ঢাকা ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিমান্ডে তথ্য দিচ্ছে পাপিয়া-সুমন

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০২০
  • / 123

নিউজ লাইট ৭১: অপকীর্তি করে র‌্যাবের হাতে আটক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ রিমান্ডে তার বখে যাওয়া জীবনের কথা বলতে শুরু করেছেন। মদ-বিয়ার পান ও মিথ-সিসা সেবনে তার সহযোগীদের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন। ওয়েস্টিন হোটেল, ফার্মগেটের বাসায় বসেও তিনি নেশায় বুঁদ হতেন। হোটেল স্যুট বা বাসায় প্রায় রাতেই তার পার্টি হতো। সেখানে অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা তরুণীদের সঙ্গে ডিসকোতে অংশ নিতেন। থার্টি ফাস্টসহ বিশেষ দিনগুলোতে হতো স্পেশাল পার্টি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তর বিভাগের হেফাজতে ১৫ দিনের রিমান্ডে আছেন পাপিয়া-সুমন দম্পতি। গতকাল সোমবার ছিল রিমান্ডের ৬ষ্ঠ দিন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এদিকে মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ পর্যন্ত খোঁজখবর করে প্রাথমিকভাবে পাপিয়ার মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণও পাওয়া গেছে। পাপিয়ার স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদের তথ্য জানতে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ৮/১০ দিনের মধ্য সমস্ত তথ্য হাতে পাওয়া যাবে। সমস্ত তথ্য হাতে পাওয়ার পর মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করবে সিআইডি। পাপিয়ার মানিলন্ডারিং এবং অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, পাপিয়ার সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখছে দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর শামীমা নূর পাপিয়া সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে ওয়েস্টিন হোটেলে গতকাল চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ওয়েস্টিন হোটেলে পাপিয়া এ পর্যন্ত কতদিন অবস্থান করেছেনে এবং সেখানে কত টাকা বিল দিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাপিয়ার কাছে আসা ব্যক্তি ও হোটেলে অবস্থানকারীদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনে ওই সময়ের ভিডিও রেকর্ডও চাওয়া হতে পারে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে রবিবার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে।

অপরদিকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত পাপিয়ার সঙ্গে অনেক মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরও সখ্যের তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি বেশ কয়েক দফা কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে তারকা হোটেল ও রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল ও সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন পাপিয়া।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জালমুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।

শনিবার রাতে নরসিংদীর বাসায় এবং রবিবার ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়া ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত রওশনস ডমিনো রিলিভো নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে র‌্যাব।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে রবিবার দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। জালটাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কাজ, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন তিন মামলায় মোট ১৫ দিন এবং সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিন করে রিমান্ডে আছেন।

Tag :

শেয়ার করুন

রিমান্ডে তথ্য দিচ্ছে পাপিয়া-সুমন

আপডেট টাইম : ০৭:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০২০

নিউজ লাইট ৭১: অপকীর্তি করে র‌্যাবের হাতে আটক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ রিমান্ডে তার বখে যাওয়া জীবনের কথা বলতে শুরু করেছেন। মদ-বিয়ার পান ও মিথ-সিসা সেবনে তার সহযোগীদের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন। ওয়েস্টিন হোটেল, ফার্মগেটের বাসায় বসেও তিনি নেশায় বুঁদ হতেন। হোটেল স্যুট বা বাসায় প্রায় রাতেই তার পার্টি হতো। সেখানে অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা তরুণীদের সঙ্গে ডিসকোতে অংশ নিতেন। থার্টি ফাস্টসহ বিশেষ দিনগুলোতে হতো স্পেশাল পার্টি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তর বিভাগের হেফাজতে ১৫ দিনের রিমান্ডে আছেন পাপিয়া-সুমন দম্পতি। গতকাল সোমবার ছিল রিমান্ডের ৬ষ্ঠ দিন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এদিকে মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ পর্যন্ত খোঁজখবর করে প্রাথমিকভাবে পাপিয়ার মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণও পাওয়া গেছে। পাপিয়ার স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদের তথ্য জানতে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ৮/১০ দিনের মধ্য সমস্ত তথ্য হাতে পাওয়া যাবে। সমস্ত তথ্য হাতে পাওয়ার পর মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করবে সিআইডি। পাপিয়ার মানিলন্ডারিং এবং অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, পাপিয়ার সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখছে দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর শামীমা নূর পাপিয়া সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে ওয়েস্টিন হোটেলে গতকাল চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ওয়েস্টিন হোটেলে পাপিয়া এ পর্যন্ত কতদিন অবস্থান করেছেনে এবং সেখানে কত টাকা বিল দিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাপিয়ার কাছে আসা ব্যক্তি ও হোটেলে অবস্থানকারীদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনে ওই সময়ের ভিডিও রেকর্ডও চাওয়া হতে পারে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে রবিবার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে।

অপরদিকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত পাপিয়ার সঙ্গে অনেক মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরও সখ্যের তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি বেশ কয়েক দফা কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে তারকা হোটেল ও রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল ও সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন পাপিয়া।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জালমুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।

শনিবার রাতে নরসিংদীর বাসায় এবং রবিবার ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়া ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত রওশনস ডমিনো রিলিভো নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে র‌্যাব।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে রবিবার দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। জালটাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কাজ, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন তিন মামলায় মোট ১৫ দিন এবং সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিন করে রিমান্ডে আছেন।