জমি দখল করে আরও এক খামার সাদিক অ্যাগ্রোর
- আপডেট টাইম : ০২:১০:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
- / 23
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে খাল দখল করে বানানো আরও একটি খামারের সন্ধান মিলেছে। রামচন্দ্রপুর খালের কোল ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে সাদিক অ্যাগ্রোর এই খামারটি।
খালের প্লাবন ভূমির ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে উচ্চ আদালতের আদেশ আছে। হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন করতে টানা তিন দিন ধরে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর মধ্যে সাদিক অ্যাগ্রোর দুটি প্রতিষ্ঠানও উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। এর মধ্যে রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি খামার। উচ্ছেদ করা অন্য খামারটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
এই দুটি ছাড়াও একই এলাকায় সাদিক এগ্রোর আরও দুটি খামারের সন্ধান মিলেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলা হয়েছে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকার ১৫ ও ১৬ নং সড়কে। এর মধ্যে ১৬ নং সড়কের খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে রামচন্দ্রপুর খালের প্লাবন ভূমি দখল করে।
জানা গেছে, সরকারি সংস্থা বারবার সীমানা নির্ধারণ করলেও প্রতিষ্ঠান বা ভবন মালিক তাতে তোয়াক্কা না করে খামার বানিয়েছেন। নানা মহলে ‘শক্তিশালী যোগাযোগ’ থাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে এতদিন আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রামচন্দ্রপুর খালের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সাদিক অ্যাগ্রোর একটি খামার। ভেতরে অনেকগুলো বিশালদেহী গরু। খামার সংশ্লিষ্টরা জানান, এ খামারের মধ্যে থাকা গরুর একটি অংশ আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদিক অ্যাগ্রোর বিক্রীত ও বুকিং হওয়া গরু এই খামারে রাখা হয়। গত কোরবানির ঈদের পর থেকে এ খামারে নতুন করে কোনো গরু আসেনি এবং খামার থেকে কোনো গরু বের হয়নি।
নামপরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে নবীনগর হাউজিং এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই জায়গা সাদিক অ্যাগ্রোর না। জায়গাটা ভাড়া নেওয়া। জমির মালিক আব্দুর রহমান সাহেব। তার থেকে সাদিক অ্যাগ্রো ভাড়া নিয়েছে। তবে খামারের সামনের অংশটা খালের মধ্যে পড়ছে। এখানে সীমানা পিলার আছে। সীমানা মাপলেই দেখা যাবে খামারের অন্তত ২০ থেকে ২৫ ফুট জায়গা খালের প্লাবন ভূমিতে পড়েছে।’
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে অংশ প্লটই আছে খালের জায়গার মধ্যে। সাদিক অ্যাগ্রোর জেনারেটর তো বাইরেই রাখে। জেনারেটর যে জায়গায়, সেটা সরাসরি খালের জায়গা। আর খামারের সামনের জায়গা প্লাবন ভূমিতে। অনেকবার সরকারি লোকজন মাপামাপি করছে। কিন্তু সাদিক অ্যাগ্রোর অনেক ক্ষমতা। তাই কেউ কিছু বলে না।’
এ ব্যাপারে জানতে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। খাল দখল করে খামার বানানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খামার সংশ্লিষ্টদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
সম্প্রতি কোটি টাকার গরু এবং ১৫ লাখ টাকার খাসি নিয়ে আলোচনায় আসে সাদিক অ্যাগ্রো। দীর্ঘদিন ধরে গবাদিপশু নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে আসছে আলোচিত-সমালোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পশু আমদানি এবং বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে গবাদি পশু নিয়ে ব্যবসা করার আইন ও নীতিমালা রয়েছে। তা তোয়াক্কা না করেই সাদিক অ্যাগ্রো গরু ও ছাগল বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ ওঠে।
খাল উদ্ধারে টানা তিন দিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে ৬০টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে ১০ বিঘা জমি উদ্ধার করে ডিএনসিসি। এর মধ্যে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সাদিক অ্যাগ্রো বা অন্য কারও পক্ষে বিপক্ষে নয়, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে খাল খননের কাজ চলছে। যতদিন খালে পানির প্রবাহ ঠিক না হবে, ততদিন খাল খননের কাজ চলবে।
নিউজ লাইট ৭১