ঢাকা ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশে নারী পাচারে জড়িত অপু বিশ্বাসের ম্যানেজারও

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:২৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / 92

৭১: দুবাইয়ে নারী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগের তীর এবার চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফার গৌতমের দিকে। দুবাইয়ে নৃত্যশিল্পীদের পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অন্তত দুই আসামির জবানবন্দিতে গৌতমের নাম উঠে এসেছে। তার পুরো নাম গৌতম সাহা।

জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পী ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর পাচারে জড়িত অনেকের নামই বেরিয়ে আসছে। দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খান, তার ভাই নাজিম এবং এরশাদের কাছে নৃত্যশিল্পীদের তুলে দিতেন গৌতম। তিনি শোবিজ পাড়ায় অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে পরিচিত।

এদিকে অপু বিশ্বাস জানান, তিনি চলচ্চিত্রে অনেকের সঙ্গে কাজ করলেও গৌতম নামে তার কোনো ম্যানেজার নেই, কখনও ছিলও না। অবশ্য কোরিওগ্রাফার গৌতমসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনে গৌতম নামের বেশ কয়েকজনকে চেনেন তিনি।

তবে চলচ্চিত্র সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পাচারে অভিযুক্ত গৌতমই অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার।

গৌতম দাবি করেন, কাজের ক্ষেত্রে ইভান শাহরিয়ার সোহাগসহ অনেককে চিনলেও দুবাইয়ে কোনো নৃত্যশিল্পীকে তিনি পাঠাননি। তা ছাড়া তিনি যতবার বিদেশ গেছেন, তা রেকর্ড রয়েছে। মানব পাচার মামলায় গ্রেপ্তার একাধিক আসামি তার নাম জানিয়েছেন জানালে তিনি তড়িঘড়ি ফোনটি কেটে দেন। পরে কয়েকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইল ফোন ব্যস্ত দেখা যায়।

সিআইডি জানায়, গত জুলাই মাসে দুবাইয়ে বাংলাদেশি আজম খানের মালিকানাধীন ড্যান্স বার থেকে পাচার হওয়া একাধিক নারীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর দুবাই পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আজম খান ও তার চার সহযোগীকে। তাদের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা হয়। সর্বশেষ ওই মামলায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত আজম খান ছাড়াও তার এজেন্ট ইয়াসিন ও নির্মল সরকার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর ইয়াসিন ও নির্মল সরকারের জবানবন্দিতে গৌতমের নাম উঠে আসে।

নির্মল সরকার সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খানের ভাই নাজিম এক দিন তার ড্যান্স একাডেমিতে যান। সেখানে মেয়েদের নাচ দেখে তিনি সন্তুষ্ট হন।

নির্মল সরকার তাকে জানান, নায়িকা অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার গৌতম ছাড়াও আক্তার, সোহাগ, অপূর্ব তাকে আর্টিস্ট সরবরাহ করেন।

পাচারের মূল হোতা আজম খান জবানবন্দিতে বলেছেন, লালবাগের স্বপন, বংশালের আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়না, আলামিন ওরফে ডায়মন্ড, চট্টগ্রামের মাহফুজ ও ময়মনসিংহের অনিক তাকে মেয়ে সংগ্রহের কাজে সাহায্য করে। তার দুই ভাই এরশাদ, আজমও বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়ে সংগ্রহ করত। বাড্ডার সজীব ও ময়মনসিংহের অনিকেরও দুবাইয়ে ড্যান্স বার রয়েছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের চক্রটি মূলত গায়েহলুদ, বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নৃত্যশিল্পীদের টার্গেট করত। এজন্য দেশে বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাব ও একাডেমিতে তাদের নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে। তারা দেশের বেশ কয়েকজন কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পীর মাধ্যমে কিশোরী ও তরুণী নৃত্যশিল্পীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে দুবাইয়ে নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করত।

Tag :

