ঢাকা ১১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেরানীগঞ্জের সংগ্রামী নারী সখিনার জীবন গল্প

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৪:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০
  • / 88

৭১: যে রাধে সে চুলও বাঁধে- এই বিখ্যাত উক্তিটি প্রমাণিত! পুরুষ যা পারে নারী তা পারেনা এটাও মিথ্যা প্রমাণিত করেছে কিছু নারী। বর্তমানে নারীরা সর্বজয়ী। সংসার যুদ্ধে জয়ী নারীরা পিছিয়ে নেই লেখাপড়া কিংবা চাকরীর ক্ষেত্রেও।

সারাদিন বাইরে কাজ করে এসে বাচ্চা সামলানো, রান্নাবান্না, সংসারের যাবতীয় কাজ নিপুন হাতে করা নারীদের পক্ষেই সম্ভব। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখনও কিছু কাজ যেনো শুধুই পুরুষের জন্য, এর মাঝে রিক্সা চালানো অন্যতম।

এক নারী রিক্সা চালাচ্ছে! এই দৃশ্যে আপনার চোখ আটকে যাবে। অনেকে নাক ছিটকাবে, কেউবা আবার ভয়ে রিক্সায় উঠতেও গড়িমসি করবে। তবে এর ধার ধারে না রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার আনারপুর গ্রামের সখিনা বেগম। উপজেলার রামেরকান্দা-রোহিতপুর, কলাতিয়া, শাক্তা, সোনাকান্দা, লাখিরচর এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান তিন চাকার যান রিক্সা নিয়ে।

বিয়ে পাগল স্বামী চারটি বিয়ে করে আছে অজানা দেশে। দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন কেরানীগঞ্জ উপজেলার রোহিতপুর ইউনিয়নের আনারপুর গ্রামে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও সুখে নেই সে। স্কুলে পড়া ছোট মেয়েকে নিয়েও আছেন দুশ্চিন্তায়। রিক্সা চালক মায়ের মেয়ের বিয়ে হবেতো!

এতো কাজ থাকতে কেনো রিক্সা চালান জানতে চাইলে এই সংগ্রামী নারী জানান, মেরুদন্ডে সমস্যার কারণে ভাড়ি কোন কাজ করতে পারেন না। তাছাড়া বাসাবাড়িতে বা গার্মেন্টসে কাজ করলে মাসে ৩/৪ হাজার টাকার বেশি থাকেনা। রিক্সা চালিয়ে এখন প্রতিদিন পাঁচ-ছয়’শ টাকা ইনকাম হয়। তাই কম কষ্টে অধিক উপার্জনের জন্যই অটোরিকশা চালাই।

ভবিষ্যতে তার ইচ্ছা নিজের এলাকা রামেরকান্দা বা তার আশপাশের এলাকায় নিজস্ব একটি বাড়ি হবে, ছোট মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো জায়গায় বিয়ে দিবেন, বড় মেয়েটার সুখের জন্য কিছু একটা করে দিবে। তবে এর আগে কিস্তিতে কেনা রিক্সার ঋনটা পরিশোধ করাই তার প্রথম চাওয়া।

বাস্তবতাই মানুষকে অনেক শিক্ষা দেয়। ছোটবেলায় দুঃখ , কষ্ট পেয়ে নজরুল ইসলাম হয়েছিলেন দুখু মিয়া তথা বিদ্রোহী কবি। আর অভাবের সংসারে দুমুঠো অন্ন যোগাতে সখিনা হয়েছেন তিন চাকার ড্রাইভার তথা রিক্সা চালক। কাজ না পেয়ে বহু নারী আজ যেখানে নানা অপকর্মে করে বেড়াচ্ছে, সেখানে সখিনা রিক্সা চালিয়ে তাদের কে বার্তা দিচ্ছেন কোন কর্মই ছোট না যদি তা অপকর্ম না হয়।

চরম দারিদ্রতাই যখন মানুষকে স্বাবলম্বী হতে শিক্ষা দেয়, সমাজের কোন বাধাই তখন তাদের আটকে রাখার ক্ষমতা রাখেনা। অদম্য মানসিক শক্তি , আত্মবিশ্বাস , কঠোর পরিশ্রম দিয়ে যেকোন মানুষ পৌঁছে যেতে পারে তার লক্ষ্যমাত্রার চূড়ান্ত শিখরে। রিক্সা চালক সখিনা আপার গল্প আমাদের এই শিক্ষাই দেয়।

Tag :

