মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পাত্রের চাহিদা বাড়ছে
- আপডেট টাইম : ০৯:২৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
- / 130
নিউজ লাইট ৭১: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পাত্রের চাহিদা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এক মালয়েশিয়ান তরুণীর কণ্ঠেই এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার মতে, বাংলাদেশি স্বামীর রাগ একটু বেশি, কিন্তু জামাই ভালো।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কাজের সন্ধানে অসংখ্য লোক বিদেশে পাড়ি জমান। প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশিরা অনেক সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন। এখানে অনেকেই মালয় মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করছেন।
অনেকেই মনে করেন, পরিশ্রমী হওয়াতেই মালয়েশিয়ার মেয়েরা বাংলাদেশি ছেলেদের খুব পছন্দ করেন। যার কারণে বাংলাদেশে ছেলেদের বিয়ে করতে আগ্রহী হয়।
অপরদিকে মালয় মেয়েদের নানা গুণে বাংলাদেশের ছেলেরাও মুগ্ধ। তাদের মতে, মালয় মেয়েরা ভালো গৃহিণী, নিরলস পরিশ্রমী ও জামাইকে আদরে রাখতে জানে। বরের বাড়ির বিষয়ে নাক খুব একটা গলায় না। তারা পরিশ্রমী স্বামীকে সম্মান করে। জাত-কুল নিয়েও মাথা ঘামায় না।
তাই ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী আর ছাত্র থেকে শুরু করে শ্রমিক স্বামীও আছে মালয়েশিয়ার মেয়েদের। সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় জামাই তকমা গায়ে সেঁটেছেন ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি। প্রতি বছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই ছেলে মেয়ে আর নাতি-নাতনি নিয়ে দেশটিতে সুখের জীবন কাটাচ্ছেন।
এদিকে মালয়েশিয়ায় বিয়ে করলে দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের, এমনকি স্থায়ী হওয়ার পথ যেমন সুগম হয় বাংলাদেশিদের। এছাড়া সামাজিক সম্মানও বাড়ে। বিপরীতে মালয় মেয়েরাও বাংলাদেশি স্বামীর সান্নিধ্য পেতে বুঁদ হয়ে থাকে।
এর প্রমাণ সিঙ্গাপুর সীমান্তের শহর জোহর বাহরুর মালয় মেয়ে নূরে লিজার কাছেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশি ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে তার ১৪ বছরের সংসার। বাংলাটা মোটামুটি ভালোই রপ্ত করেছেন লিজা। তার ছেলে-মেয়েরাও দুই ভাষায় কথা বলতে পারে। বাংলাদেশি স্বামীরা কেমন জানতে চাইলে স্মিত হেসে জানান, রাগ একটু বেশি। কিন্তু জামাই ভালো। বাংলাদেশের মানুষ ভালো।
এছাড়া কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী চাঁদপুর সমিতির সভাপতি সেলিম নুরুল ইসলামও মালয় মেয়েকে বিয়ে করেছেন। মালয় বধূ সম্পর্কে তার সোজাসাপ্টা কথা, এরা সংসারটা ভালো বোঝে। আমার কোথায় কোন ব্যবসা, কোন ব্যাংকে কত টাকা, তা নিয়ে আগ্রহ নেই। বাড়িটাকে পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে। আমার সংসারটা পরম মমতায় আগলে রাখে।
আর এক মালয় জামাই এমজে আলম। তিনি দেশটির সীমান্ত শহর জোহর বাহরুর বাংলাদেশ কমিউনিটি সেক্রেটারি। তার ভাষায়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যারা আসে, তারা তো কেউ রাজপুত্র নয়। আসে কাজ করতে। তাদের পরিবারের কী ব্যাকগ্রাউন্ড, কী আছে, কী নেই- তা নিয়ে মাথা ঘামায় না এখানকার মেয়েরা। তারা যদি দেখে ছেলে পরিশ্রমী আর দায়িত্বশীল, তাহলেই বিয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ জোহর কমিউনিটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফাহিমও মালয় মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তার বক্তব্যও অনেকটা একই সূত্রে গাঁথা। তার মতে, এখানকার মেয়েরা সংসারটা বোঝে। স্বামীর পেছনে অযথা লেগে থাকে না। বউ হিসেবে এদের তুলনা নেই।
এছাড়া বালাকঙের সফল ব্যবসায়ী নাজমূল ইসলাম বাবুলও মালয় মেয়েকে বিয়ে করেছেন। হোটেলের কাউন্টারে কর্মব্যস্ত বউকে দেখিয়ে বলেন, মালয়েশিয়ানরা কাজ পাগল। বাংলাদেশের ছেলেরা মুসলিম হওয়ায় জামাই বাছাইয়ে তাদেরই এগিয়ে রাখে।
জানা গেছে, বিয়ের পর প্রথমেই এখানে তিন মাসের ডিপেনডেন্ট ভিসা পাওয়া যায়। এরপর সেই ভিসা বেড়ে পর্যায়ক্রমে ৬ মাস, ১ বছর ও ৫ বছর করে বাড়তে থাকে। তবে পরিবর্তিত কিছু আইন-কানুনে এখন ওয়ার্কারদের বিয়ে করার সুযোগটা কমে গেছে। কিন্তু পেশাজীবী, ব্যবসায়ী আর স্যোসাল ভিজিটে ছাত্রদের মালয় মেয়ে বিয়ে করার সুযোগটা ঠিকই আছে।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। ছেলে-মেয়ে নিজেরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই প্রয়োজন পড়বে মেয়ে পক্ষের অভিভাবকের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট। সাধারণত মেয়ের বাবা বা বড় ভাই এটি দিয়ে থাকেন। বিপরীতে ছেলে পক্ষের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেবে স্থানীয় হাইকমিশন।
এরপর বিয়ের ফর্মে ইমাম চিঠি দিলেই ব্যবস্থা পাকা। তবে মেয়ের অভিভাবক রাজি না হলে কোর্ট ম্যারেজেরও সুযোগ আছে। যদিও এক্ষেত্রে জরিমানা গুণতে হবে নগদ হাজার রিঙ্গিত। তবে এরপর ডিপেনডেন্ট ভিসা আর মেয়ের স্পন্সরশিপ পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
মালয়েশিয়ায় ছেলে অনুপাতে মেয়ের সংখ্যা বেশি হওয়াতেই মূলত বাংলাদেশি পাত্রদের এখানে বিয়ে করে স্থায়ী হওয়ার এমন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে কুয়ালালামপুর বা জোহর বাহরুর চেয়ে মালয় অধ্যুষিত কেলানটান আর তেরেনগনু রাজ্যে বাংলাদেশি জামাইয়ের সংখ্যা বেশি। সব মিলিয়ে দেশটিতে নিয়মিতই যোগ হচ্ছে নতুন-নতুন বাংলাদেশি জামাই। আগামী ১২ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে বিয়ে হচ্ছে কুমিল্লা থেকে পড়াশোনা করতে আসা আব্দুল্লা রাজিব নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের।
মালেশিয়ায় অনেক বাংলাদেশি সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করছেন। পাশাপাশি দেশের অনেক বেকার যুবক মালয়েশিয়ায় গিয়ে উপার্জন করছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স।