ঢাকা ০১:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থানায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১২:১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০১৯
  • / 137

প্রতিকি ছবি

খুলনার রেলওয়ে থানার ওসি ও চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। তিনি বলেছেন, নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য আকুতি-মিনতি করেও তাদের মন গলাতে পারেননি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে সাংবাদিকদের কাছে সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে ওঠেন। ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য কিভাবে তাকে নির্যাতন করেছেন সে বিবরণ দেন তিনি।

এর আগে ৪ঠা আগস্ট রোববার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার আদালতেও ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দেন ওই নারী। ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি এ অভিযোগ করেন। আদালতের নির্দেশে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য রোববার রাতে ওই নারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে পরীক্ষা হয়নি। গতকাল সোমবার তাকে আবারো হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

বিকালে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনাটির তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া রেলওয়ের সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে সভাপতি ও ডিআইও-১ এর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) স. ম. কামাল হোসেন এবং দর্শনা রেলওয়ের ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ মো. বাহারুল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। 

ধর্ষিতা গৃহবধূর খালাতো ভাই জানান, গত শুক্রবার তার বোন (৩০) যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসেন। এদিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গণি পাঠান তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরো চার পুলিশ কর্মকর্তা (সদস্য) তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার ওই নারীকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর ওই নারী জিআরপি থানায় তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা তুলে ধরেন। এরপর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার আদালতে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তার বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। বাপের বাড়ি মহেশ্বরপাশা বাবুলের মোড় এলাকায়। বর্তমানে সে থাকে নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায়। তার ১০ বছরের একটি ছেলে (৭) ও আড়াই বছরের দু’টি মেয়ে রয়েছে। তাদের মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় এসেছেন বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। শুক্রবার আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠান তাকে তার রুমে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর এসআই গৌতম কুমার পালসহ চারজন পুলিশ সদস্য পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ মামলা দিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করে। 

তিনি আরো জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। তখন আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন। ওসি ওসমান গনি ও এসআই গৌতম কুমার পাল ছাড়া বাকি তিন পুলিশ সদস্যের নাম জানাতে পারেনি ভুক্তভোগীর পরিবার। ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানো ও জিআরপি পুলিশের চাঁদা দাবি প্রসঙ্গে গৃহবধূর ভাই জানান, আমাকে পুলিশ বলে, তোমার বোনকে মোবাইল চুরির জন্য ধরে নিয়ে আসছি। আমি বলেছি, স্যার আমার বোন তো এসব করে না। পুলিশ বলে, এই তুমি বেশি জানো? এই একে ধরো। বোনের সঙ্গে ভাইরেও লকআপে ভরো। আমি বলি- স্যার কি বলছেন? তিনি বলেন, এই বেশি কথা বলবি না। যা বাসা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আয়। আমি বলি, আমরা গরিব মানুষ এত টাকা পাবো কই? তিনি বলেন, টাকা পাবি কই আমি জানি না। তুই টাকা নিয়ে আয়। তা না হলে ওরে ছাড়বো না। 

এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত আমি ওইখানে বসে থাকি। আমাকে অনেক ভয়ভীতি দেখাইছে। ‘ফেনসি দিমু নয় বাবা দিয়া চালান দিয়া দিমু।’ যাও বাসায় যাও, ভালো লোক হয়ে থাকলে বাসায় যাও। আমি ভয়ে চলে আসছি। চলে আসার পর ভোর ৬টায় গেছি। যাওয়ার পরে বলে, এদিকে এসো, টাকা আনছো? আমি বলি স্যার আমরা গরিব মানুষ, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ঠিক আছে এখন ৭ বছর জেল খাটলে… এরপর আমাকে বলে এই ভোটার আইডি কার্ড ফটোকপি করে আনো। আমি আনছি, আনার পরে ওরা আমার ছোট বোনকে বের করেছে। আমাকে ফটোকপি আনতে দিয়ে ফেনসিডিল দিয়ে ওরে বের করছে। আমি বলি স্যার এই আনছি। এরপর আমার বোন আমারে জড়িয়ে ধরে বলে, ভাইয়া আমারে পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়েছে ব্যাগে। আমি বলি আমাকে ফটোকপি আনতে দিলেন, এখন পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়ে চালান দিলেন। এরপর পুলিশ বলে, ‘এই বেডা বেশি কথা কবি না। আমি তখন একা ছিলাম। ভয়ে আমি আর তখন কিছু বলিনি।’

