পাহাড়ি নারীরা পাচার হচ্ছে চীনে
- আপডেট টাইম : ০৩:১৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
- / 27
এবার পাচারের টার্গেট পাহাড়ি নারীরা। নানান কৌশলে চীনে পাচার হচ্ছে পাহাড়ি তরুনীরা। প্রায় এক দশক আগে নারী পাচার শুরু হলেও সম্প্রতি বেড়েছে এই প্রবণতা। দশ বছরে কত নারী পাচার হয়েছে সেই সংখ্যা কারো কাছে না থাকলেও স্থানীয়দের ধারণা সংখ্যাটি তিন হাজারের কম হবে না।
অনুসন্ধানে দেখা যায় চীনের একদল নারী পাচারকারীর চোখ পড়েছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে। কখনো বিয়ে, কখনো মোটা বেতনে চাকরির টোপ ফেলে সহজ-সরল-দরিদ্র পাহাড়ি মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চীন ও হংকং-এ।
সাম্প্রতিক সময়ে শুধু খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন থেকেই এপর্যন্ত ৩৬ জন নারী চীন ও হংকং-এ পাচার হয়ে গেছে। পুরো উপজেলায় এই সংখ্যা অন্তত দুইশ’ হবে বলে জানান স্থানীয়রা।
কিভাবে পাহাড় থেকে নারী পাচার হয় সেই ঘটনা প্রকাশ হয়েছে কিছুদিন আগে। রাজধানীর উত্তরা থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোরী ভ্যালেন্টিনা চাকমা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সাথে পানছড়ির বাসিন্দা হংকং প্রবাসী জিনিয়া চাকমার পরিচয় হয়। জিনিয়া তাকে হংকং-এ ভালো চাকরির লোভ দেখান। চাকরির লোভে বিদেশে যেতে বান্ধবী নিরাশা চাকমাকেও রাজি করায় ভ্যালেন্টিনা।
এরপর জিনিয়ার দেয়া নাম-ঠিকানা মত দুই বান্ধবী খাগড়াছড়ি থেকে চলে আসে ঢাকার উত্তরায় সুমি চাকমার কাছে। আর এখানে এসেই বুঝতে পারে নারী পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়েছে তারা। পরে কৌশলে ফোন করে পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানালে পানছড়ি থানায় জিডি করা হয়। তদন্তে নেমে উত্তরা থেকে নিরাশা ও ভ্যালেন্টিনা ছাড়াও রাঙ্গামাটির তিন কিশোরীকে উদ্ধার এবং সুমি ও তার স্বামী চীনা নাগরিক জিসাও সুহুইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
খাগড়াছড়ির খাগড়াপুর মহিলা কল্যান সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা জানান, বর্তমানে এটি সামাজিক ভাইরাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী পাচার বন্ধে পাচারকারীদের তিনি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করেন।
ত্রিপুরা শ্রমিক ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক উপামোহন ত্রিপুরা বলেন, ‘একটি দালাল চক্র অর্থ ও ভালো থাকার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ি মেয়েদের বিয়ের নামে পাচার করে দিচ্ছে। চক্রটি অফলাইন ও অনলাইনে এসব কারবার করছে। ওই চক্রে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।’
বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধবিহার আগ্রাবাদের সাধারণ সম্পাদক সুশোভন চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের নারীদের পণ্য বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর বন্দোবস্ত করছে দালাল চক্র। অভাবের তাড়নায় অনেক মা-বাবা ওই ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রশাসনকে কঠোরভাবে এটি বন্ধ করতে হবে।’
দিঘীনালার বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গগণ বিকাশ চাকমা জানান, দরিদ্রতার কারণে পাহাড়ি মেয়েরা পাচারকারীদের সহজ শিকার হচ্ছে। পাচার ঠেকাতে দরকার সরকারের বিশেষ উদ্যোগ আর পাহাড়িদের সচেতনতা।
খাগড়াছড়ির বিশিষ্টজনরা জানান, পাহাড়ে শিক্ষার বিস্তারের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের জীবনযাপনে আর্থিক সহায়তা ও স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমেই রোধ করা যাবে নারী পাচার।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, পাহাড় থেকে নারী পাচার বন্ধ করতে শুরু হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং।
নিউজ লাইট ৭১