ঢাকা ০২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেট্রোরেল বন্ধ বিপাকে যাত্রীরা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • / 17

মেট্রোরেল বন্ধ বিপাকে যাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত

মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। আড়াই লাখের বেশি যাত্রীকে ফিরে যেতে হয়েছে এক বছর আগের সেই ভোগান্তির জীবনে।

রোববার সকালে যারা অফিসে যাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে যেতে বের হয়েছেন, তারা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। বেশি ভাড়ায় রিকশা, মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এছাড়া যাত্রীর চাপ থাকায় গণপরিবহনে করে কষ্টে অফিসে গেছেন।

মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রীদের দেখা যায়, অল্প সময়ে অফিস যাওয়ার জন্য সকাল ৮টার দিকে মোটর বাইকারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। মিরপুরের পল্লবী স্টেশনে বাইক রাইডাররা ভাড়া চাচ্ছিলেন আড়াইশ টাকা, কিন্তু দুইশ টাকা দিতে চাওয়ার পরও কেউ রাজি হচ্ছিল না। পরে অনেকে বাসে করে চলে যান।

পল্লবী স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে কারওয়ান বাজার যেতে খরচ পড়ে ৫০ টাকা।

একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, তার অফিস শুরুর সময় সোয়া ৯টায়, মেট্রোরেল যখন চালু ছিল তখন তিনি বাসা থেকে বের হতেন ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে। তিনি বলেন, তখন ৯টা ৫ বা ১০ এর মধ্যে চলে যেতাম। এখন দুই ঘণ্টা আগে বের হলেও যেতে পারছি না, আরও এক ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে। এত মানুষের চাপ, গাড়ি পাওয়া কষ্ট হয়ে যায়। গরমের মধ্যে অসহ্য লাগছে।

তিনি আরও বলেন, এখন দিনে ৬০০-৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে, বাইকে সাধারণত দেড়শ টাকায় চলে যাওয়া যায়। মেট্রো না থাকায় তারাও বেশি ভাড়া চাচ্ছে। সরকার মেট্রোরেল দ্রুত খুলে দিলে জনগণের সুবিধা হত; এটা খুব প্রয়োজন।

২০২২ সালে মেট্রোরেল চালু হয়। এর পর থেকে এই পথে যাত্রী সংকটে বাসের সংখ্যা কমতে থাকে। এখনও যাত্রীর তুলনায় বাস কম থাকায় যাতায়াতে আরও ভুগতে হচ্ছে।

রোববার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেট্রোরেলের পল্লবী স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দেখা গেছে, অফিসগামী যাত্রীদের কেউ কেউ দৌড়ে বাসে উঠছেন, কেউ বাইক রাইডারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন, কেউ আবার অটোরিকশায় করে যাচ্ছেন।

অপেক্ষমান যাত্রীদের মধ্যে সময় মত অফিসে পৌঁছাতে পারা নিয়ে অস্থিরতা দেখা যায়, এদিন সকালে ঢাকার রাস্তায় যানজটও ছিল অনেক বেশি।

যাত্রীরা বলছেন, মেট্রোরেল চালুর পর দীর্ঘদিন ধরে তারা স্বস্তির যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, পুরনো অভ্যাসে ফিরতে তারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন না; তার সঙ্গে অর্থ ও সময় দুইই খরচ হচ্ছে।

অনেক যাত্রী মেট্রোরেলে নাশকতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তারা বলেন, হয়ত কয়দিন পড়েই স্টেশন চালু হয়ে যাবে, কিন্তু এই ঘটনা এমন ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, মেট্রোরেলেও নাশকতা হতে পারে, যে ভয়টা আগে ছিল না।

হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তারা।

গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে মেট্রোর লাইনের নিচে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে ফুটব্রিজে পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয়। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই একটি ট্রেন ছুটে যায়। পরে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

পরদিন সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় একদল মানুষ। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও ১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা হয়।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন মেরামতে এক বছর সময় লেগে যাবে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক যন্ত্রপাতিই মেরামতযোগ্য অবস্থায় নেই। এগুলো নতুন করে আমদানি করতে হবে।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

