ঢাকা ০৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:০১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / 34

ছবি: সংগৃহীত

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘরে থাকা পরিবারগুলো। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাসহ টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো বিতরণ করা হবে।

৪ অক্টোবর ভোর থেকে স্মরণকালের ভয়াবহ এক পাহাড়ি ঢল দেখেছে শেরপুরবাসী। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিবছর বর্ষায় দুই-তিনবার ঢলে ভাসলেও এর আগে এমন তাণ্ডবলীলা কেউ দেখেননি কেউ। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল চারটি নদীপাড়ের মানুষের সব লন্ডভন্ড করে দেয়। গত তিন দিন বৃষ্টি না থাকায় ও উজানের পানি কমতেই ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

জেলার অন্য তিন উপজেলা বাদে কেবলমাত্র ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেই পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত কিংবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় শেরপুর জেলায় পাঁচ দিনে নারী ও শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় দুই শতাধিক।

এখনও অনেক নিচু এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। বন্যার পানির নিচে এখনও বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেতের রোপা আমন ধান তলিয়ে রয়েছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ স্থানে রোপা আমন ধান একেবারে নষ্ট হওয়ায় এক মুঠো ধানও পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলো চিন্তায় পড়েছেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় এবং কাদায় পানিতে একাকার হয়ে থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পুকুর ও মাছের খামারগুলো থেকে সব মাছ ভেসে যাওয়ায় জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এ ক্ষতি তারা কীভাবে পূরণ করবেন তা ভেবে কোন কূল পাচ্ছেন না।

ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বাসিন্দা রাশেদা বেগম বলেন, ‘ঢলে আমার তিনটা ঘর ভেঙে গেছে। আমি গরিব মানুষ। এখন কীভাবে এই ঘর ঠিক করমু, চিন্তা করে কূল পাইতাছি না।’

নালিতাবাড়ীর ইউএনও মাসুদ রানা বলেন, ‘এ উপজেলায় চার হাজার ৬৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় এক হাজার ২০০ ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

বন্যায় দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ

আপডেট টাইম : ১১:০১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘরে থাকা পরিবারগুলো। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাসহ টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো বিতরণ করা হবে।

৪ অক্টোবর ভোর থেকে স্মরণকালের ভয়াবহ এক পাহাড়ি ঢল দেখেছে শেরপুরবাসী। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিবছর বর্ষায় দুই-তিনবার ঢলে ভাসলেও এর আগে এমন তাণ্ডবলীলা কেউ দেখেননি কেউ। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল চারটি নদীপাড়ের মানুষের সব লন্ডভন্ড করে দেয়। গত তিন দিন বৃষ্টি না থাকায় ও উজানের পানি কমতেই ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

জেলার অন্য তিন উপজেলা বাদে কেবলমাত্র ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেই পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত কিংবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় শেরপুর জেলায় পাঁচ দিনে নারী ও শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় দুই শতাধিক।

এখনও অনেক নিচু এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। বন্যার পানির নিচে এখনও বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেতের রোপা আমন ধান তলিয়ে রয়েছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ স্থানে রোপা আমন ধান একেবারে নষ্ট হওয়ায় এক মুঠো ধানও পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলো চিন্তায় পড়েছেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় এবং কাদায় পানিতে একাকার হয়ে থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পুকুর ও মাছের খামারগুলো থেকে সব মাছ ভেসে যাওয়ায় জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এ ক্ষতি তারা কীভাবে পূরণ করবেন তা ভেবে কোন কূল পাচ্ছেন না।

ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বাসিন্দা রাশেদা বেগম বলেন, ‘ঢলে আমার তিনটা ঘর ভেঙে গেছে। আমি গরিব মানুষ। এখন কীভাবে এই ঘর ঠিক করমু, চিন্তা করে কূল পাইতাছি না।’

নালিতাবাড়ীর ইউএনও মাসুদ রানা বলেন, ‘এ উপজেলায় চার হাজার ৬৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় এক হাজার ২০০ ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

নিউজ লাইট ৭১