ঢাকা ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪
  • / 42

শঙ্কায় দিন কাটছে সিলেটের মানুষের। জেলার সব উপজেলা এখন পানির নিচে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ ২০২২ সালের বন্যার কথা স্মরণ করে আতঙ্কিত প্রহর পার করছে। ওই বছরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে দুর্গম এলাকায় আটকে পড়েছিল অজস মানুষ। ঘরের চালের ওপরে বসে ত্রাণের আশায় কোথাওবা অনাহারে অর্ধাহারে প্রহর গুনেছে মানুষ। এবারেও বন্যার পানি না কমলে গত বন্যার মতো কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হবে কি না সেটা এখন ভবিতব্যই বলতে পারে। সিলেটের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। বন্যা পরিস্থিতির এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি। বরং নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে; তবে পানির লেভেল আগের থেকে বাড়েনি। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার নতুন করে আরো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

সিলেট নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষজন উঠেছেন। এসব এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। পানি বেড়েই চলছে, বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে পানি থাকার কারণে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, যতরপুর, সোবাহনীঘাট, মেন্দিবাগ ও উপশহর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর রাস্তাঘাট-বাসাবাড়ির কোথাও-কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানিও রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। পানিবন্দি এলাকার মানুষজন কেউ যাচ্ছেন ভ্যান করে, কেউবা রিকশায়। বিশেষ করে উপশহরের বাসিন্দাদের নৌকা ও ভ্যানে করে চলাচল করতে হচ্ছে। ঈদের দিন ভোর থেকে নগরীর পাড়া-মহল্লায় পানি উঠতে শুরু করে। কোনো পয়েন্টের পানি কমছে না। নগরীর উপশহর পয়েন্টে ভ্যানচালক সুমন মিয়া বলেন, মঙ্গলবার থেকে তিনি উপশহর এলাকায় ভ্যান চালিয়ে মানুষকে আসা-নেয়া করছেন। কোথাওবা তিনতলা বাসার নিচতলায় হাঁটুর উপরে পানি রয়েছে। তাই নিচতলার বাসিন্দরা চলে গেছেন। ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে কয়েক দিন ধরে। পানির কারণে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগ এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, জিনিসপত্রসহ বাসার লোকজন খাটের ওপর বসে রাত-দিন কাটাচ্ছে। পানি না কমলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া কোনো গতি থাকবে না। এর পরে কী হবে তা জানে না কেউ। ইতিমধ্যে এই ভোগান্তিতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পানি কমার কোনো লক্ষণও নেই। অনেককেই বাসার ওপর তলায় বসে রান্না করতে হচ্ছে। এ সময় বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ না করলে পানিবাহিত রোগ একবার শুরু হলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না। এ দুর্যোগ কাটাতে পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারি ত্রাণকার্য যা চলছে তা পর্যাপ্ত বলে আমাদের মনে হয় না। এ সময় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবানরা এগিয়ে না এলে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না। বন্যার্ত মানুষের দুঃসময়ে সবাই পাশে দাঁড়াবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

আপডেট টাইম : ১১:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪

শঙ্কায় দিন কাটছে সিলেটের মানুষের। জেলার সব উপজেলা এখন পানির নিচে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ ২০২২ সালের বন্যার কথা স্মরণ করে আতঙ্কিত প্রহর পার করছে। ওই বছরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে দুর্গম এলাকায় আটকে পড়েছিল অজস মানুষ। ঘরের চালের ওপরে বসে ত্রাণের আশায় কোথাওবা অনাহারে অর্ধাহারে প্রহর গুনেছে মানুষ। এবারেও বন্যার পানি না কমলে গত বন্যার মতো কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হবে কি না সেটা এখন ভবিতব্যই বলতে পারে। সিলেটের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। বন্যা পরিস্থিতির এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি। বরং নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে; তবে পানির লেভেল আগের থেকে বাড়েনি। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার নতুন করে আরো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

সিলেট নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষজন উঠেছেন। এসব এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। পানি বেড়েই চলছে, বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে পানি থাকার কারণে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, যতরপুর, সোবাহনীঘাট, মেন্দিবাগ ও উপশহর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর রাস্তাঘাট-বাসাবাড়ির কোথাও-কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানিও রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। পানিবন্দি এলাকার মানুষজন কেউ যাচ্ছেন ভ্যান করে, কেউবা রিকশায়। বিশেষ করে উপশহরের বাসিন্দাদের নৌকা ও ভ্যানে করে চলাচল করতে হচ্ছে। ঈদের দিন ভোর থেকে নগরীর পাড়া-মহল্লায় পানি উঠতে শুরু করে। কোনো পয়েন্টের পানি কমছে না। নগরীর উপশহর পয়েন্টে ভ্যানচালক সুমন মিয়া বলেন, মঙ্গলবার থেকে তিনি উপশহর এলাকায় ভ্যান চালিয়ে মানুষকে আসা-নেয়া করছেন। কোথাওবা তিনতলা বাসার নিচতলায় হাঁটুর উপরে পানি রয়েছে। তাই নিচতলার বাসিন্দরা চলে গেছেন। ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে কয়েক দিন ধরে। পানির কারণে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগ এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, জিনিসপত্রসহ বাসার লোকজন খাটের ওপর বসে রাত-দিন কাটাচ্ছে। পানি না কমলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া কোনো গতি থাকবে না। এর পরে কী হবে তা জানে না কেউ। ইতিমধ্যে এই ভোগান্তিতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পানি কমার কোনো লক্ষণও নেই। অনেককেই বাসার ওপর তলায় বসে রান্না করতে হচ্ছে। এ সময় বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ না করলে পানিবাহিত রোগ একবার শুরু হলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না। এ দুর্যোগ কাটাতে পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারি ত্রাণকার্য যা চলছে তা পর্যাপ্ত বলে আমাদের মনে হয় না। এ সময় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবানরা এগিয়ে না এলে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না। বন্যার্ত মানুষের দুঃসময়ে সবাই পাশে দাঁড়াবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

নিউজ লাইট ৭১