মেট্রোরেল বন্ধ বিপাকে যাত্রীরা

আপডেট টাইম : ০৬:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। আড়াই লাখের বেশি যাত্রীকে ফিরে যেতে হয়েছে এক বছর আগের সেই ভোগান্তির জীবনে।

রোববার সকালে যারা অফিসে যাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে যেতে বের হয়েছেন, তারা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। বেশি ভাড়ায় রিকশা, মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এছাড়া যাত্রীর চাপ থাকায় গণপরিবহনে করে কষ্টে অফিসে গেছেন।

মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রীদের দেখা যায়, অল্প সময়ে অফিস যাওয়ার জন্য সকাল ৮টার দিকে মোটর বাইকারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। মিরপুরের পল্লবী স্টেশনে বাইক রাইডাররা ভাড়া চাচ্ছিলেন আড়াইশ টাকা, কিন্তু দুইশ টাকা দিতে চাওয়ার পরও কেউ রাজি হচ্ছিল না। পরে অনেকে বাসে করে চলে যান।

পল্লবী স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে কারওয়ান বাজার যেতে খরচ পড়ে ৫০ টাকা।

একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, তার অফিস শুরুর সময় সোয়া ৯টায়, মেট্রোরেল যখন চালু ছিল তখন তিনি বাসা থেকে বের হতেন ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে। তিনি বলেন, তখন ৯টা ৫ বা ১০ এর মধ্যে চলে যেতাম। এখন দুই ঘণ্টা আগে বের হলেও যেতে পারছি না, আরও এক ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে। এত মানুষের চাপ, গাড়ি পাওয়া কষ্ট হয়ে যায়। গরমের মধ্যে অসহ্য লাগছে।

তিনি আরও বলেন, এখন দিনে ৬০০-৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে, বাইকে সাধারণত দেড়শ টাকায় চলে যাওয়া যায়। মেট্রো না থাকায় তারাও বেশি ভাড়া চাচ্ছে। সরকার মেট্রোরেল দ্রুত খুলে দিলে জনগণের সুবিধা হত; এটা খুব প্রয়োজন।

২০২২ সালে মেট্রোরেল চালু হয়। এর পর থেকে এই পথে যাত্রী সংকটে বাসের সংখ্যা কমতে থাকে। এখনও যাত্রীর তুলনায় বাস কম থাকায় যাতায়াতে আরও ভুগতে হচ্ছে।

রোববার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেট্রোরেলের পল্লবী স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দেখা গেছে, অফিসগামী যাত্রীদের কেউ কেউ দৌড়ে বাসে উঠছেন, কেউ বাইক রাইডারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন, কেউ আবার অটোরিকশায় করে যাচ্ছেন।

অপেক্ষমান যাত্রীদের মধ্যে সময় মত অফিসে পৌঁছাতে পারা নিয়ে অস্থিরতা দেখা যায়, এদিন সকালে ঢাকার রাস্তায় যানজটও ছিল অনেক বেশি।

যাত্রীরা বলছেন, মেট্রোরেল চালুর পর দীর্ঘদিন ধরে তারা স্বস্তির যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, পুরনো অভ্যাসে ফিরতে তারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন না; তার সঙ্গে অর্থ ও সময় দুইই খরচ হচ্ছে।

অনেক যাত্রী মেট্রোরেলে নাশকতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তারা বলেন, হয়ত কয়দিন পড়েই স্টেশন চালু হয়ে যাবে, কিন্তু এই ঘটনা এমন ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, মেট্রোরেলেও নাশকতা হতে পারে, যে ভয়টা আগে ছিল না।

হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তারা।

গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে মেট্রোর লাইনের নিচে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে ফুটব্রিজে পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয়। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই একটি ট্রেন ছুটে যায়। পরে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

পরদিন সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় একদল মানুষ। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও ১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা হয়।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন মেরামতে এক বছর সময় লেগে যাবে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক যন্ত্রপাতিই মেরামতযোগ্য অবস্থায় নেই। এগুলো নতুন করে আমদানি করতে হবে।

নিউজ লাইট ৭১