০
  • / 83

৭১: আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বয়স সবে ২০’র কোঠায়। এর মধ্যে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেয়ে থানা হাজতে অবস্থান করছেন তিনি।

এই মামলায় মোট ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রয়েছে মিন্নিও।

আর এই আদেশের ফলে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছেছেন মিন্নি। তিনি নিজেও জানেন না আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন কিনা। আসলেও সেই সময় ও সুযোগ পুনরায় হবে কিনা!

এদিকে চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয় মিন্নির ডিগ্রি পরীক্ষার রেজাল্ট। যেখানে সাত বিষয়ের চারটিতেই ফেল করেছেন তিনি।

সেই রেজাল্টে মিন্নি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ে পেয়েছেন ডি গ্রেড। রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম পত্রে পেয়েছেন সি গ্রেড। ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রে পান সি গ্রেড। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র, ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র, অর্থনীতি প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্রে পাস করেননি।

ওইসময় অবশ্য এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেনে কিশোর বলেছিলেন, মিন্নি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে পারেনি। তার যে অবস্থা তাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভবও নয়।

ওইসময় কিশোর এও আশা প্রকাশ করেছিলেন, আগামীবার অবশ্যই আমার মেয়ে ভালো করবে। তবে সেই ভালো করা আর হলো কই? মিন্নি এরই মধ্যে ফাঁসির আদেশ পেয়ে থানা হাজতে অবস্থান করছেন।

ফলে ভবিষ্যতে আর কখনো তার ডিগ্রি পাস করা হবে কিনা; তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।

তবে এক হিসাবে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে শতাধিক নারীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর বেরিয়ে গেছে। কেউ কেউ মারা গেছে, কারো কারো আপিলে শাস্তি কমেছে। আর মিন্নির ক্ষেত্রে যদি শাস্তি কমে; সেক্ষেত্রে হয়ত ডিগ্রি পাস করতে পারেন তিনি।

এদিকে কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারগুলোতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নারীদের মধ্যে কেউ কেউ ১০-১৫ বছর ধরে কনডেম সেলের বাসিন্দা। দেশে বহু পুরুষ আসামির ফাঁসি কার্যকর হলেও কোনো নারী আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ডিগ্রি পাস করা মিন্নির জন্য অত্যন্ত কঠিন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাঙ ‘বন্ড গ্রুপ’। পরে বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রিফাত।

মামলার স্বাক্ষী থেকে পুলিশি তদন্তে আসামি হয়ে গেলেন রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। এরপর আবার হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি মেলে। তবে এবার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হলো তার বিরুদ্ধে। রায়ে মিন্নিকে এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আদালত। ফলে আবারো তার স্থান হলো কারাগারে। তাও আবার কনডেম সেলে।

Tag :

শেয়ার করুন

আর কখনও ডিগ্রি পাস করা হবে না মিন্নির

আপডেট টাইম : ০৫:০৪:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

৭১: আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বয়স সবে ২০’র কোঠায়। এর মধ্যে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেয়ে থানা হাজতে অবস্থান করছেন তিনি।

এই মামলায় মোট ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রয়েছে মিন্নিও।

আর এই আদেশের ফলে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছেছেন মিন্নি। তিনি নিজেও জানেন না আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন কিনা। আসলেও সেই সময় ও সুযোগ পুনরায় হবে কিনা!

এদিকে চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয় মিন্নির ডিগ্রি পরীক্ষার রেজাল্ট। যেখানে সাত বিষয়ের চারটিতেই ফেল করেছেন তিনি।

সেই রেজাল্টে মিন্নি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ে পেয়েছেন ডি গ্রেড। রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম পত্রে পেয়েছেন সি গ্রেড। ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রে পান সি গ্রেড। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র, ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র, অর্থনীতি প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্রে পাস করেননি।

ওইসময় অবশ্য এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেনে কিশোর বলেছিলেন, মিন্নি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে পারেনি। তার যে অবস্থা তাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভবও নয়।

ওইসময় কিশোর এও আশা প্রকাশ করেছিলেন, আগামীবার অবশ্যই আমার মেয়ে ভালো করবে। তবে সেই ভালো করা আর হলো কই? মিন্নি এরই মধ্যে ফাঁসির আদেশ পেয়ে থানা হাজতে অবস্থান করছেন।

ফলে ভবিষ্যতে আর কখনো তার ডিগ্রি পাস করা হবে কিনা; তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।

তবে এক হিসাবে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে শতাধিক নারীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর বেরিয়ে গেছে। কেউ কেউ মারা গেছে, কারো কারো আপিলে শাস্তি কমেছে। আর মিন্নির ক্ষেত্রে যদি শাস্তি কমে; সেক্ষেত্রে হয়ত ডিগ্রি পাস করতে পারেন তিনি।

এদিকে কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারগুলোতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নারীদের মধ্যে কেউ কেউ ১০-১৫ বছর ধরে কনডেম সেলের বাসিন্দা। দেশে বহু পুরুষ আসামির ফাঁসি কার্যকর হলেও কোনো নারী আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ডিগ্রি পাস করা মিন্নির জন্য অত্যন্ত কঠিন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাঙ ‘বন্ড গ্রুপ’। পরে বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রিফাত।

মামলার স্বাক্ষী থেকে পুলিশি তদন্তে আসামি হয়ে গেলেন রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। এরপর আবার হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি মেলে। তবে এবার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হলো তার বিরুদ্ধে। রায়ে মিন্নিকে এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আদালত। ফলে আবারো তার স্থান হলো কারাগারে। তাও আবার কনডেম সেলে।