ঢাকা ০৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনে এ যেন অচেনা দৃশ্য

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৩:২১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / 17

ছবি: সংগৃহীত

তিন পার্বত্য জেলার পর্যটনে এ যেন অচেনা দৃশ্য। হোটেলগুলো ফাঁকা; পর্যটকবাহী গাড়ি অলস বসে আছে। পর্যটক ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন গুনছেন হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান। কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছেন। শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চার দিনের ছুটি থাকলেও হোটেল-মোটেলে বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এ তিন পার্বত্য জেলায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। তিন জেলা প্রশাসক এ নির্দেশনা জারি করেন। ৮ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও হামলার প্রতিবাদে ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনের অবরোধে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে পর্যটকরা আটকে পড়েন। ২৪ সেপ্টেম্বর সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে খাগড়াছড়িও প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। তখন থেকে চলছে পর্যটনে খরা। এদিকে শহরের রেস্তোরাঁগুলোয় নেই বেচাবিক্রি। সাজেকে পর্যটনকেন্দ্রের পরিস্থিতি আরও নাজুক। ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সেখানেও কোনো পর্যটক নেই। সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। ৪০টির বেশি রেস্তোরাঁ থাকলেও কোনো বিক্রি নেই।

রাঙামাটির হাউস বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পী তঞ্চংগ্যা বলেন, ৯৯ শতাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। প্রশাসন রাঙামাটিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, পুরো মৌসুমে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রতিদিন ২০-৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, রাঙামাটিতে এখন এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যে, পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছি।

সোমবার বান্দরবান প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বান্দরবান পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ। সংগঠনের আহ্বায়ক নাছিরুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঝামেলা চলার কারণে সব পর্যটক বান্দরবানে আসা শুরু করেছেন। হোটেল ও পরিবহনে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা এবং দুর্গাপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে অগ্রিম বুকিং দেওয়া শুরু হয়। এর মধ্যে প্রশাসনের ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায়’ পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পর্যটকদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। নির্বাহী আদেশ ছাড়া একটা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে প্রশাসন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের পর্যটন খাতের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৭৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। দেশে ৩০টি পর্যটন গন্তব্য রয়েছে। বছরে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ স্থানীয় পর্যটক এসব স্পট পরিদর্শন করেন। অনানুষ্ঠানিক এক হিসাব অনুযায়ী, দেশীয় পর্যটকের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ পার্বত্য জেলাগুলোতে ভ্রমণ করেন। এছাড়া কক্সবাজারসহ তিনটি পার্বত্য জেলা ঘুরতে যান ৫৫ শতাংশ দেশীয় পর্যটক।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

পর্যটনে এ যেন অচেনা দৃশ্য

আপডেট টাইম : ০৩:২১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

তিন পার্বত্য জেলার পর্যটনে এ যেন অচেনা দৃশ্য। হোটেলগুলো ফাঁকা; পর্যটকবাহী গাড়ি অলস বসে আছে। পর্যটক ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন গুনছেন হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান। কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছেন। শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চার দিনের ছুটি থাকলেও হোটেল-মোটেলে বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এ তিন পার্বত্য জেলায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। তিন জেলা প্রশাসক এ নির্দেশনা জারি করেন। ৮ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও হামলার প্রতিবাদে ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনের অবরোধে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে পর্যটকরা আটকে পড়েন। ২৪ সেপ্টেম্বর সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে খাগড়াছড়িও প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। তখন থেকে চলছে পর্যটনে খরা। এদিকে শহরের রেস্তোরাঁগুলোয় নেই বেচাবিক্রি। সাজেকে পর্যটনকেন্দ্রের পরিস্থিতি আরও নাজুক। ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সেখানেও কোনো পর্যটক নেই। সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। ৪০টির বেশি রেস্তোরাঁ থাকলেও কোনো বিক্রি নেই।

রাঙামাটির হাউস বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পী তঞ্চংগ্যা বলেন, ৯৯ শতাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। প্রশাসন রাঙামাটিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, পুরো মৌসুমে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রতিদিন ২০-৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, রাঙামাটিতে এখন এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যে, পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছি।

সোমবার বান্দরবান প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বান্দরবান পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ। সংগঠনের আহ্বায়ক নাছিরুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঝামেলা চলার কারণে সব পর্যটক বান্দরবানে আসা শুরু করেছেন। হোটেল ও পরিবহনে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা এবং দুর্গাপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে অগ্রিম বুকিং দেওয়া শুরু হয়। এর মধ্যে প্রশাসনের ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায়’ পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পর্যটকদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। নির্বাহী আদেশ ছাড়া একটা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে প্রশাসন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের পর্যটন খাতের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৭৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। দেশে ৩০টি পর্যটন গন্তব্য রয়েছে। বছরে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ স্থানীয় পর্যটক এসব স্পট পরিদর্শন করেন। অনানুষ্ঠানিক এক হিসাব অনুযায়ী, দেশীয় পর্যটকের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ পার্বত্য জেলাগুলোতে ভ্রমণ করেন। এছাড়া কক্সবাজারসহ তিনটি পার্বত্য জেলা ঘুরতে যান ৫৫ শতাংশ দেশীয় পর্যটক।

নিউজ লাইট ৭১