৩৫৪০ রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুতি
- আপডেট টাইম : ০৪:০৭:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৯
- / 106
৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুতি চলছে। সংস্কার করা হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফের প্রত্যাবাসন ঘাট। এ ছাড়া প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য শিবিরের কর্মকর্তার (সিআইসি) কার্যালয়ের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে কিছু ঘর। প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো কোনো রোহিঙ্গার মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
গতকাল রোববার সকালে টেকনাফের কেরনতলী প্রত্যাবাসন ঘাট ও নয়াপাড়ার জাদিমোরা শালবন শিবির ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে এক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়। প্রত্যাবাসন ঘিরে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
নানা প্রস্তুতি
টেকনাফের নাফ নদীর তীর ঘেঁষে সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীন কেরনতলী (নয়াপাড়া) প্রত্যাবাসন ঘাট। ঘাটটি চারদিকে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, টিনের তৈরি আধাপাকা সারি সারি ঘর। এক লাইনে ১১টি করে তিন লাইনে ৩৩টি কক্ষ। বড় একটি পানির ট্যাংক, চারটি শৌচাগার। প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরতের আগে প্রথমে এখানে রাখা হবে। প্রত্যাবাসনকারী রোহিঙ্গাদের দেখভালে যুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য আলাদাভাবে চারটি ঘরও রয়েছে। ট্রলারযোগে প্রত্যাবাসনের জন্য নদীতে স্থাপিত হয়েছে লম্বা কাঠের জেটি। প্রত্যাবাসন কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে আনসার ব্যাটালিয়ানের একটি দল। ঘাটে কয়েকজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে।
প্রত্যাবাসন ঘাটের দায়িত্বে থাকা প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের প্রতিনিধি মোহাম্মদ শহিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হওয়ার কথা রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখানে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন কাজ-কর্ম চলছে।
এখানে কর্মরত শ্রমিক হামিদুল রহমান ও মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘শিবিরের কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রত্যাবাসন ঘাটে নতুন করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। প্রতিদিন অফিসের লোকজন তদারক করছেন।’
এ ছাড়া টেকনাফের নয়াপাড়া জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে সিআইসি কার্যালয়ের পাশেও তড়িঘড়ি করে প্লাস্টিকের ছোট ছোট চারটি ও লম্বা ত্রিপল এবং বাশের ঘর বানানো হচ্ছে। এসব ঘরে প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা আলোচনায় বসবেন বলে জানা গেছে।
জাদিমোরা শালবন শিবিরের নারী চেয়ারম্যান রমিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। কেননা, শিবিরের সিআইসি কার্যালয়ে পাশে এনজিওরা তাড়াহুড়া করে ছোট ছোট ঘর তৈরি করছে। এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে কানাঘুষা চলছে।’
তিনি জানান, গতকাল সিআইসির সঙ্গে কিছু রোহিঙ্গার বৈঠক হয়েছে। এতে সিআইসি ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে বলে নিশ্চিত করেছেন।
জাদিমোরা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক, সেটা আমরা চাই। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার ও নিজ দেশে নাগরিকত্ব দিলে ফেরত যেতে প্রস্তুত। হঠাৎ করে প্রত্যাবাসনের খবরে রোহিঙ্গারা উদ্বিগ্ন। কীভাবে কী হচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
জানতে চাইলে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।
গত বছরের অক্টোবর মাসে এই প্রত্যাবাসন ঘাট নির্মাণ করা হয়। একই বছরের ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আন্দোলনের মুখে তা স্থগিত হয়।