ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ
- আপডেট টাইম : ১০:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০১৯
- / 108
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার জন্য কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় যানবাহন সংকট ও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের শিকার হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অতিরিক্ত চাপ সামলে নিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার সকাল থেকেই মহাসড়কে তীব্র এ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। এতে গাড়ি চলাচলে কিছুটা ধীরগতির পাশাপাশি কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজটও লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ।
দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া, উলাইল, গেন্ডা, সাভার রেডিওকলোনী, সিএন্ডবি, বিশমাইল, নবীনগর, নয়ারহাট, ঢুলিভিটা, নবীনগর-চন্দ্র মহাসড়কের বাইপাইল, ইপিজেড, ভলিভদ্র বাজার, জিরানী ও চন্দ্রা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের ইউনিক জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো এবং আশুলিয়ার বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতিটি পয়েন্টেই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত চাপের কারণে এবং রাস্তার গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা ও লেন না মেনে যে যার মতো চলাচল করায় কোথাও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে সাভারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনটি মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজট রয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
চালক ও যাত্রীরা জানায়, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মহাসড়কগুলো যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিতে মহাসড়কে যানবাহনেরও সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশী। এছাড়া যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এসব জায়গায় খালি পায়ে চলাচল করাটা দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে। ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আবুল হোসেন বলেন, ‘ঈদে একটু গাড়ির চাপ বেশী হবেই। কিন্তু এবার আগে ভাগেই গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। তাছাড়া পল্লীবিদ্যুতের কাজের জন্য রাস্তার পাশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় সেসব গর্তে পানি জমে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করে জানিয়ে খুব দ্রুত যানজট নিরসন করছে।’
এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পরিবার পরিজন ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি সাধারন যাত্রীদেরও গণপরিবহনের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে দেখা যায়। পরিবহন সংকটের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চালক ও তার সহযোগীরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের অভিযোগ, নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে ৫০ টাকার ভাড়া সাড়ে ৩শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গাবতলী থেকে সাভার ২৫ টাকার ভাড়া ১শ টাকা, সাভার থেকে নবীনগর ১০ টাকার ভাড়া ৫০ থেকে ১শ টাকা ও আশুলিয়া থেকে বাইপাইল ১৫ টাকার ভাড়া ১শ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় গণপরিবন গুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমান দোকানপাট পরিচালনা যেন মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, ‘ঈদের ছুটি পেয়ে পোশাক শ্রমিকরা বাড়িতে যেতে শুরু করেছেন। শুক্রবার হওয়ায় গাড়ির চাপ একটু বেশি। বৃহস্পতিবার রাতে সড়কে যে যানজট হয়েছিলো শুক্রবার ভোরে তা ঠিক হয়ে গেছে। তবে সকাল থেকে আবারও গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। পুলিশ যানজট নিরসনের ২৪ ঘণ্টা সড়কে কাজ করছেন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি যানচলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ কমতে থাকায় শুক্রবার সকালে সড়কে স্বাভাবিক অবস্থা লক্ষ করা যায়। কিন্তু শুক্রবার দুপুরের পর থেকে যানজটের মাত্রা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইত্তেফাক/নূহু