এদিকে, পাকশী রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উল্লেখ করেন, বেনাপোল থেকে খুলনাগামী ৫৪ নং কমিউটার ট্রেন বগি নং-৫৪৮৭ এর ভেতর গৃহবধূর ভ্যানেটি ব্যাগের ভেতর থেকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় ২রা আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। যার মামলা নং-১। এ মামলায় তাকে ৩রা আগস্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলি আদালত খুলনায় প্রেরণ করা হয়। উক্ত আসামি ৪ঠা আগস্ট অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেন। এ সময় আসামি আদালতে খুলনা রেলওয়ের থানা হাজতে রেখে পুলিশ সংঘবদ্ধভাবে তাকে ধর্ষণ ও মারপিট করেছেন বলে আবেদন করেন। উক্ত আদালতে আসামি জামিনের শুনানিকালে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি সঠিক তথ্য উদ্‌ঘাটনের জন্য কুষ্টিয়া রেলওয়ের সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে সভাপতি ও ডিআইও-১ এর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) স. ম. কামাল হোসেন এবং দর্শনা রেলওয়ের ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ মো. বাহারুল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে বলে উক্ত আদেশে উল্লেখ করা হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আদালতের নির্দেশে গাইনি বিভাগের চিকিৎসকের মাধ্যমে ভিকটিমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তার রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করা হবে। 
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি পাঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে থানায় গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি থানায় আসার কথা বলে সাংবাদিকদের বসতে বলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের বলেন- আমার এই মুহূর্তে থানায় আসা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ফেনসিডিলসহ ওই গৃহবধূকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছি। পরে জানতে পারি বিচারকের কাছে আমাকেসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

Tag :

শেয়ার করুন

থানায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে

আপডেট টাইম : ১২:১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০১৯

খুলনার রেলওয়ে থানার ওসি ও চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। তিনি বলেছেন, নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য আকুতি-মিনতি করেও তাদের মন গলাতে পারেননি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে সাংবাদিকদের কাছে সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে ওঠেন। ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য কিভাবে তাকে নির্যাতন করেছেন সে বিবরণ দেন তিনি।

এর আগে ৪ঠা আগস্ট রোববার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার আদালতেও ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দেন ওই নারী। ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি এ অভিযোগ করেন। আদালতের নির্দেশে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য রোববার রাতে ওই নারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে পরীক্ষা হয়নি। গতকাল সোমবার তাকে আবারো হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

বিকালে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনাটির তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া রেলওয়ের সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে সভাপতি ও ডিআইও-১ এর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) স. ম. কামাল হোসেন এবং দর্শনা রেলওয়ের ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ মো. বাহারুল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। 

ধর্ষিতা গৃহবধূর খালাতো ভাই জানান, গত শুক্রবার তার বোন (৩০) যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসেন। এদিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গণি পাঠান তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরো চার পুলিশ কর্মকর্তা (সদস্য) তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার ওই নারীকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর ওই নারী জিআরপি থানায় তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা তুলে ধরেন। এরপর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার আদালতে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তার বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। বাপের বাড়ি মহেশ্বরপাশা বাবুলের মোড় এলাকায়। বর্তমানে সে থাকে নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায়। তার ১০ বছরের একটি ছেলে (৭) ও আড়াই বছরের দু’টি মেয়ে রয়েছে। তাদের মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় এসেছেন বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। শুক্রবার আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠান তাকে তার রুমে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর এসআই গৌতম কুমার পালসহ চারজন পুলিশ সদস্য পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ মামলা দিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করে। 