শেয়ার করুন

কেরানীগঞ্জের সংগ্রামী নারী সখিনার জীবন গল্প

আপডেট টাইম : ০৪:৩৪:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০

৭১: যে রাধে সে চুলও বাঁধে- এই বিখ্যাত উক্তিটি প্রমাণিত! পুরুষ যা পারে নারী তা পারেনা এটাও মিথ্যা প্রমাণিত করেছে কিছু নারী। বর্তমানে নারীরা সর্বজয়ী। সংসার যুদ্ধে জয়ী নারীরা পিছিয়ে নেই লেখাপড়া কিংবা চাকরীর ক্ষেত্রেও।

সারাদিন বাইরে কাজ করে এসে বাচ্চা সামলানো, রান্নাবান্না, সংসারের যাবতীয় কাজ নিপুন হাতে করা নারীদের পক্ষেই সম্ভব। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখনও কিছু কাজ যেনো শুধুই পুরুষের জন্য, এর মাঝে রিক্সা চালানো অন্যতম।

এক নারী রিক্সা চালাচ্ছে! এই দৃশ্যে আপনার চোখ আটকে যাবে। অনেকে নাক ছিটকাবে, কেউবা আবার ভয়ে রিক্সায় উঠতেও গড়িমসি করবে। তবে এর ধার ধারে না রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার আনারপুর গ্রামের সখিনা বেগম। উপজেলার রামেরকান্দা-রোহিতপুর, কলাতিয়া, শাক্তা, সোনাকান্দা, লাখিরচর এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান তিন চাকার যান রিক্সা নিয়ে।

বিয়ে পাগল স্বামী চারটি বিয়ে করে আছে অজানা দেশে। দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন কেরানীগঞ্জ উপজেলার রোহিতপুর ইউনিয়নের আনারপুর গ্রামে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও সুখে নেই সে। স্কুলে পড়া ছোট মেয়েকে নিয়েও আছেন দুশ্চিন্তায়। রিক্সা চালক মায়ের মেয়ের বিয়ে হবেতো!

এতো কাজ থাকতে কেনো রিক্সা চালান জানতে চাইলে এই সংগ্রামী নারী জানান, মেরুদন্ডে সমস্যার কারণে ভাড়ি কোন কাজ করতে পারেন না। তাছাড়া বাসাবাড়িতে বা গার্মেন্টসে কাজ করলে মাসে ৩/৪ হাজার টাকার বেশি থাকেনা। রিক্সা চালিয়ে এখন প্রতিদিন পাঁচ-ছয়’শ টাকা ইনকাম হয়। তাই কম কষ্টে অধিক উপার্জনের জন্যই অটোরিকশা চালাই।

ভবিষ্যতে তার ইচ্ছা নিজের এলাকা রামেরকান্দা বা তার আশপাশের এলাকায় নিজস্ব একটি বাড়ি হবে, ছোট মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো জায়গায় বিয়ে দিবেন, বড় মেয়েটার সুখের জন্য কিছু একটা করে দিবে। তবে এর আগে কিস্তিতে কেনা রিক্সার ঋনটা পরিশোধ করাই তার প্রথম চাওয়া।

বাস্তবতাই মানুষকে অনেক শিক্ষা দেয়। ছোটবেলায় দুঃখ , কষ্ট পেয়ে নজরুল ইসলাম হয়েছিলেন দুখু মিয়া তথা বিদ্রোহী কবি। আর অভাবের সংসারে দুমুঠো অন্ন যোগাতে সখিনা হয়েছেন তিন চাকার ড্রাইভার তথা রিক্সা চালক। কাজ না পেয়ে বহু নারী আজ যেখানে নানা অপকর্মে করে বেড়াচ্ছে, সেখানে সখিনা রিক্সা চালিয়ে তাদের কে বার্তা দিচ্ছেন কোন কর্মই ছোট না যদি তা অপকর্ম না হয়।

চরম দারিদ্রতাই যখন মানুষকে স্বাবলম্বী হতে শিক্ষা দেয়, সমাজের কোন বাধাই তখন তাদের আটকে রাখার ক্ষমতা রাখেনা। অদম্য মানসিক শক্তি , আত্মবিশ্বাস , কঠোর পরিশ্রম দিয়ে যেকোন মানুষ পৌঁছে যেতে পারে তার লক্ষ্যমাত্রার চূড়ান্ত শিখরে। রিক্সা চালক সখিনা আপার গল্প আমাদের এই শিক্ষাই দেয়।