সরকারের কোনো কর্মকর্তাই ভিআইপি নন, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী: হাইকোর্ট
- আপডেট টাইম : ১২:৩৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০১৯
- / 114
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি)। এছাড়া সরকারের কোনো স্তরের কর্মকর্তাই ভিআইপি নন, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।
একজন যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় থেকে তিন ঘণ্টা ফেরি না ছাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্সে স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় করা এক রিটের শুনানিতে এ কথা বলেন হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের।
বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত সচিবের নিচে নন, এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঘটনা তদন্ত করতে বলা হয়। জনপ্রশাসন সচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৮ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয় থাকে। সেটি বিবেচনা করতে হয়।
বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের বলেন, সরকারের কোনো স্তরের কর্মকর্তা কেউই ভিআইপি নন। তারা পাবলিক সার্ভেন্ট। ভিআইপি কারা সেটা আইনেই বলে দেওয়া আছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া আর কারো জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।
বিচারপতি আরো বলেন, সারা বিশ্বে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেওয়া হয়। আর আমাদের এখানে ঘটছে তার উল্টো।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন লিমন আইন থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, রাষ্ট্রীয় কোনো বার্তাবাহক (রাষ্ট্রীয় দূত) হিসাবে জাহাজ বা ফেরিতে উঠার অগ্রাধিকার পাবেন। তারপরেও তিনি ফেরি বা জাহাজ থামিয়ে রাখতে পারবেন না।
আইনজীবী আরো বলেন, নৌ পরিবহন আইন অনুযায়ী, জাহাজ বা ফেরিতে ওঠার জন্যে অগ্রাধিকার পাবে ক্রমান্বয়ে লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স এবং ভিআইপি।
উল্লেখ্য, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ (১১) গুরুতর আহত হয়। তাকে প্রথমে খুলনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার আইসিইউ সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গত বৃহস্পতিবার তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
রাত ৮টার দিকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন ‘কুমিল্লা’ নামের ফেরিটি ঘাটেই ছিল। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের অপেক্ষায় ঘাটে ফেরিটি দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তিন ঘণ্টা। তিতাস ঘোষের স্বজনদের অনুরোধেও ফেরিটি ছাড়া হয়নি। ফলে হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় তিতাস।
তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর কর্তাদের অনুরোধ করেও সেদিন কোনো কাজ হয়নি। জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯ এ ফোন করা হলেও ফেরি ছাড়তে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ইত্তেফাক/জেডএইচ