ঢাকা ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনগণের স্বস্তি ফিরানো দরকার

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০১:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
  • / 40

দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে এই অর্থবছরের বাজেটে এক নম্বর অগ্রাধিকার ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রয়েছে। তবে সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী, ঠিক ততটাই ব্যর্থ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। টাকার অবমূল্যায়ন ও সিন্ডিকেটের থাবায় পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। এখনো বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত ভোক্তার কষ্ট চাপা পড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেনজীর, আজিজ, মতিউরসহ বিভিন্ন ব্যক্তির দুর্নীতির মুখরোচক গল্প এখন গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত ও পঠিত। সরকারি পদে থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এসব ব্যক্তির রাজকীয় জীবনযাপন কিংবা বিপুল সম্পদের তথ্য গোগ্রাসে গিলছেন পাঠক।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও রেহাই পাচ্ছে! সাধারণ ভোক্তাদের আক্রোশ থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়েছে তদারকি সংস্থাগুলো! পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সোমবার বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছরের শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে। এই তো গেল খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বৃদ্ধির সরকারি হিসাব। সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড়  রেমাল ও দেশের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় কিছু খাদ্যপণ্য বিশেষ করে সবজির দাম বেড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ছাড়াও বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি, মাছের খামার তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী।

গত কয়েক দিনে বাজারের চিত্র দেখা যায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত এক বছরে অধিকাংশ সবজির দাম গড়ে ৬৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু সবজির দাম ১০০ থেকে ১৬২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রেকর্ড গড়ে বেড়েছে। বেগুনের মতো সবজির দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। দেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। বিশেষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আমদানির অনুমতি মিললেও ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেয়ায় সেই ভারতীয় পেঁয়াজও এখন দেশি পেঁয়াজের চেয়ে বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির তালিকায় ডিম, মাছ ও সবজির মতো খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়াতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। সরকারের নজরদারি শুধু খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশের বাজারে গত কয়েক বছরই দাম বৃদ্ধির হিড়িক উঠেছে। যেকোনো সংকটে পণ্যের দাম একবার বাড়লে, তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষ চাহিদার তুলনায় ভোগ্যপণ্য কেনা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের দেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। শুধু ভোক্তা অধিকারের বাজার তদারকির জন্য পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্যই যে দাম বাড়ছে তা নয়। বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সার্বিক অর্থনীতি জড়িত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের মুদ্রানীতি, সিস্টেম পলিসি, সুদনীতি, বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পলিসি জড়িত। সবকিছু বিবেচনা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্রুত এ কাজটি করে জনগণের স্বস্তি ফিরিয়ে আনা জরুরি।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

জনগণের স্বস্তি ফিরানো দরকার

আপডেট টাইম : ০১:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে এই অর্থবছরের বাজেটে এক নম্বর অগ্রাধিকার ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রয়েছে। তবে সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী, ঠিক ততটাই ব্যর্থ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। টাকার অবমূল্যায়ন ও সিন্ডিকেটের থাবায় পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। এখনো বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত ভোক্তার কষ্ট চাপা পড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেনজীর, আজিজ, মতিউরসহ বিভিন্ন ব্যক্তির দুর্নীতির মুখরোচক গল্প এখন গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত ও পঠিত। সরকারি পদে থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এসব ব্যক্তির রাজকীয় জীবনযাপন কিংবা বিপুল সম্পদের তথ্য গোগ্রাসে গিলছেন পাঠক।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও রেহাই পাচ্ছে! সাধারণ ভোক্তাদের আক্রোশ থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়েছে তদারকি সংস্থাগুলো! পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সোমবার বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছরের শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে। এই তো গেল খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বৃদ্ধির সরকারি হিসাব। সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড়  রেমাল ও দেশের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় কিছু খাদ্যপণ্য বিশেষ করে সবজির দাম বেড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ছাড়াও বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি, মাছের খামার তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী।

গত কয়েক দিনে বাজারের চিত্র দেখা যায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত এক বছরে অধিকাংশ সবজির দাম গড়ে ৬৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু সবজির দাম ১০০ থেকে ১৬২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রেকর্ড গড়ে বেড়েছে। বেগুনের মতো সবজির দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। দেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। বিশেষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আমদানির অনুমতি মিললেও ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেয়ায় সেই ভারতীয় পেঁয়াজও এখন দেশি পেঁয়াজের চেয়ে বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির তালিকায় ডিম, মাছ ও সবজির মতো খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়াতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। সরকারের নজরদারি শুধু খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশের বাজারে গত কয়েক বছরই দাম বৃদ্ধির হিড়িক উঠেছে। যেকোনো সংকটে পণ্যের দাম একবার বাড়লে, তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষ চাহিদার তুলনায় ভোগ্যপণ্য কেনা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের দেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। শুধু ভোক্তা অধিকারের বাজার তদারকির জন্য পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্যই যে দাম বাড়ছে তা নয়। বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সার্বিক অর্থনীতি জড়িত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের মুদ্রানীতি, সিস্টেম পলিসি, সুদনীতি, বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পলিসি জড়িত। সবকিছু বিবেচনা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্রুত এ কাজটি করে জনগণের স্বস্তি ফিরিয়ে আনা জরুরি।

নিউজ লাইট ৭১