শেয়ার করুন

বিদেশে নারী পাচারে জড়িত অপু বিশ্বাসের ম্যানেজারও

আপডেট টাইম : ০৫:২৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

৭১: দুবাইয়ে নারী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগের তীর এবার চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফার গৌতমের দিকে। দুবাইয়ে নৃত্যশিল্পীদের পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অন্তত দুই আসামির জবানবন্দিতে গৌতমের নাম উঠে এসেছে। তার পুরো নাম গৌতম সাহা।

জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পী ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর পাচারে জড়িত অনেকের নামই বেরিয়ে আসছে। দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খান, তার ভাই নাজিম এবং এরশাদের কাছে নৃত্যশিল্পীদের তুলে দিতেন গৌতম। তিনি শোবিজ পাড়ায় অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে পরিচিত।

এদিকে অপু বিশ্বাস জানান, তিনি চলচ্চিত্রে অনেকের সঙ্গে কাজ করলেও গৌতম নামে তার কোনো ম্যানেজার নেই, কখনও ছিলও না। অবশ্য কোরিওগ্রাফার গৌতমসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনে গৌতম নামের বেশ কয়েকজনকে চেনেন তিনি।

তবে চলচ্চিত্র সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পাচারে অভিযুক্ত গৌতমই অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার।

গৌতম দাবি করেন, কাজের ক্ষেত্রে ইভান শাহরিয়ার সোহাগসহ অনেককে চিনলেও দুবাইয়ে কোনো নৃত্যশিল্পীকে তিনি পাঠাননি। তা ছাড়া তিনি যতবার বিদেশ গেছেন, তা রেকর্ড রয়েছে। মানব পাচার মামলায় গ্রেপ্তার একাধিক আসামি তার নাম জানিয়েছেন জানালে তিনি তড়িঘড়ি ফোনটি কেটে দেন। পরে কয়েকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইল ফোন ব্যস্ত দেখা যায়।

সিআইডি জানায়, গত জুলাই মাসে দুবাইয়ে বাংলাদেশি আজম খানের মালিকানাধীন ড্যান্স বার থেকে পাচার হওয়া একাধিক নারীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর দুবাই পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আজম খান ও তার চার সহযোগীকে। তাদের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা হয়। সর্বশেষ ওই মামলায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত আজম খান ছাড়াও তার এজেন্ট ইয়াসিন ও নির্মল সরকার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর ইয়াসিন ও নির্মল সরকারের জবানবন্দিতে গৌতমের নাম উঠে আসে।

নির্মল সরকার সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খানের ভাই নাজিম এক দিন তার ড্যান্স একাডেমিতে যান। সেখানে মেয়েদের নাচ দেখে তিনি সন্তুষ্ট হন।

নির্মল সরকার তাকে জানান, নায়িকা অপু বিশ্বাসের ম্যানেজার গৌতম ছাড়াও আক্তার, সোহাগ, অপূর্ব তাকে আর্টিস্ট সরবরাহ করেন।

পাচারের মূল হোতা আজম খান জবানবন্দিতে বলেছেন, লালবাগের স্বপন, বংশালের আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়না, আলামিন ওরফে ডায়মন্ড, চট্টগ্রামের মাহফুজ ও ময়মনসিংহের অনিক তাকে মেয়ে সংগ্রহের কাজে সাহায্য করে। তার দুই ভাই এরশাদ, আজমও বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়ে সংগ্রহ করত। বাড্ডার সজীব ও ময়মনসিংহের অনিকেরও দুবাইয়ে ড্যান্স বার রয়েছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দুবাইয়ে ড্যান্স বারের মালিক আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের চক্রটি মূলত গায়েহলুদ, বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নৃত্যশিল্পীদের টার্গেট করত। এজন্য দেশে বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাব ও একাডেমিতে তাদের নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে। তারা দেশের বেশ কয়েকজন কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পীর মাধ্যমে কিশোরী ও তরুণী নৃত্যশিল্পীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে দুবাইয়ে নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করত।