ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশ ছেড়েছেন ইফাত, গা-ঢাকা দিয়েছেন মতিউর

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:২১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • / 21

মুশফিকুর রহমান ইফাত ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

মা শাম্মী আখতার ও ভাই ইরফানকে নিয়ে দেশত্যাগ করেছেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত। বুধবার (১৯ জুন) চট্টগ্রাম হয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন তারা। তবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরও।

শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডে ৪১/২ নম্বর ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের পাঁচতলায় গিয়ে জানা যায়, ইফাতের পরিবার সেখানে নেই। বাসার মূল ফটক বন্ধ, খুলে রাখা হয়েছে নেমপ্লেটও। এই ভবনের পাঁচ তলার পুরো ফ্লোর মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে কিনে দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে জানা যায়।

আর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭/এ নম্বর রোডের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কাঠা আয়তনের প্লটে তৈরি করা সাততলা ভবনের এক ফ্লোরে বাস করেন মতিউর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি। এই বাড়িতে মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের ৫টি গাড়ি রাখা। কিন্তু গতকাল এই বাসায় মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সম্প্রতি ইফাতকে সন্তান হিসেবে বাবার অস্বীকৃতি কারণে পারিবারিক টানাপড়েন চরমে ওঠে। সন্তান ইফাত রাগ-অভিমানে চেষ্টা চালান আত্মহননের। এক পর্যায়ে পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফান দেশত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।

ইফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান। তার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী। মতিউর রহমান রাজস্ব আয় বাড়ানোর গুরু দায়িত্বে থেকে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে গুছিয়েছেন নিজের আখের। কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের প্রায় সবই গড়েছেন স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে। সব মিলে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কিনেছেন দামি গাড়ি, বাড়ি। এ কর্মকর্তা হাতে পরেন ৩১ লাখ টাকার বেশি দামের রোলেক্স ঘড়ি।

চাকরি জীবনের শুরু থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। ঢাকা

গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে নিজ নামে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। এমনকি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও।

তবে চাকরি জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তা। কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় ছেলের কেনা ছাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয় প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে প্রথমপক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর সঙ্গে আলোচনা করে পারিবারিক ড্রামা সাজান মতিউর। মিডিয়ার সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে তার সম্পর্ক অস্বীকার করেন। এতে বাঁধে জট।

জানা গেছে, ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন মতিউর রহমান। এক পর্যায়ে ট্রেড ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হলে মতিউর অ্যাডমিন ক্যাডারে না গিয়ে কৌশলে যোগ দেন কাস্টমস ক্যাডারে। এর আগে ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) চাকরি করেন তিনি। বরিশালের মুলাদী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে মতিউর কাস্টমসে যোগ দিয়েই অর্থ-সম্পদের লোভে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০০ সালের দিকে সেগুনবাগিচায় কাস্টমস বন্ড অফিসে যোগ দেন মতিউর। সেখানে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বদলি করা হয় টেকনাফে। দীর্ঘদিন এখানে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালের শেষ দিকে তিনি বদলি হন চট্টগ্রাম বন্দর হাউজে। তিনি যেখানেই ছিলেন হয়ে উঠেছেন টাকার মেশিন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এনবিআর সদস্য মো. মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

দেশ ছেড়েছেন ইফাত, গা-ঢাকা দিয়েছেন মতিউর

আপডেট টাইম : ০৪:২১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

মা শাম্মী আখতার ও ভাই ইরফানকে নিয়ে দেশত্যাগ করেছেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত। বুধবার (১৯ জুন) চট্টগ্রাম হয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন তারা। তবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরও।

শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডে ৪১/২ নম্বর ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের পাঁচতলায় গিয়ে জানা যায়, ইফাতের পরিবার সেখানে নেই। বাসার মূল ফটক বন্ধ, খুলে রাখা হয়েছে নেমপ্লেটও। এই ভবনের পাঁচ তলার পুরো ফ্লোর মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে কিনে দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে জানা যায়।

আর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭/এ নম্বর রোডের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কাঠা আয়তনের প্লটে তৈরি করা সাততলা ভবনের এক ফ্লোরে বাস করেন মতিউর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি। এই বাড়িতে মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের ৫টি গাড়ি রাখা। কিন্তু গতকাল এই বাসায় মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সম্প্রতি ইফাতকে সন্তান হিসেবে বাবার অস্বীকৃতি কারণে পারিবারিক টানাপড়েন চরমে ওঠে। সন্তান ইফাত রাগ-অভিমানে চেষ্টা চালান আত্মহননের। এক পর্যায়ে পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফান দেশত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।

ইফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান। তার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী। মতিউর রহমান রাজস্ব আয় বাড়ানোর গুরু দায়িত্বে থেকে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে গুছিয়েছেন নিজের আখের। কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের প্রায় সবই গড়েছেন স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে। সব মিলে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কিনেছেন দামি গাড়ি, বাড়ি। এ কর্মকর্তা হাতে পরেন ৩১ লাখ টাকার বেশি দামের রোলেক্স ঘড়ি।

চাকরি জীবনের শুরু থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। ঢাকা

গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে নিজ নামে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। এমনকি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও।

তবে চাকরি জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তা। কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় ছেলের কেনা ছাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয় প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে প্রথমপক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর সঙ্গে আলোচনা করে পারিবারিক ড্রামা সাজান মতিউর। মিডিয়ার সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে তার সম্পর্ক অস্বীকার করেন। এতে বাঁধে জট।

জানা গেছে, ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন মতিউর রহমান। এক পর্যায়ে ট্রেড ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হলে মতিউর অ্যাডমিন ক্যাডারে না গিয়ে কৌশলে যোগ দেন কাস্টমস ক্যাডারে। এর আগে ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) চাকরি করেন তিনি। বরিশালের মুলাদী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে মতিউর কাস্টমসে যোগ দিয়েই অর্থ-সম্পদের লোভে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০০ সালের দিকে সেগুনবাগিচায় কাস্টমস বন্ড অফিসে যোগ দেন মতিউর। সেখানে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বদলি করা হয় টেকনাফে। দীর্ঘদিন এখানে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালের শেষ দিকে তিনি বদলি হন চট্টগ্রাম বন্দর হাউজে। তিনি যেখানেই ছিলেন হয়ে উঠেছেন টাকার মেশিন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এনবিআর সদস্য মো. মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।

নিউজ লাইট ৭১