ঢাকা ০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিল্লিকে থামাতে গালওয়ান-ছক চীনের

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
  • / 121

প্রায় ষাট বছর গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি বেইজিং। হঠাৎ কেন তা দখলের জন্য হাজার হাজার লালফৌজের সমাবেশ এবং হিংস্র আক্রমণ? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকতারা দেখছেন, স্পর্শকাতর তিব্বত-জিংঝিয়াং হাইওয়ে থেকে ভারতীয় সেনাকে দূরে রাখতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছিল।

সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, পরস্পরের চোখে চোখ রাখা অবস্থান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সমঝোতা সাময়িক। আপাতত সেনা পিছিয়ে গেলেও ভারত-চীন সম্পর্কে একটি স্থায়ী ক্ষত হয়ে দাঁড়াল গালওয়ান।নয়াদিল্লিকে নিশানা করে আজই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, লাদাখে গত ১৫ জুন রাতের ঘটনা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। ইঙ্গিত স্পষ্ট, গালওয়ান উপত্যকাকে মে মাসের আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে ভারতকে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সত্তর বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে এই প্রথমবার বেইজিং দাবি করেছে, গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। উনিশ শতকে পশ্চিমের ভূপর্যটকদের গাইডের কাজ করা  গুলাম রসুল গালওয়ানের নামে এই উপত্যকার নামকরণ। পর্যটকেরা এখান থেকে যেতেন তিব্বত এবং জিংঝিয়াং-এর উইঘুর স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকায়। কয়েক দশকে তিব্বতি এবং উইঘুরদের আন্দোলন নির্দয় ভাবে দমন করেছে চীন— এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের। এই জিংঝিয়াং এবং তিব্বতের মধ্যে হাইওয়ে বানানো হয় ১৯৫১ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে যা আকসাই চীনের মধ্য দিয়ে গিয়ে গেছে।

গত বছরের আগস্টে নরেন্দ্র মোদি সরকার লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার পর নড়েচড়ে বসে ব্ইজিং। তাদের কাছে এই এর একটাই অর্থ, আকসাই চীন দখলের জন্য পদক্ষেপ করছে নয়াদিল্লি। চীনের পক্ষ থেকে সমালোচনা শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তড়িঘড়ি বেইজিং গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, চীনের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত ভূখণ্ড আগ্রাসনের কোন পরিকল্পনা নয়াদিল্লির নেই। তবে তাতে কাজ হয়নি। বেইজিংয়ের বক্তব্য, চীনের সার্বভৌমত্বকে খাটো করার জন্য ভারত ঘরোয়া আইন পরিবর্তন করেছে।

এরপরে পূর্ব লাদাখে ভারতের রাস্তা এবং পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টিকে আটকানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করে বেইজিং। কারণ, তারা মনে করে, লাদাখকে নিয়ে ভারতের ঘোষণা এবং রাস্তা-পরিকাঠামো তৈরির সংযোগ রয়েছে। গালওয়ান দখলের সিদ্ধান্ত তখনই নেয়া হয় যাতে ভারতীয় সেনাকে আকসাই চীন এবং জিংঝিয়াং-তিব্বত হাইওয়ে থেকে দূরে রাখা যায়।

পাশাপাশি, হিমাচলে তিব্বতের নির্বাসিত সরকার, দলাইলামা এবং ভারতে বসবাসকারী তিব্বতিদের নিয়ে চীনের আতঙ্ক রয়েছে। কূটনীতিকেরাও মনে করেন, ভারতও সুবিধামত তিব্বতি তাস খেলে থাকে চীনের বিরুদ্ধে। তবে শুধু তিব্বতই মাথাব্যথার কারণ নয়। উইঘুর মুসলমানদের দমন করছে চীনের সরকার— এই অভিযোগে সরব আমেরিকাও। আর বেজিং যখন গালওয়ান দখলের পরিকল্পনা করেছে, তখন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সখ্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও নজরে রেখেছে তারা। এই সব হিসেব থেকেই গালওয়ানের স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করার পরিকল্পনা।

বিডি প্রতিদিন

Tag :

