১০ দিনের রিমান্ডে সম্রাট
- আপডেট টাইম : ০৯:২৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৯
- / 106
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে রমনা থানার অস্ত্র ও মাদক আইনের আলাদা দুই মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে যুবলীগের আরেক বহিষ্কৃত নেতা ও সম্রাটের ঘনিষ্ঠ এনামুল হক আরমানকে শুধু মাদক মামলায় ৫ দিন রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জাল হোসেন আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
আসামি সম্রাট ও আরমানকে বলা মঙ্গলবার কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকার আদালতে আনা হয়। রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। পরে বেলা পৌনে ১টার দিকে তাদের হাতকড়া লগিয়ে আদালতের এজলাস কক্ষে তোলা হয়। লোহার তৈরি আসামির কাঠগড়ায় ঢুকিয়ে দিয়ে তালা দেয়া হয়। এ সময় দু‘জনের হাতেই ছিল হাতকড়া। তখন এই তারা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। শুনানির সময় সম্রাটের হাতে পরানো হাতকড়া খুলে দিতে আদালতের কাছে আবেদন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারক এ বিষয়ে কোন আদেশ দেননি। এর আগে সম্রাটকে ঢাকার সিএমএম আদালতে রিমান্ড শুনানির জন্য হাজির করার খবরে সকাল থেকে আদালত পাড়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় আদালতপাড়ার ফুটপাতের দোকানপাট। নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশ সাধারণ কয়েকজনকে তল্লাশি করে। এছাড়া সিএমএম আদালতের মধ্যে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। আইনজীবী ছাড়া কাউকে সিএমএম আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
এদিক সম্রাট দেখার জন্য সকাল থেকে নেতাকর্মীরা ভিড় করতে থাকেন আদালতপাড়ায়। আদালতের ফটকের বাইরে ও জনসন রোডে জটলা করে তারা স্লোগান তোলেন, ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’। এছাড়া তারা বিভিন্ন সেøøাগান দিতে থাকেন সম্রাটের মুক্তির জন্য। সম্রাটকে আদালতে হাজির করার আগে নেতাকর্মীদের আদালতের সামনের রাস্তা থেকে বের করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সম্রাটের মুক্তির জন্য দফায় দফায় সেøাগান দিতে থাকেন। সম্রাটের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট মুক্তি পরিষদের আদালতপাড়ার দেয়ালে অনেক পোস্টার লাগানো দেখা গেছে। এসব পোস্টারে লেখা, ‘সম্রাট খুবই অসুস্থ, মানবতার জননী তাকে বাঁচান’, ‘সম্রাটের হাতে হাতকড়া রাজনীতিবিদরা চরম লজ্জিত।’
অন্যদিকে আদালতে হাজির করার পর সম্রাটকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। আদালতে থাকাকালীন তাকে কয়েক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে টিস্যু দিয়ে তাকে মুখ মুছতে দেখা গেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্রাট ও তার সহোযোগী অরমানকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাহফুজুল হক ভূঞা। এছাড়া অস্ত্র আইনের মামলায় শুধু সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। পরে আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ৯ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ৯ অক্টোবর সম্রাট অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসায় থাকায় তাকে আদালতে হাজির করায় ১৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
মঙ্গলবার প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু, একই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল ও এপিপি আজাদ রহমান। অন্যদিকে আসামির পক্ষে শুনানি করতে গাজী জিল্লুর রহমান, আবদুল কাদেরসহ প্রায় ২৫ জনের মতো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মাদক মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর কাকরাইলে সম্রাটের কার্যালয় থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, চার প্যাকেট তাস ও ১ হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি সম্রাট। প্রাথমিক তদন্তে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত মর্মে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আরমান সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অবৈধ মাদকের জোগানদাতা। তারা পরস্পর যোগসাজশে মাদক সংরক্ষণ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামিরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ মাদক ব?্যবসা, জুয়া ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। তাই আসমিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
অস্ত্র আইনের মামলায় রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আটক করা হয়। আটকের সময় আরমান মাতাল থাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কাকরাইলের অফিসে আরও মাদকদ্রব্য ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ তার সহযোগীরা অবস্থান করছে। ওই সংবাদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে বেলা ১টার দিকে কাকরাইল অফিসে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। সম্রাটের বেডরুমের জাজিমের ওপর তোষকের নিচ থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি ম্যাগাজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। রুম থেকে দুটি ইলেকট্রিক শক মেশিন ও দুটি লাঠি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রের কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই অসাামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার এক সহযোগী যুবলীগের সহ-সভাপতি আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে তাদের ঢাকায় আনা হয়। এরপর র্যাব সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সম্রাটের কার্যালয়ে ক্যাঙবগারুর দুটি চামড়া, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র পাওয়া যায়। এ ঘটনায় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেদিন তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়।