জাল টাকার ছাপার কাজ আরো নিখুঁত করতে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ
- আপডেট টাইম : ০৭:১৪:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০
- / 109
নিউজ লাইট ৭১: সাধারণত উৎসবকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গেলেও একটি চক্র সারা বছরই জাল টাকা তৈরিতে তৎপর রয়েছেন। জাল টাকার ছাপার কাজ আরো নিখুঁত করতে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। কাগজ, জলছাপ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নকল স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় সব উপাদানও থাকছে তাতে। ফলে আসল টাকার মতো দেখতে এই জালটাকা প্রথম দেখায় চেনা যে কারো পক্ষেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রোবারী প্রিভেনশেন টিম বলছে, এ চক্রের মূল হোতা মো. কাউছার হামিদ খান (৪৫)। সম্প্রতি বাণিজ্যমেলায় ও আটরশির মাজারে ব্যাপক জাল টাকা ছড়িয়ে মানুষকে প্রতারিত করেছে চক্রটি। তিনি ছাড়াও আরো ১৩ জন কারবারি দেশজুড়ে জাল টাকার কারবার করছে। তারা হলো- ইমন, রাজশাহীর জামান, জাকির, সেলিম, হামিদ, শিহাব, হুমায়ুন কবীর, বিহারী সুমন, আমজাদ, সেলিম বেপারি, সাইফুল ওরফে রিকশা সাইফুল, খসরু ও সাগর। তাদের নেতৃত্বেই বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে কাজ করছে আরো শতাধিক জালকারবারি। সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রোবারী প্রিভেনশেন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. সোলায়মান মিয়ার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মো. কাওসারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা নিউজ লাইট ৭১ কে জানান, আমাদের কাছে তথ্য ছিল একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীত জাল টাকার ব্যবসা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করছিলাম। গত মঙ্গলবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, এ চক্র জালটাকার লেনদেন করতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কদমতলী থানাধীন মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের পূর্ব জুরাইন এলাকার ১১৯/২ সুফিয়া মঞ্জিল নামের একটি বাড়ির নিচে অভিযান চালাই। সে সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫-৬ জন পালানোর চেষ্টাকালে কাওসার ছাড়াও আরো দুজন মো. হেলাল উদ্দিন (৫০) ও বাবু শেখকে (৩৬) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। সে সময় তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার জালনোট উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ভবনের ৩য় তলার ভাড়াটিয়া এ চক্রের অপর সদস্য সাইদুর রহমান ওরফে সাইফুলের বাসায় তল্লাশি করে খড-৪৮৬০২৩০ সিরিজের আরো ৩০ লাখ টাকার জালনোট, একটি অ্যাপসন-এল ১৩ প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ ও জালটাকা তৈরির কাগজ উদ্ধার করা হয়। ওই বাসাতেই টাকা ছাপানো হতো।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আপন বড় ভাই হুমায়ুনের হাত ধরেই জাল টাকা তৈরির হাতেখড়ি হয় কাওসারের। এরপর থেকে প্রায় দেড় যুগ ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জাল টাকার ব্যবসার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৮টি মামলা। ৫ মাস আগেও জামিনে বেরিয়ে আবার শুরু করেন জাল টাকা তৈরির কাজ। ধরন পাল্টে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সফটওয়্যার ব্যবহার করে তার নেতৃত্বে তৈরি করা হচ্ছিল নিখুঁত জাল টাকা। যার বাসা থেকে জাল টাকা ও এসব সামগ্রী উদ্ধার করা হয় সেই পলাতক সাইফুল জাল টাকা তৈরির কাগজ, নিরাপত্তা সুতা ও কেমিক্যাল সংগ্রহ করে থাকে। আর সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিখুঁত টাকা ছাপার কাজ করে কাওসার। টাকা ছাপানোর কাগজ তারা নীলক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে। ১৫ হাজার টাকায় জাল মুদ্রা বানানোর সফটওয়্যারটি কেনা হয়েছিল। তিনি বলেন, উদ্বেগের বিষয় হলো, সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে ছাপা নিখুঁত হওয়ায় বোঝা দায় সেটি আসল না নকল। সাধারণত মেলা ও মাজারে নানা অনুষ্ঠান চলার সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে এ চক্রটি। জাল ১ লাখ টাকা তারা ১৫-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকে। দেশজুড়ে এমন ১৩টি চক্রের সক্রিয় থাকার তথ্য মিলেছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।