কে না চায় সাশ্রয়
- আপডেট টাইম : ০৯:০৪:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ মার্চ ২০২০
- / 131
নিউজ লাইট ৭১: কে না চায় সাশ্রয়! মোটরবাইক কেনার আগে কমবেশি সব ক্রেতাই জেনে নিতে চাই, পছন্দের বাইকটির মাইলেজ কেমন অর্থাৎ প্রতি লিটার পেট্রোল বা অকটেনে এটি কত কিলোমিটার যাবে?
ভারতে তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের বাইকগুলো কম তেলে বেশি চলার সুনাম আছে । টিভিএস, বাজাজ ও হিরো ব্রান্ডের বাইকে মাইলেজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এসব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যারা রাইড শেয়ার করেন তাদের জন্য এসব বাইক বিশেষ উপযোগী।
বাংলাদেশের বাজারে কম তেলে বেশি চলে এমন ১০টি বাইকের কথা জেনে নেওয়া যাক।
১. রানার বুলেট ১০০
স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির একটি বাইক। এই স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির বাইকের ডিস্প্লেসিমেন্ট ইঞ্জিন ১০০.৫৪ সিসি যার সাথে আছে একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪টি স্ট্রোক, একটি এয়ার কোল্ড এবং পেট্রোল ইঞ্জিন।
রানার বুলেট ১০০ বাইকের সর্বোচ্চ স্পিড হচ্ছে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টাই এবং এর মাইলেজ ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটারে। এই বাইকের ব্রেকের ধরণ এই বাইকের সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ধরণের ব্রেক রয়েছে। বাইকটির দাম ৯৫ হাজার টাকা।
২. হিরো সুপার স্প্লেন্ডার দাম
হিরো সুপার স্প্লেন্ডার মোটরসাইকেলে ৪টি স্ট্রোক, একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এবং একটি ওএইচসি ধরণের ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়েছে। আর এর ১২৪.৭ সিসি ডিস্প্লেসিমেন্ট ইঞ্জিনে মোটরসাইকেলটি চালাতে বাইকার বেশ উপভোগ করবে। এছাড়াও হিরো সুপার স্প্লেন্ডার মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের সর্বচ্চ পাওয়ার হচ্ছে ৯.১২ পিএস এবং ৭০০০ আরপিএম এবং ইঞ্জিনের সর্বচ্চ তোরকিউ হচ্ছে ১০.৩৫ এনএম এবং ৪০০০ আরপিএম। এছাড়াও ইঞ্জিনে আরো সংযুক্ত করা হয়েছে একটি এ এম আই ধরণের ইগনিশন সিস্টেম এবং বাইকটি দ্রুত চালু করার জন্য দুটি বাইক চালু করার মাধ্যম একটি ইলেক্ট্রিক এবং একটি কিক।
হিরো সুপার স্প্লেন্ডার মোটরসাইকেলটির স্পিড খুব একটা বেশি না হলেও এটি মাইলিয়েজের দিক থেকে বেশ ভাল। আর এই হিরো সুপার স্প্লেন্ডার আপনাকে প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম। এছাড়াও এই মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটারে এটি ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম। এর দাম বর্তমানে ৯৫ হাজার টাকা।
৩. বাজাজ ডিসকভার ১০০ সিসি
বাজাজের ডিসকভার সিরিজের মোটরসাইকেল হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সফল এবং জনপ্রিয় মোটরসাইকেল বাজাজের ১০০ সিসির ডিসকভার মোটরসাইকেলটি। একটি এয়ার কোল্ড কুলিং সিস্টেম, টুইন স্পার্ক এবং একটি ডিটি এস আই ধরণের ইঞ্জিন রয়েছে এই মোটরসাইকেলটিতে। আর এই স্ট্যান্ডার্ড বাজাজ ডিসকভার ১০০ ৪জি মোটরসাইকেলটির ডিস্প্লেসিমেন্ট ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়েছে ৯৪.৩৮ সিসি যা বেশ ভাল মানের। এছাড়াও এই ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ পাওয়ার হচ্ছে ৭.৭ পিএস এবং ৭৫০০ আরপিএম আর ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ তোরকিউ হচ্ছে ৭.৮৫ এনএম এবং ৫০০০ আরপিএম।
বাজাজ ডিসকভার ১০০ ৪জি মোটরসাইকেলটিতে বেশ ভাল মানের স্পিড এবং মাইলিয়েজ রয়েছে। বাজাজ ডিসকভার ১০০ ৪জি মোটরসাইকেলটি প্রতি ঘন্টায় সর্বচ্চ ৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটতে সক্ষম যা একটি স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির মোটরসাইকেলের জন্য মোটামুটি ভাল স্পিড। এবং বাজাজ ডিসকভার ১০০ ৪জি মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটারে ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম। তবে এ বাইকের দাম একটু বেশি, ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
