সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ
- আপডেট টাইম : ০৯:৩১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ মার্চ ২০২০
- / 93
নিউজ লাইট ৭১: ক্রেডিটকার্ড ছাড়া অন্যসব খাতে ব্যাংক ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ হারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। আজ রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনটি শুনানির জন্য আগামীকাল সোমবার দিন ধার্য করেছেন।
রিটে সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত সার্কুলার স্থগিত চাওয়া হয়েছে। অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ তিনজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘ক্রেডিটকার্ড ছাড়া ব্যাংকের সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে’ এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে ব্যাংকভেদে উৎপাদন খাতে সুদহার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। ভোক্তা ও এসএমই ঋণের সুদহার আরও বেশি।
ওই প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, অশ্রেণিকৃত ঋণ-বিনিয়োগের ওপর সুদ-মুনাফা হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। কোনো ঋণ-বিনিয়োগের ওপর উল্লিখিতভাবে সুদ-মুনাফা হার ধার্য করার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ঋণ-বিনিয়োগ গ্রহীতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হন সেক্ষেত্রে যে সময়কালের জন্য খেলাপি হবে অর্থাৎ মেয়াদী ঋণ-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খেলাপি কিস্তি এবং চলতি মূলধন ঋণ-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মোট খেলাপি ঋণ-বিনিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ দুই শতাংশ হারে দণ্ড সুদ-অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে। বর্ণিত দণ্ডসুদ-অতিরিক্ত মুনাফা ব্যতিরেকে ঋণ-বিনিয়োগের ওপর অন্য কোনো সুদ-মুনাফা-দণ্ডসুদ-অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে না। চলতি বছর থেকে ব্যাংকের মোট ঋণ-বিনিয়োগ স্থিতির মধ্যে এসএমই’র ম্যানুফ্যাকচারিং খাতসহ শিল্প খাতে প্রদত্ত সব ঋণ-বিনিয়োগ স্থিতি অব্যবহিত পূর্ববর্তী তিন বছরের গড় হারের চেয়ে কোনোভাবেই কম হতে পারবে না। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের বিদ্যমান সর্বোচ্চ সুদ-মুনাফা হার ৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকের ঋণ-বিনিয়োগের উচ্চ সুদ-মুনাফা হার দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণ-বিনিয়োগের সুদ-মুনাফা হার উচ্চমাত্রার হলে সংশ্লিষ্ট শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এরফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনো কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় বিধায় সংশ্লিষ্ট ঋণ-বিনিয়োগ গ্রহীতারা যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ-বিনিয়োগ পরিশোধে সমর্থ হয় না। ব্যাংকিং খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
পরে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার দিয়ে বলেছে- ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৯ শতাংশের বেশি লোনের ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট নিতে পারবে না। মৌখিকভাবে বলেছিলো প্রতিষ্ঠানগুলো ৯ শতাংশের বেশি নিতে পারবে না, আর আমানতকারী যারা টাকা রাখেন তাদের ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে আমানতকারীদের বিষয়ে কিছু বলা নেই। কিন্তু সুদের হার ৬ শতাংশের কারণে এবং কমানোর কারণে ২ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কী পলিসি ডিসিশনের কারণে এটা করা হয়েছে সেটা জানতে আদালতের কাছে বক্তব্য তুলে ধরবো। সার্কুলারে শুধু ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কথা রয়েছে। অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কথা নাই। এখন তারা চাইলে যা ইচ্ছা ইন্টারেস্ট নিতে পারবে। শুধু ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান কেন, পলিসি ডিসিশনের ক্ষেত্রে সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, রিটে সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে সার্কুলারটি স্থগিত চেয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এসে বলুক কী কারণে সার্কুলারটি বৈধ।