শেয়ার করুন

দিল্লিকে থামাতে গালওয়ান-ছক চীনের

আপডেট টাইম : ০৯:৩৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০

প্রায় ষাট বছর গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি বেইজিং। হঠাৎ কেন তা দখলের জন্য হাজার হাজার লালফৌজের সমাবেশ এবং হিংস্র আক্রমণ? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকতারা দেখছেন, স্পর্শকাতর তিব্বত-জিংঝিয়াং হাইওয়ে থেকে ভারতীয় সেনাকে দূরে রাখতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছিল।

সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, পরস্পরের চোখে চোখ রাখা অবস্থান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সমঝোতা সাময়িক। আপাতত সেনা পিছিয়ে গেলেও ভারত-চীন সম্পর্কে একটি স্থায়ী ক্ষত হয়ে দাঁড়াল গালওয়ান।নয়াদিল্লিকে নিশানা করে আজই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, লাদাখে গত ১৫ জুন রাতের ঘটনা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। ইঙ্গিত স্পষ্ট, গালওয়ান উপত্যকাকে মে মাসের আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে ভারতকে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সত্তর বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে এই প্রথমবার বেইজিং দাবি করেছে, গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। উনিশ শতকে পশ্চিমের ভূপর্যটকদের গাইডের কাজ করা  গুলাম রসুল গালওয়ানের নামে এই উপত্যকার নামকরণ। পর্যটকেরা এখান থেকে যেতেন তিব্বত এবং জিংঝিয়াং-এর উইঘুর স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকায়। কয়েক দশকে তিব্বতি এবং উইঘুরদের আন্দোলন নির্দয় ভাবে দমন করেছে চীন— এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের। এই জিংঝিয়াং এবং তিব্বতের মধ্যে হাইওয়ে বানানো হয় ১৯৫১ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে যা আকসাই চীনের মধ্য দিয়ে গিয়ে গেছে।

গত বছরের আগস্টে নরেন্দ্র মোদি সরকার লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার পর নড়েচড়ে বসে ব্ইজিং। তাদের কাছে এই এর একটাই অর্থ, আকসাই চীন দখলের জন্য পদক্ষেপ করছে নয়াদিল্লি। চীনের পক্ষ থেকে সমালোচনা শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তড়িঘড়ি বেইজিং গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, চীনের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত ভূখণ্ড আগ্রাসনের কোন পরিকল্পনা নয়াদিল্লির নেই। তবে তাতে কাজ হয়নি। বেইজিংয়ের বক্তব্য, চীনের সার্বভৌমত্বকে খাটো করার জন্য ভারত ঘরোয়া আইন পরিবর্তন করেছে।

এরপরে পূর্ব লাদাখে ভারতের রাস্তা এবং পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টিকে আটকানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করে বেইজিং। কারণ, তারা মনে করে, লাদাখকে নিয়ে ভারতের ঘোষণা এবং রাস্তা-পরিকাঠামো তৈরির সংযোগ রয়েছে। গালওয়ান দখলের সিদ্ধান্ত তখনই নেয়া হয় যাতে ভারতীয় সেনাকে আকসাই চীন এবং জিংঝিয়াং-তিব্বত হাইওয়ে থেকে দূরে রাখা যায়।

পাশাপাশি, হিমাচলে তিব্বতের নির্বাসিত সরকার, দলাইলামা এবং ভারতে বসবাসকারী তিব্বতিদের নিয়ে চীনের আতঙ্ক রয়েছে। কূটনীতিকেরাও মনে করেন, ভারতও সুবিধামত তিব্বতি তাস খেলে থাকে চীনের বিরুদ্ধে। তবে শুধু তিব্বতই মাথাব্যথার কারণ নয়। উইঘুর মুসলমানদের দমন করছে চীনের সরকার— এই অভিযোগে সরব আমেরিকাও। আর বেজিং যখন গালওয়ান দখলের পরিকল্পনা করেছে, তখন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সখ্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও নজরে রেখেছে তারা। এই সব হিসেব থেকেই গালওয়ানের স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করার পরিকল্পনা।

বিডি প্রতিদিন