৪.হিরো স্প্লেন্ডার আইস্মার্ট
বাইকটিতে আছে ১১০ সিসির ফুয়েল সাশ্রয়ী ইঞ্জিন। এতে এয়ার কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটিতে ডিজিটাল সিডিআই-অ্যাডভান্সড মাইক্রোপ্রসেসর ইগনিশন সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে।
হিরো মটর করপোরেশন দাবি করছে এই বাইকটি এক লিটার জ্বালানি পুড়িয়ে হাইওয়েতে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে পারবে। শহরে মিলবে ৫৫ থেকে ৬০ মাইলেজ। বাংলাদেশের বাজারে এর বর্তমান মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ৯৯০ টাকা।
৫ . টিভিএস মেট্রো প্লাস ১১০ সিসি
১১০ সিসি শক্তিশালী ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি বাইক হল টিভিএস মেট্রো প্লাস । টিভিএস মেট্রো প্লাস এই মোটরসাইকেলে রয়েছে একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪টি স্ট্রোক, ডিওএইচসিএবং একটি এয়ার কোল্ড স্পার্ক ইগনিশন সিস্টেম সমৃদ্ধ ইঞ্জিন। আর এই বাইকের ডিসপ্লেসিমেন্ট ইঞ্জিন হচ্ছে ১০৯.৭ সিসি যা বেশ ভাল মানের ইঞ্জিন। এছাড়াও বাইকের সর্বচ্চ ইঞ্জিন পাওয়ার হচ্ছে ৮.৪ পিএস এবং ৭৫০০ আরপিএম, এবং এর সর্বচ্চ তরকিউ হচ্ছে ৮.৭ এনএম এবং ৫০০০ আরপিএম। এছাড়াও ইঞ্জিনটিতে আরো সংযুক্ত করা হয়েছে একটি পেপার ফিল্টার এলিমেন্ট ধরণের অইল ফিল্টার এবং কেহিন এভি ধরণের কার্বুরেটর।
টিভিএস মেট্রো প্লাস এই মোটরসাইকেল আপনাকে ভাল মানের স্পিড এবং মাইলিয়েজ দেবে কারণ এই মোটরসাইকেলটি প্রতি ঘন্টায় সর্বচ্চ ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি বেগে ছুটতে সক্ষম। এবং এই বাইকটি প্রতি লিটারে ৮৬ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলিয়েজ যেতে সক্ষম যা খুব ভাল মানের মাইলিয়েজ এ ধরণের স্ট্যান্ডার্ড বাইকের জন্য।
টিভিএস মেট্রো প্লাস মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশের বাজার অনুসারে এর বর্তমান বাজার মূল্য মাত্র ১,১৪,৯০০ টাকা।
৬ . টিভিএস মেট্রো ইএস
টিভিএস মেট্রো ইএস এই মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের মধ্যে রয়েছে ৪টি স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার এবং একটি এয়ার কোল্ড। আর এই বাইকের ৯৯.৭ সিসি ইঞ্জিন বেশ ভাল মানের যা এই বাইকের প্রতি আপনাকে আগ্রহী করে তুলবে সহজেই। টিভিএস মেট্রো ইএস এই বাইকের ইঞ্জিনের সর্বচ্চ পাওয়ার হচ্ছে ৭.৫ বিএইচপি এবং ৭৫০০ আরপিএম এবং বাইকের সর্বচ্চ তোরকিউ হচ্ছে ৭.৫ এনএম এবং ৫০০০ আরপিএম যেগুলো এই বাইকের ইঞ্জিনের শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
স্পিড এর দিক থেকে এই মোটরসাইকেলটি একটু দূর্বল হলেও মাইলিয়েজের দিক থেকে মোটামুটি ভাল এই টিভিএস মেট্রো ইএস মোটরসাইকেলটি। কারণ এই মোটরসাইকেলটি প্রতি ঘন্টায় সর্বচ্চ ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে সক্ষম। এবং এই মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারবে যা দূরের পথে ভ্রমনের জন্য অনেক কার্যকর। টিভিএস মেট্রো ইএস মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশের বাজার অনুসারে এর বর্তমান বাজার মূল্য ১,০৪,৯০০ টাকা।
৭. হিরো এইচএফ ডিলাক্স
হিরো এইচএফ ডিলাক্স এর ইঞ্জিন ১০০ সিসি কমিউটিং ফোকাসড ইঞ্জিন । বাইকটিতে খুব কম পাওয়ারে ভাল ফুয়েল এফেন্সি এবং টর্ক পাওয়া যায় । ইঞ্জিনটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক এবং এয়ার কুল্ড । ইঞ্জিনটি প্রায় ৮.৩৬ পিএস পাওয়ার এবং ৮.৫এনএম টর্ক দিতে সক্ষম । ইঞ্জিনে চারটি গিয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা আছে এবং মানুয়্যাল কিক এবং ইলেক্ট্রিক সিস্টেম দ্বারা স্টার্ট করা যাবে ।
