ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেট মানেই কষ্টের জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৫:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • / 47

বাজেট আসে বাজেট যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয় এমন কথা বলা যাবে না। সেদিক থেকে বলা যায় আমাদের সংবিধানে প্রদত্ত জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। বাজেটে বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধাগুলো সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে ভোগ করতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সরকারকে কয়েকটি ক্ষেত্রে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হয়, সেটা সরকার নিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়।

বাজেটকে সামনেস রেখে বলতে হয়, আমাদের দেশের মানুষের কাজে বাজেট মানেই মূল্যবৃদ্ধি। বাজেট মানেই কষ্টের জীবন আরও কষ্টে নিমজ্জিত হওয়া। এ সময়ে বাজের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেমন জরুরি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি রোধ করাও জরুরি। তা না হলে বাজেটের প্রভাবে যে মূল্য বৃদ্ধি হবে তা বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়াবে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এবারের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসাবে এটি তার প্রথম বাজেট।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এবারের বাজেটে এমন সব বিষয়ের উপরে কর বসানো হয়েছে তাতে বেশি সংকটে পড়বে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এবারের বাজেটে দেশে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, এলইডি বাল্ব, টিউব লাইট, এসব পণ্যের ওপর বসছে বাড়তি ভ্যাটের বোঝা। এলইডি বাল্ব ও টিউব লাইটের বর্তমান ভ্যাট হার ৫ শতাংশ। এবারের বাজেটে রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারে শূন্য শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ এবং এলইডি বাল্ব ও টিউব লাইটে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশের বাজারের পাশাপাশি আমদানি করা এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরেও বাড়ানো হয়েছে আমদানি শুল্ক।

এছাড়া আমসত্ত্ব, বিভিন্ন রকম জুসের (আম, আনারস, পেয়ারা, তেঁতুল) ভ্যাটহার একইভাবে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে আরো ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে। মোবাইলের সিম কার্ডের ওপর ভ্যাট ২০০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৩০০ টাকা।

বাজেটে জনস্বাস্থ্য ও রাজস্ব আয় মাথায় রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং দেশি শিল্প বিকাশের জন্য কিছু পণ্যের ওপর রেয়াতি সুবিধা আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী বাজেটে। পরিবর্তন আসছে ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে। এতে ব্যাংকে জমা টাকা রাখার খরচ বাড়ছে। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ছোট আমানতকারীদের ওপর পড়বে না। ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ কর। সহজভাবে বলা যায়, কোনো ক্রেতা যখন পণ্য বা সেবা কেনেন, তার মূল্যের অতিরিক্ত যে কর তিনি দিয়ে থাকেন, সেটিই ভ্যাট। কোনো পণ্য বা সেবার সর্বশেষ ভোক্তা বা ক্রেতাই সেই পণ্য বা সেবার মূসকদাতা। আর এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার দায়িত্ব বিক্রেতার। পরোক্ষ করের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের ওপর পড়ে। সেদিক বিবেচনায় মধ্যবিত্তের ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। এক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর বিকল্প নেই।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

বাজেট মানেই কষ্টের জীবন

আপডেট টাইম : ১১:৩৫:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

বাজেট আসে বাজেট যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয় এমন কথা বলা যাবে না। সেদিক থেকে বলা যায় আমাদের সংবিধানে প্রদত্ত জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। বাজেটে বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধাগুলো সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে ভোগ করতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সরকারকে কয়েকটি ক্ষেত্রে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হয়, সেটা সরকার নিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়।

বাজেটকে সামনেস রেখে বলতে হয়, আমাদের দেশের মানুষের কাজে বাজেট মানেই মূল্যবৃদ্ধি। বাজেট মানেই কষ্টের জীবন আরও কষ্টে নিমজ্জিত হওয়া। এ সময়ে বাজের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেমন জরুরি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি রোধ করাও জরুরি। তা না হলে বাজেটের প্রভাবে যে মূল্য বৃদ্ধি হবে তা বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়াবে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এবারের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসাবে এটি তার প্রথম বাজেট।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এবারের বাজেটে এমন সব বিষয়ের উপরে কর বসানো হয়েছে তাতে বেশি সংকটে পড়বে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এবারের বাজেটে দেশে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, এলইডি বাল্ব, টিউব লাইট, এসব পণ্যের ওপর বসছে বাড়তি ভ্যাটের বোঝা। এলইডি বাল্ব ও টিউব লাইটের বর্তমান ভ্যাট হার ৫ শতাংশ। এবারের বাজেটে রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারে শূন্য শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ এবং এলইডি বাল্ব ও টিউব লাইটে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশের বাজারের পাশাপাশি আমদানি করা এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরেও বাড়ানো হয়েছে আমদানি শুল্ক।

এছাড়া আমসত্ত্ব, বিভিন্ন রকম জুসের (আম, আনারস, পেয়ারা, তেঁতুল) ভ্যাটহার একইভাবে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে আরো ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে। মোবাইলের সিম কার্ডের ওপর ভ্যাট ২০০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৩০০ টাকা।

বাজেটে জনস্বাস্থ্য ও রাজস্ব আয় মাথায় রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং দেশি শিল্প বিকাশের জন্য কিছু পণ্যের ওপর রেয়াতি সুবিধা আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী বাজেটে। পরিবর্তন আসছে ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে। এতে ব্যাংকে জমা টাকা রাখার খরচ বাড়ছে। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ছোট আমানতকারীদের ওপর পড়বে না। ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ কর। সহজভাবে বলা যায়, কোনো ক্রেতা যখন পণ্য বা সেবা কেনেন, তার মূল্যের অতিরিক্ত যে কর তিনি দিয়ে থাকেন, সেটিই ভ্যাট। কোনো পণ্য বা সেবার সর্বশেষ ভোক্তা বা ক্রেতাই সেই পণ্য বা সেবার মূসকদাতা। আর এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার দায়িত্ব বিক্রেতার। পরোক্ষ করের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের ওপর পড়ে। সেদিক বিবেচনায় মধ্যবিত্তের ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। এক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর বিকল্প নেই।

নিউজ লাইট ৭১