মালিককে বাঁচাতে প্রভাবশালীদের ফোনের পর ফোন
- আপডেট টাইম : ০৫:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 77
৭১: গুলশানের হর্স অ্যান্ড হর্স রেস্টুরেন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ-বিয়ার উদ্ধারের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিক মেহেরীন সারা মনসুরকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তবে গ্রেফতার এড়াতে ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ। বাড়িতেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে মেহেরীনকে বাঁচাতে প্রভাবশালী মহল থেকে নানামুখী তদবির অব্যাহত আছে। তাকে যাতে গ্রেফতার করা না হয় সে জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিয়ত ফোন আসছে। যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার এড়াতে চাইছেন মেহরীন। কিন্তু বাস্তবে নারকোটিক্স কর্মকর্তারা এসব তদবিরকে পাত্তা দিতে মোটেও রাজি নন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে- আইন অনুযায়ী মাদক মামলার এক নম্বর আসামিকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মোহাম্মদপুর সার্কেলের ইন্সপেক্টর সাজেদুল আলম বলেন, ‘হর্স অ্যান্ড হর্স রেস্টুরেন্টের মালিক মামলার এক নম্বর আসামি। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। এছাড়া উদ্ধারকৃত মদ-বিয়ারের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর অবৈধ মদের উৎস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’ ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানে হর্স অ্যান্ড হর্স নামের অভিজাত রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশি মদ-বিয়ার ও শিশা সেবনের হুক্কা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রেস্টুরেন্টের দুই কর্মচারী মোহাম্মদ মনির ও সরোয়ারকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অভিযানের পর গুলশান থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার ১ নম্বর আসামি রেস্টুরেন্টের মালিক মেহরীন সারা মনসুর।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হর্স অ্যান্ড হর্স রেস্টুরেন্টে অবৈধ মদ-বিয়ার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শাফিউল্লাহ আল মনির নামের এক প্রতারক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে তিনি বার লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। তবে এর সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।
এরপর হর্স অ্যান্ড হর্স রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে যৌথ ব্যবসায়িক চুক্তিতে বার লাইসেন্স ভাড়াও দেন তিনি। কিন্তু আইন অনুযায়ী বার লাইসেন্স ভাড়া দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। আইনকানুন যথাযথভাবে যাচাই না করে মনিরের ফাঁদে পড়ে অনেকটা ফেঁসে গেছেন রেস্টুরেন্ট মালিক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক বার লাইসেন্স নিয়েছেন শাফিউল্লাহ আল মনির।
বারের লাইসেন্স পেতে সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে তিনি নারকোটিক্স কর্মকর্তাদের চাপে রাখেন। এমনকি নিজেকে এক উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেও পরিচয় দেন। কথায় কথায় তিনি বলতেন, সরকারের উপর মহলে তার হট কানেকশন রয়েছে। চাপের মুখে মনিরের দাখিলকৃত কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। জালিয়াতির বিষয়টি উদ্ঘাটিত হওয়ায় মনিরের নামে ইস্যুকৃত দুটি বার লাইসেন্সই এখন বাতিল করতে যাচ্ছে নারকোটিক্স।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাফিউল্লাহ আল মনির প্রতারণা ও চেক জালিয়াতির মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর ও গুলশান থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বার লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার নামে বহু লোকের কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি বেশ কয়েকজনকে হত্যার হুমকিও দেন। আইনগত সহায়তা চেয়ে ভুক্তভোগীদের বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে রাজধানীর একাধিক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। শাফিউল্লাহ আল মনির ইতিপূর্বেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফির মামলাও রয়েছে। তবে সূত্র বলছে, সম্প্রতি তার পারিবারিক ও প্রভাবশালী ব্যবসায়িক একটি প্রতিপক্ষও বিশেষ কারণে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।