হিরো এইচএফ ডিলাক্স বাইকের সর্বোচ্চ স্পিড ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টাই এবং এর মাইলিয়েজ ৬০ কিলোমিটার প্রতি লিটারে। এই বাইকের সামনে এবং পেছনে উভয় দিকের ড্রাম ধরণের ব্রেক রয়েছে। এটি বর্তমানে সাশ্রয়ী দাম ৮৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
৮ . কিওয়ে আরকেএস ১০০
একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪টি স্ট্রোক এবং দুটি ভাল্ভ ধরণের ইঞ্জিন রয়েছে এই কিওয়ে আরকেএস ১০০ মোটরসাইকেলটিতে। আর এই স্ট্যান্ডার্ড ধরণের মোটরসাইকেলটির ডিস্প্লেসিমেন্ট ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়েছে ৯৯.৭ সিসি যা মোটামুটি ভাল মানের ইঞ্জিন। এছাড়াও এই ইঞ্জিনের সর্বচ্চ পাওয়ার হচ্ছে ৫.৫ কিলোওয়াট এবং ৭৫০০ আরপিএম আর ইঞ্জিনের সর্বচ্চ তোরকিউ হচ্ছে ৭.৬ এনএম এবং ৫৫০০ আরপিএম। এছাড়াও ইঞ্জিনে আরো আছে একটি সিডি আই ইগনিশন সিস্টেম এবং দুটি মোটরসাইকেল চালু করার মাধ্যম একটি ইলেক্ট্রিক এবং একটি কিক।
কিওয়ে আরকেএস ১০০ মোটরসাইকেলটিতে বেশ ভাল মানের স্পিড এবং মাইলিয়েজ রয়েছে। কিওয়ে আরকেএস ১০০ মোটরসাইকেলটি প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটতে সক্ষম যা একটি ১০০ সিসির স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির মোটরসাইকেলের জন্য বেশ ভাল। অন্যদিকে এই কিওয়ে আরকেএস ১০০ মোটরসাইকেল প্রতি লিটারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যায়। কিওয়ে আরকেএস ১০০ মোটরবাইকের বর্তমান বাজার মূল্য ১,০৪,৯০০ টাকা।
৯. বাজাজ প্লাটিনা ইএস
বাংলাদেশের বাইকপ্রেমিদের কাছে অন্যতম পছন্দের মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হচ্ছে বাজাজ। আর বাজাজ মোটরসাইকেল কোম্পানির স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেলের মধ্যে বাজাজের প্লাটিনা সিরিজের মোটরসাইকেলগুলো বেশ সফল এবং জনপ্রিয়। বাজাজ প্লাটিনা ১০০ ইএস মোটরসাইকেলটি স্পিড এবং মাইলিয়েজের দিক থেকেও বেশ ভাল কেননা এটি আপনাকে প্রতি ঘন্টায় ৯০(ইন্টারনালি টেস্টেড) কিলোমিটার পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্পিডে বাইক চালানোর সুযোগ করে দেয়। কারণ এর সর্বোচ্চ স্পিড ৯০ (ইন্টারনালি টেস্টেড) কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় । এছাড়াও এই মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটারে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম। এর দাম ৯৮ হাজার টাকা
১০. হিরো স্প্লেন্ডার প্রো
এ বছরের জানুয়ারিতে হিরো স্প্লেন্ডার প্রো বাংলাদেশের বাজারে আসে। আর হিরো ব্র্যান্ডের মধ্যে স্প্লেন্ডারই সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বাইক। এই বাইকে শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে, যেটা আবার এই সেগমেন্টের সবচেয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী। এর ১০২ সিসির ইঞ্জিনটি ৮.১ বিএইচপি উৎপন্ন করতে পারে। এই বাইকটিতে সামনের নতুন কাউল, স্টাইলিশ স্পিডোমিটার, সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, প্রশস্থ ও বড়ো সিট, পিছনের ক্যারিয়ার, আকর্ষণীয় টেইল লাইট ও ফুয়েল ট্যাঙ্কের মনকাড়া গ্রাফিক্সসহ কয়েকটি নতুন কিছু স্টাইল যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া এতে সেলফ ও কিক স্টার্টার রয়েছে। এর দাম ৯৫ হাজার টাকা।
বাংলাদেশে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে মোটরবাইকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে এসেছে বাড়তি আয়ের সুযোগ। সরকারী পলিসি এবং মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলোর প্রচেষ্টায় মোটরসাইকেলের দাম দিনে দিনে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। আর তাই মোটরসাইকেল এখন বিলাসদ্রব্য নয় বরং প্রয়োজনীয়।