পুঁজিবাজারে নতুন গুজব ‘বাইব্যাক’
- আপডেট টাইম : ০২:৩০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৯
- / 106
পুঁজিবাজারে কয়েক দিন থেকে ইস্যু মূল্য বা অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা কম্পানির শেয়ার দাম বাড়ছে। লোকসান বা উৎপাদনে না থাকা কম্পানির শেয়ারে হঠাৎ করেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে গেছে। কম দামের শেয়ার কিনতে চাপ থাকায় সার্কিট ব্রেকারে গিয়ে কয়েকটি কম্পানির লেনদেন থেমেছে।
বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইস্যু মূল্যের নিচে থাকা কম্পানির শেয়ার কিনতে বাইব্যাক নিয়ম চালু হচ্ছে, এমন তথ্যে তাঁরা শেয়ার কিনছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা বা যোগাযোগ করে এমন তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজার একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যার ফায়দা লুটছে কারসাজিচক্র। কৌশলে ‘বাইব্যাক’ আইন হচ্ছে এমন তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার দাম প্রভাবিত করা হচ্ছে। আর অজ্ঞতার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যাচাই-বাছাই ছাড়াই গুজবের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
মতিঝিলে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক অনেক কম। বাজার গতিশীল না থাকায় স্বল্প পরিসরে শেয়ার লেনদেন চলছে। তবে বড় কম্পানির শেয়ারে আগ্রহের চেয়ে অভিহিত মূল্য বা কম দামের শেয়ারে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বেশি।
ছোট ও কম দামের শেয়ার কেনার আগ্রহের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা জানায়, তারা শুনেছে ইস্যু মূল্যের নিচে থাকা কম্পানির শেয়ার কিনতে বাইব্যাক আইন করা হচ্ছে। এই আইন হলে ওই কম্পানি ইস্যু মূল্যে ওই শেয়ার কিনতে বাধ্য হবে। কাজেই এখন যেসব কম্পানির শেয়ার ইস্যু মূল্যের অনেক নিচে নেমেছে, তা কিনলে তারা লাভবান হবে এমনটা ভাবছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ঈদের ছুটির পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হলে কম দামের শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইতে শতকরা হিসাবে দাম বৃদ্ধিতে শীর্ষ ২০টির মধ্যে ১৩টিই অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু নিচে। ৩-১০ টাকা দামের এই কম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনোটি সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দামেও লেনদেন হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের বাজেট ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে বড় দরপতন শুরু হয়। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপি প্রদান করে ১৫টি দাবি জানায়। এই দাবির মধ্যে একটি বাইব্যাক আইনের দাবি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে বাইব্যাক আইন হবে নাকি সংশোধনীর মাধ্যমে বাইব্যাক নীতিমালা যুক্ত হবে, সেটা ঠিক হয়নি। এখন বাইব্যাক বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই। হঠাৎ হঠাৎ একটি গোষ্ঠী বাজারে ছড়ায় আর বিনিয়োগকারীরা সে বিষয়ে প্রভাবিত হয়। সঠিক তথ্য না জেনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বাজারে গুজব ছড়ানো হয়েছে বাইব্যাক আইন হচ্ছে। আসলে এই তথ্যের কোনো সত্যতা আছে কি না জানি না; কিন্তু বিনিয়োগকারীরা কম দামের ছোট ছোট কম্পানির শেয়ার কিনছে। তারা মনে করছে, বাইব্যাক আইন হলে ইস্যু মূল্যে কম্পানি শেয়ার কিনবে।’
গতকালের বাজার : সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএসইতে সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেন, আর সিএসইতে সূচকের সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা, আর সূচক বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেন শুরুর পর শেয়ার কেনার চাপে মূল্যসূচক বৃদ্ধি পায়। এতে দিন শেষে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে। দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৩৬ পয়েন্ট। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৫০ পয়েন্ট ও ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য বাজার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর সূচক বেড়েছে ৩৪ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ২১ লাখ টাকা আর সূচক কমেছিল ৩ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া ২৬৫ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪০টির, দাম কমেছে ৮৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯ কম্পানির শেয়ার দাম।