ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছড়িয়ে পড়েছে হাহা ভাইরাস

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
  • / 43

ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘হাহা’ ভাইরাস! বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ‘হাহা’ ইমো দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কোনো জরিপ ছাড়াই এটি বলে দেওয়া যায়। কারণ, আপনি যদি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী হন, তবে নিজে স্ক্রল করতে গেলেই বুঝতে পারবেন যে, কত বিপুল পরিমাণ অট্টহাসি এ দেশের মানুষের পেটে জমে আছে! তা এতই যে, পোস্ট সুখের হোক বা দুঃখের, মার দেওয়ার হোক বা মার খাওয়ার–কিছু মানুষ সবখানেই ‘হাহা’ দিচ্ছেন। 

ফেসবুক তাদের প্রতিক্রিয়া বা রিঅ্যাকশন ইমোজিতে হাসির যে অপশনটি রেখেছে, সেটিকে মৃদু বা স্মিত হাসি বলার কোনো সুযোগ নেই। আপনি হুট করে পা পিছলে পড়ে গেলে বা আপনাকে কথার জালে আটকে ফেলে ‘বাঁশ’ দিতে পারলে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা জন যেভাবে প্রাণখুলে উচ্চস্বরে ‘হাহা’ করে হেসে ওঠেন, ঠিক সেটিকেই ফেসবুকে সকল ধরনের হাসি প্রকাশের উপায় হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। ফলে বাংলাদেশের অধিবাসীদেরও সব হাসি প্রকাশের ফেসবুকীয় মাধ্যম হিসেবে ‘হাহা’কেই বেছে নিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ‘হাহা’-র ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।

প্রশ্ন উঠছে যে, ‘হাহা’ ইমোজি বাংলাদেশিরা আসলে কী কী কারণে ব্যবহার করে থাকেন? হিসাব অনুযায়ী, শুধু হাসি উদ্রেককারী পোস্টেই এই ইমোজি ব্যবহার করার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, এ দেশের কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী কারণে-অকারণে হাসছেন, অট্টহাসি দিচ্ছেন। ধরুন, একজন দুঃখের পোস্ট দিল, তাতেও দেখা গেল কেউ কেউ ‘হাহা’ দিয়ে এসেছেন। আর এ নিয়েই উদ্বেগে আছে জাকারবার্গের কোম্পানি মেটা।

সম্প্রতি ফেসবুকের মঙ্গল গ্রহের শাখা অফিস থেকে পাঠানো একটি মহাজাগতিক অবাস্তব বিবৃতি ‘সরস’ বিভাগের পায়ে এসে পৌঁছেছে। তাতে বলা হয়েছে, এ দেশের মানুষের ‘হাহা’ ইমোজি ব্যবহারের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। দেশেরই ভেতরে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের দুর্ভোগের খবরেও অনেকে ‘হাহা’ দিয়ে আসছেন! এমনকি অনেকের মৃত্যুর খবরেও ‘হাহা’ দেওয়া হচ্ছে। এসব উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, যে দেশের মানুষ নিজেদের দুর্ভোগের খবরেও হাহা দিতে পারে, তারা আর যাই হোক ঠিক সুস্থ নয়। এই অসুস্থতা শারীরিক বা মানসিক বা দুই-ই হতে পারে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ফেসবুকের মঙ্গল গ্রহের শাখা অফিসের ধারণা, এ দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ‘হাহা’ নামক কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত!

এই ভাইরাস সারা দেশের মানুষের মধ্যে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই আকাশ থেকে পাওয়া বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে এও বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক ধারণা এই যে, এই ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে। এখন খুঁজে বের করতে হবে যে, সমস্যা ভাইরাসে বেশি, নাকি মাথায়! কারণ, এভাবে সবকিছুতে হাসতে থাকলে তো পুরো দেশই একসময় পাগলাগারদ হয়ে যাবে। আর যদি এই ভাইরাস দেশের সীমানার বাইরে ছড়াতে শুরু করে, তবে তো খবর আছে!

এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুই ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষ অজ্ঞরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়ের দোকানে আড্ডা মারা গবেষকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জুড়ি মেলা ভার। সারা দুনিয়ার মধ্যেই তারা অনন্য। ফেসবুকের বিচিত্র ব্যবহার তারা আয়ত্ত করে ফেলেছেন। কারণ, অনেকের কাছে ফেসবুকই জীবন। এরা কেউ সুখে হাসে, কেউ আবার অধিক শোকেও হাসে! আর আঙুলের যথোপযুক্ত ব্যবহার করার সুযোগ পেলে ‘হাহা’ দিয়ে তা চরিতার্থ করায় বাঙালির সমকক্ষ কেউ এই মহাবিশ্বে নেই। এসব কারণেও ‘হাহা’ ভাইরাসের উদ্ভব হতে পারে বলে মনে করেন এসব বিশেষ অজ্ঞরা।

তবে ভয়ে আছেন আসলে মার্ক জাকারবার্গ। অবিশ্বস্ত সূত্রের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আল্টিমেটামের ভয়ে ভীত! যেকোনো সময় ‘হাহা’ ভাইরাসে আক্রান্তরা ‘হাহা’ ইমো বাদে বাকি সব ইমো তুলে দেওয়ার জন্য কয়েক মিনিট সময় দিয়ে আল্টিমেটাম চালিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এ কারণেই এমন ভাইরাসের উদ্ভবের কারণ অনুসন্ধানে এবং ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর ওপর জোর দিয়েছেন প্রিসিলা চ্যানের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত স্বামী।

অবশ্য এসব নিয়ে আপাতত এ দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। এ নিয়ে কথিত ‘হাহা’ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘আমার মোবাইল ফোন, আমার রক্ত ঝরানো ঘামে ভেজা টাকায় কেনা এমবি, আমার ইন্টারনেট–এসব দিয়ে আমি কী করব, কোন ইমোতে আঙুল দেব, তা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে কারও উদ্বেগে ভোগার কিছু নেই। এ ধরনের উদ্বেগে ভোগাও এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী আচরণ। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।’ এতটুকু বলেই তিনি মারমুখী হয়ে ওঠেন এবং ‘হাহা’ করে হাসতে শুরু করে দেন!

অতএব বোঝাই যাচ্ছে যে, ঘটনা জটিল। এমন জটিলতম ঘটনা কীভাবে বাংলার মানুষকে জানানো হবে, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। তবে ঠিক ওই সময়ে কে যেন গায়েবী আওয়াজে কানে-মুখে বলে উঠল, ‘চালাই দ্যান…হাহা ছাড়া আর কী‑ইবা দেবে!’

সুতরাং, লেখাটি চালিয়ে দেওয়া হলো। এবার দেখেন, আপনারা যা ভালো মনে করেন!

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

ছড়িয়ে পড়েছে হাহা ভাইরাস

আপডেট টাইম : ০৩:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘হাহা’ ভাইরাস! বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ‘হাহা’ ইমো দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কোনো জরিপ ছাড়াই এটি বলে দেওয়া যায়। কারণ, আপনি যদি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী হন, তবে নিজে স্ক্রল করতে গেলেই বুঝতে পারবেন যে, কত বিপুল পরিমাণ অট্টহাসি এ দেশের মানুষের পেটে জমে আছে! তা এতই যে, পোস্ট সুখের হোক বা দুঃখের, মার দেওয়ার হোক বা মার খাওয়ার–কিছু মানুষ সবখানেই ‘হাহা’ দিচ্ছেন। 

ফেসবুক তাদের প্রতিক্রিয়া বা রিঅ্যাকশন ইমোজিতে হাসির যে অপশনটি রেখেছে, সেটিকে মৃদু বা স্মিত হাসি বলার কোনো সুযোগ নেই। আপনি হুট করে পা পিছলে পড়ে গেলে বা আপনাকে কথার জালে আটকে ফেলে ‘বাঁশ’ দিতে পারলে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা জন যেভাবে প্রাণখুলে উচ্চস্বরে ‘হাহা’ করে হেসে ওঠেন, ঠিক সেটিকেই ফেসবুকে সকল ধরনের হাসি প্রকাশের উপায় হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। ফলে বাংলাদেশের অধিবাসীদেরও সব হাসি প্রকাশের ফেসবুকীয় মাধ্যম হিসেবে ‘হাহা’কেই বেছে নিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ‘হাহা’-র ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।

প্রশ্ন উঠছে যে, ‘হাহা’ ইমোজি বাংলাদেশিরা আসলে কী কী কারণে ব্যবহার করে থাকেন? হিসাব অনুযায়ী, শুধু হাসি উদ্রেককারী পোস্টেই এই ইমোজি ব্যবহার করার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, এ দেশের কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী কারণে-অকারণে হাসছেন, অট্টহাসি দিচ্ছেন। ধরুন, একজন দুঃখের পোস্ট দিল, তাতেও দেখা গেল কেউ কেউ ‘হাহা’ দিয়ে এসেছেন। আর এ নিয়েই উদ্বেগে আছে জাকারবার্গের কোম্পানি মেটা।

