ঢাকা ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাড়া-মহল্লায় আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 107

নিউজ লাইট ৭১: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন আগামী মাসে (মার্চ)। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে পাড়া-মহল্লায় আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে। কেউ বলছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কিন্তু অনেকে তা মানছেন না, বলছেন পরিবর্তন আসবে মেয়র প্রার্র্থিতায়। সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তবে নওফেল নির্বাচনে আদৌ আগ্রহী কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আবার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

ঢাকার পরে চট্টগ্রামের মেয়রের স্থান। চসিক নির্বাচন তাই সারা দেশের জন্য একটি আলোচনার বিষয়বস্তু। ঢাকার পরে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে আগামী মার্চে। এ নির্বাচন নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ আসনটি এখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে। তাই স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন এটি প্রায় নিশ্চিত। হাইকমান্ডের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। যদি নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আবারও তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে তার প্রার্থিতা নিয়ে হইচই থেমে নেই।

আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে আ জ ম নাছিরের পরিবর্তে নতুন কাউকে প্রার্থিতা করার। এ ক্ষেত্রে নাম আসে মহিবুল হাসান নওফেলের। কিন্তু তিনি বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখান থেকে সরে মেয়র নির্বাচন করবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও গুঞ্জন রয়েছে নেত্রী যদি তাকে মেয়র নির্বাচনের জন্য বলেন তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। চট্টগ্রামের নগর আওয়ামী লীগে গ্রুপিং নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এ বিরোধ চলে আসছে।

সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরোধের বিষয়টি অনেক পুরোনো। মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর গ্রুপিং রূপ নিয়েছে আ জ ম নাছির ও নওফেলের মধ্যে। ছাত্রলীগ, যুবলীগেও একই অবস্থা। দুই নেতার সঙ্গে দুই গ্রুপ। দুই নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে তারা চলাফেরা করেন। মাঝে মধ্যে দুই গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে। তবে মন্ত্রী থাকার কারণে নওফেলের প্রায়ই ঢাকায় অবস্থানের কারণে গ্রুপিং সে রকম তীব্র আকার ধারণ করে না।

আ জ ম নাছির মেয়র হওয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সেটা হলো তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়া। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়ররা সাধারণত প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পান। চট্টগ্রামের চেয়ে ছোট অনেক সিটি করপোরেশনে সার্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে এ মর্যাদা দেওয়া হলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল চসিক। এটা ঠিক কী কারণে দেওয়া হয়নি এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা বলছেন, চট্টগ্রামের মেয়র স্রেফ গ্রুপিংয়ের শিকার।

তবে যাই হোক, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে নওফেল নির্বাচন করুক। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তাই তিনি হাল ধরুন। কিন্তু নওফেলকে নেতাকর্মীরা ঠিক রাজি করাতে পারছেন না বলে জানা গেছে। নওফেলের রাজনৈতিক যাত্রাও শুরু হয় চট্টগ্রাম মহানগর থেকে। ২০১৪ সালে ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হয় নওফেলকে। যুক্ত ছিলেন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। কর্মীভিত্তিক রাজনীতিতে তার প্রভাব অতুলনীয়। পড়াশোনা শেষ করার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী হয়ে উঠেন তার যোগ্য উত্তরাধিকার।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে। তখন মহিউদ্দিন অনুসারীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। ঢাকায় বসেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন রাজনীতির প্রয়োজনেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মূল্যায়ন দরকার। ফলে দলীয় কাউন্সিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভাগ বণ্টন হলে তার ওপর বর্তায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব। দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাজিমাৎ করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ভূমিকা তখন বেশ প্রশংসা পায়।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় দলের ভেতরে মহিবুল হাসান চৌধুরী তার মেধা, ফ্রেস ইমেজ, বিচক্ষণতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আছেন। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। ২০১০ সালে চসিক নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা মহিবুল পরে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করেন।

১/১১ সময়কালীন লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশি আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরির ভূমিকা রেখেছেন রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা নওফেল। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আওয়ামী লীগের প্রতি ত্যাগ এবং নওফেলের বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্য পছন্দ হয় শেখ হাসিনার। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওফেলকে। সেই দায়িত্ব যোগ্যতা, মেধা এবং নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে পালন করছেন তিনি।

নওফেলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক বলে পরিচিত নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি বলেন, নওফেল ভাই নির্বাচন করতে চাইছেন না। তবে এটা ঠিক যে, নগর মেয়রের পদে যিনি বসবেন তিনি যদি দলের দায়িত্বেও থাকেন তাহলে দলে সময় দিতে পারেন না। তাই দল ও মেয়র পদে দুজন আলাদা নেতা থাকলে ভালো হয়। যিনি মেয়র হবেন তিনি মেয়রের কাজ করবেন, অন্যদিকে দলের নেতা যিনি হবেন তিনি দলের কাজ করবেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এদিকে মেয়র পদে আবারও মনোনয়ন চাইবেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, আমি দলের দুঃসময় থেকে এখনো সক্রিয় আছি। গতবারও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করব। তাই আমি দলের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছি। জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ডান হাত বলে পরিচিত সুজন। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা বলে পরিচিত সুজন ছিলেন অধুনালুপ্ত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে সরেজমিন আলাপকালে দেখা যায়, মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিগত মেয়র নির্বাচনের পর তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ক্ষমতায় বসার পর পর তিনি নগরকে জঞ্জালমুক্ত করেছেন। বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে ঢাকা পড়া নগর চট্টগ্রামের সৌন্দর্য তিনি ফিরিয়ে এনেছেন। নগরীর রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা দূর করে প্রতি ঘর থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নগরীর বেশকিছু ওয়ার্ডের ফুটপাত পরিষ্কার সাধারণ মানুষের বসার জায়গা করেছেন। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করার কাজ শুরু করেছেন। ফুটপাত থেকে হকারদের ব্যবসা সরিয়ে বিকালে অফিস ছুটির পর বসার স্থান নির্ধারণ করে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার পথ সুগম করার ব্যবস্থা করছেন। নগরীর এক্সেস রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়নে কাজ করেছেন।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, নেত্রী যদি আবারও নির্বাচন করার সুযোগ দেন তাহলে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি আধুনিক নগরীতে রূপান্তর করবেন। অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য তিনি আবারও প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

Tag :

শেয়ার করুন

পাড়া-মহল্লায় আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে

আপডেট টাইম : ০৭:৫৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

নিউজ লাইট ৭১: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন আগামী মাসে (মার্চ)। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে পাড়া-মহল্লায় আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে। কেউ বলছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কিন্তু অনেকে তা মানছেন না, বলছেন পরিবর্তন আসবে মেয়র প্রার্র্থিতায়। সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তবে নওফেল নির্বাচনে আদৌ আগ্রহী কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আবার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

ঢাকার পরে চট্টগ্রামের মেয়রের স্থান। চসিক নির্বাচন তাই সারা দেশের জন্য একটি আলোচনার বিষয়বস্তু। ঢাকার পরে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে আগামী মার্চে। এ নির্বাচন নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ আসনটি এখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে। তাই স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন এটি প্রায় নিশ্চিত। হাইকমান্ডের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। যদি নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আবারও তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে তার প্রার্থিতা নিয়ে হইচই থেমে নেই।

আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে আ জ ম নাছিরের পরিবর্তে নতুন কাউকে প্রার্থিতা করার। এ ক্ষেত্রে নাম আসে মহিবুল হাসান নওফেলের। কিন্তু তিনি বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখান থেকে সরে মেয়র নির্বাচন করবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও গুঞ্জন রয়েছে নেত্রী যদি তাকে মেয়র নির্বাচনের জন্য বলেন তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। চট্টগ্রামের নগর আওয়ামী লীগে গ্রুপিং নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এ বিরোধ চলে আসছে।

সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরোধের বিষয়টি অনেক পুরোনো। মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর গ্রুপিং রূপ নিয়েছে আ জ ম নাছির ও নওফেলের মধ্যে। ছাত্রলীগ, যুবলীগেও একই অবস্থা। দুই নেতার সঙ্গে দুই গ্রুপ। দুই নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে তারা চলাফেরা করেন। মাঝে মধ্যে দুই গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে। তবে মন্ত্রী থাকার কারণে নওফেলের প্রায়ই ঢাকায় অবস্থানের কারণে গ্রুপিং সে রকম তীব্র আকার ধারণ করে না।

