সরকার প্রণোদনা না দিলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না
- আপডেট টাইম : ১০:২২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
- / 36
চলে গেছে রেমাল। উপকূলজুড়ে ভেসে উঠতে শুরু করেছে রেখে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। দুদিন পর গতকাল সূর্যের দেখা পাওয়া পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ রয়েছেন যারপরনাই দুর্ভোগে। তিন দিন চুলা জ্বলেনি এসব পরিবারে। উঠতি ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। আর এর মধ্যেই যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে, সেসব এলাকায় চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম।
আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, সিলেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানত স্থল নিম্নচাপটি পূর্বদিকে অগ্রসর ও ক্রমে দুর্বল হয়ে বর্তমানে সিলেট ও তৎসংলগ্ন আসাম এলাকায় লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ছয় জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গত মঙ্গলবার এক পূর্বাভাসে সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল-তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে সেটা শত কোটি টাকার বেশি হতে পারে। টানা ১৬ ঘণ্টা তাণ্ডবের পর গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পানি না বাড়লেও ক্ষতচিহ্ন উপকূলীয় জেলাজুড়েই।
বাগেরহাট জেলায় বিধ্বস্ত হয় ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে গেছে হাজার-হাজার গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পুরো জেলা। পানিবন্দি হয়েছে ৫০ হাজারের অধিক পরিবার। এক হাজার ৫৮১ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বরগুনায় রেমালের প্রভাবে জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা অন্তত ২ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ বলে জানায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটি আরও জানায়, তলিয়ে গেছে জেলার ৩০০ গ্রাম। ১৬ হাজার ৪০৮টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছে। সাতক্ষীরায় জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ উপচে এবং প্রবল বর্ষণে মৎস্যঘের প্লাবিত হয়; তলিয়ে যায় জেলে পল্লি। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার ৪৬৮ বাড়িঘর। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৬ মানুষ।
এ ছাড়া ফসলের মাঠ, ঘের-পুকুর লোনা পানিতে ভেসে গেছে। রেমালের ঝোড়ো তাণ্ডবে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, কক্সবাজার- সবখানে কৃষকের যেমন সর্বনাশ হয়েছে তেমনি শত শত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে মাছ চাষিদের। শত কিলোমিটার শক্তিতে ধেয়ে আসা এ ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস আর ৫-৭ ফুট উঁচু ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে ধসে গেছে অনেক প্রান্তিক মানুষের বসতঘর। এখন এসব অঞ্চলের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা একদিকে যেমন ফসল, মাছ হারিয়েছে তেমনি হাজার হাজার বাড়িঘর ফলদ বৃক্ষ হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। রেমালের এই আঘাতে আক্রান্তদের ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না। এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
বিশেষত যারা মাছ, শস্য, বৃক্ষ, বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে তাদের সরকার প্রণোদনা না দিলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে-এ প্রত্যাশা আমাদের।
নিউজ লাইট ৭১