সম্প্রতি ফেসবুকের মঙ্গল গ্রহের শাখা অফিস থেকে পাঠানো একটি মহাজাগতিক অবাস্তব বিবৃতি ‘সরস’ বিভাগের পায়ে এসে পৌঁছেছে। তাতে বলা হয়েছে, এ দেশের মানুষের ‘হাহা’ ইমোজি ব্যবহারের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। দেশেরই ভেতরে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের দুর্ভোগের খবরেও অনেকে ‘হাহা’ দিয়ে আসছেন! এমনকি অনেকের মৃত্যুর খবরেও ‘হাহা’ দেওয়া হচ্ছে। এসব উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, যে দেশের মানুষ নিজেদের দুর্ভোগের খবরেও হাহা দিতে পারে, তারা আর যাই হোক ঠিক সুস্থ নয়। এই অসুস্থতা শারীরিক বা মানসিক বা দুই-ই হতে পারে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ফেসবুকের মঙ্গল গ্রহের শাখা অফিসের ধারণা, এ দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ‘হাহা’ নামক কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত!

এই ভাইরাস সারা দেশের মানুষের মধ্যে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই আকাশ থেকে পাওয়া বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে এও বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক ধারণা এই যে, এই ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে। এখন খুঁজে বের করতে হবে যে, সমস্যা ভাইরাসে বেশি, নাকি মাথায়! কারণ, এভাবে সবকিছুতে হাসতে থাকলে তো পুরো দেশই একসময় পাগলাগারদ হয়ে যাবে। আর যদি এই ভাইরাস দেশের সীমানার বাইরে ছড়াতে শুরু করে, তবে তো খবর আছে!

এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুই ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষ অজ্ঞরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়ের দোকানে আড্ডা মারা গবেষকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জুড়ি মেলা ভার। সারা দুনিয়ার মধ্যেই তারা অনন্য। ফেসবুকের বিচিত্র ব্যবহার তারা আয়ত্ত করে ফেলেছেন। কারণ, অনেকের কাছে ফেসবুকই জীবন। এরা কেউ সুখে হাসে, কেউ আবার অধিক শোকেও হাসে! আর আঙুলের যথোপযুক্ত ব্যবহার করার সুযোগ পেলে ‘হাহা’ দিয়ে তা চরিতার্থ করায় বাঙালির সমকক্ষ কেউ এই মহাবিশ্বে নেই। এসব কারণেও ‘হাহা’ ভাইরাসের উদ্ভব হতে পারে বলে মনে করেন এসব বিশেষ অজ্ঞরা।

তবে ভয়ে আছেন আসলে মার্ক জাকারবার্গ। অবিশ্বস্ত সূত্রের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আল্টিমেটামের ভয়ে ভীত! যেকোনো সময় ‘হাহা’ ভাইরাসে আক্রান্তরা ‘হাহা’ ইমো বাদে বাকি সব ইমো তুলে দেওয়ার জন্য কয়েক মিনিট সময় দিয়ে আল্টিমেটাম চালিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এ কারণেই এমন ভাইরাসের উদ্ভবের কারণ অনুসন্ধানে এবং ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর ওপর জোর দিয়েছেন প্রিসিলা চ্যানের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত স্বামী।

অবশ্য এসব নিয়ে আপাতত এ দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। এ নিয়ে কথিত ‘হাহা’ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘আমার মোবাইল ফোন, আমার রক্ত ঝরানো ঘামে ভেজা টাকায় কেনা এমবি, আমার ইন্টারনেট–এসব দিয়ে আমি কী করব, কোন ইমোতে আঙুল দেব, তা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে কারও উদ্বেগে ভোগার কিছু নেই। এ ধরনের উদ্বেগে ভোগাও এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী আচরণ। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।’ এতটুকু বলেই তিনি মারমুখী হয়ে ওঠেন এবং ‘হাহা’ করে হাসতে শুরু করে দেন!

অতএব বোঝাই যাচ্ছে যে, ঘটনা জটিল। এমন জটিলতম ঘটনা কীভাবে বাংলার মানুষকে জানানো হবে, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। তবে ঠিক ওই সময়ে কে যেন গায়েবী আওয়াজে কানে-মুখে বলে উঠল, ‘চালাই দ্যান…হাহা ছাড়া আর কী‑ইবা দেবে!’

সুতরাং, লেখাটি চালিয়ে দেওয়া হলো। এবার দেখেন, আপনারা যা ভালো মনে করেন!

নিউজ লাইট ৭১