তিনি আরো জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। তখন আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন। ওসি ওসমান গনি ও এসআই গৌতম কুমার পাল ছাড়া বাকি তিন পুলিশ সদস্যের নাম জানাতে পারেনি ভুক্তভোগীর পরিবার। ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানো ও জিআরপি পুলিশের চাঁদা দাবি প্রসঙ্গে গৃহবধূর ভাই জানান, আমাকে পুলিশ বলে, তোমার বোনকে মোবাইল চুরির জন্য ধরে নিয়ে আসছি। আমি বলেছি, স্যার আমার বোন তো এসব করে না। পুলিশ বলে, এই তুমি বেশি জানো? এই একে ধরো। বোনের সঙ্গে ভাইরেও লকআপে ভরো। আমি বলি- স্যার কি বলছেন? তিনি বলেন, এই বেশি কথা বলবি না। যা বাসা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আয়। আমি বলি, আমরা গরিব মানুষ এত টাকা পাবো কই? তিনি বলেন, টাকা পাবি কই আমি জানি না। তুই টাকা নিয়ে আয়। তা না হলে ওরে ছাড়বো না। 

এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত আমি ওইখানে বসে থাকি। আমাকে অনেক ভয়ভীতি দেখাইছে। ‘ফেনসি দিমু নয় বাবা দিয়া চালান দিয়া দিমু।’ যাও বাসায় যাও, ভালো লোক হয়ে থাকলে বাসায় যাও। আমি ভয়ে চলে আসছি। চলে আসার পর ভোর ৬টায় গেছি। যাওয়ার পরে বলে, এদিকে এসো, টাকা আনছো? আমি বলি স্যার আমরা গরিব মানুষ, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ঠিক আছে এখন ৭ বছর জেল খাটলে… এরপর আমাকে বলে এই ভোটার আইডি কার্ড ফটোকপি করে আনো। আমি আনছি, আনার পরে ওরা আমার ছোট বোনকে বের করেছে। আমাকে ফটোকপি আনতে দিয়ে ফেনসিডিল দিয়ে ওরে বের করছে। আমি বলি স্যার এই আনছি। এরপর আমার বোন আমারে জড়িয়ে ধরে বলে, ভাইয়া আমারে পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়েছে ব্যাগে। আমি বলি আমাকে ফটোকপি আনতে দিলেন, এখন পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়ে চালান দিলেন। এরপর পুলিশ বলে, ‘এই বেডা বেশি কথা কবি না। আমি তখন একা ছিলাম। ভয়ে আমি আর তখন কিছু বলিনি।’

এদিকে, পাকশী রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উল্লেখ করেন, বেনাপোল থেকে খুলনাগামী ৫৪ নং কমিউটার ট্রেন বগি নং-৫৪৮৭ এর ভেতর গৃহবধূর ভ্যানেটি ব্যাগের ভেতর থেকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় ২রা আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। যার মামলা নং-১। এ মামলায় তাকে ৩রা আগস্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলি আদালত খুলনায় প্রেরণ করা হয়। উক্ত আসামি ৪ঠা আগস্ট অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেন। এ সময় আসামি আদালতে খুলনা রেলওয়ের থানা হাজতে রেখে পুলিশ সংঘবদ্ধভাবে তাকে ধর্ষণ ও মারপিট করেছেন বলে আবেদন করেন। উক্ত আদালতে আসামি জামিনের শুনানিকালে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি সঠিক তথ্য উদ্‌ঘাটনের জন্য কুষ্টিয়া রেলওয়ের সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে সভাপতি ও ডিআইও-১ এর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) স. ম. কামাল হোসেন এবং দর্শনা রেলওয়ের ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ মো. বাহারুল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে বলে উক্ত আদেশে উল্লেখ করা হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আদালতের নির্দেশে গাইনি বিভাগের চিকিৎসকের মাধ্যমে ভিকটিমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তার রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করা হবে। 
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি পাঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে থানায় গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি থানায় আসার কথা বলে সাংবাদিকদের বসতে বলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের বলেন- আমার এই মুহূর্তে থানায় আসা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ফেনসিডিলসহ ওই গৃহবধূকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছি। পরে জানতে পারি বিচারকের কাছে আমাকেসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।