আ জ ম নাছির মেয়র হওয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সেটা হলো তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়া। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়ররা সাধারণত প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পান। চট্টগ্রামের চেয়ে ছোট অনেক সিটি করপোরেশনে সার্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে এ মর্যাদা দেওয়া হলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল চসিক। এটা ঠিক কী কারণে দেওয়া হয়নি এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা বলছেন, চট্টগ্রামের মেয়র স্রেফ গ্রুপিংয়ের শিকার।

তবে যাই হোক, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে নওফেল নির্বাচন করুক। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তাই তিনি হাল ধরুন। কিন্তু নওফেলকে নেতাকর্মীরা ঠিক রাজি করাতে পারছেন না বলে জানা গেছে। নওফেলের রাজনৈতিক যাত্রাও শুরু হয় চট্টগ্রাম মহানগর থেকে। ২০১৪ সালে ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হয় নওফেলকে। যুক্ত ছিলেন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। কর্মীভিত্তিক রাজনীতিতে তার প্রভাব অতুলনীয়। পড়াশোনা শেষ করার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী হয়ে উঠেন তার যোগ্য উত্তরাধিকার।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে। তখন মহিউদ্দিন অনুসারীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। ঢাকায় বসেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন রাজনীতির প্রয়োজনেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মূল্যায়ন দরকার। ফলে দলীয় কাউন্সিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভাগ বণ্টন হলে তার ওপর বর্তায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব। দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাজিমাৎ করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ভূমিকা তখন বেশ প্রশংসা পায়।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় দলের ভেতরে মহিবুল হাসান চৌধুরী তার মেধা, ফ্রেস ইমেজ, বিচক্ষণতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আছেন। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। ২০১০ সালে চসিক নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা মহিবুল পরে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করেন।

১/১১ সময়কালীন লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশি আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরির ভূমিকা রেখেছেন রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা নওফেল। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আওয়ামী লীগের প্রতি ত্যাগ এবং নওফেলের বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্য পছন্দ হয় শেখ হাসিনার। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওফেলকে। সেই দায়িত্ব যোগ্যতা, মেধা এবং নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে পালন করছেন তিনি।

নওফেলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক বলে পরিচিত নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি বলেন, নওফেল ভাই নির্বাচন করতে চাইছেন না। তবে এটা ঠিক যে, নগর মেয়রের পদে যিনি বসবেন তিনি যদি দলের দায়িত্বেও থাকেন তাহলে দলে সময় দিতে পারেন না। তাই দল ও মেয়র পদে দুজন আলাদা নেতা থাকলে ভালো হয়। যিনি মেয়র হবেন তিনি মেয়রের কাজ করবেন, অন্যদিকে দলের নেতা যিনি হবেন তিনি দলের কাজ করবেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এদিকে মেয়র পদে আবারও মনোনয়ন চাইবেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, আমি দলের দুঃসময় থেকে এখনো সক্রিয় আছি। গতবারও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করব। তাই আমি দলের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছি। জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ডান হাত বলে পরিচিত সুজন। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা বলে পরিচিত সুজন ছিলেন অধুনালুপ্ত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে সরেজমিন আলাপকালে দেখা যায়, মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিগত মেয়র নির্বাচনের পর তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ক্ষমতায় বসার পর পর তিনি নগরকে জঞ্জালমুক্ত করেছেন। বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে ঢাকা পড়া নগর চট্টগ্রামের সৌন্দর্য তিনি ফিরিয়ে এনেছেন। নগরীর রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা দূর করে প্রতি ঘর থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নগরীর বেশকিছু ওয়ার্ডের ফুটপাত পরিষ্কার সাধারণ মানুষের বসার জায়গা করেছেন। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করার কাজ শুরু করেছেন। ফুটপাত থেকে হকারদের ব্যবসা সরিয়ে বিকালে অফিস ছুটির পর বসার স্থান নির্ধারণ করে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার পথ সুগম করার ব্যবস্থা করছেন। নগরীর এক্সেস রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়নে কাজ করেছেন।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, নেত্রী যদি আবারও নির্বাচন করার সুযোগ দেন তাহলে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি আধুনিক নগরীতে রূপান্তর করবেন। অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য তিনি আবারও প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।